নগরজুড়ে মোতায়ন থাকবে সাড়ে সাত হাজার পুলিশ
মো.মুক্তার হোসেন বাবু :: চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনে জনসভা সফল করতে আগ থেকে কাজ শুরু করেছে জেলা ও নগর আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। নগর জুড়ে চলছে সাজসজ্জার কাজও। আগামী ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড মাঠে অনুষ্ঠিত হবে আওয়ামী লীগের এই জনসভা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে। এর আগে ২০১২ সালের ২৮ মার্চ পলোগ্রাউন্ড মাঠে সর্বশেষ জনসভায় ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা ঘিরে সাড়ে সাত হাজার পুলিশ মোতায়ন থাকবে বলে জানালেন সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়। গতকাল মঙ্গলবার সকালে পলোগ্রাউন্ড মাঠ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
সিএমপি কমিশনার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জনসভা আগামী ৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে আমরা যথেষ্ট সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। শুধু পলোগ্রাউন্ড মাঠ নয়, নিরাপত্তার খাতিরে পুরো নগর জুড়ে সাড়ে ৭ হাজার পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকবে। এরমধ্যে পলোগ্রাউন্ড মাঠসহ পুরো চট্টগ্রাম মহানগরে আমাদের ৬ হাজার সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। নিরাপত্তার বিষয়টি আরো জোরদার করতে বাইরে আরো দেড় হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে।
পুলিশ কমিশনার বলেন, এটা চট্টগ্রামের জন্য বড় উৎসব। নিরাপত্তার জন্য আমাদের আয়োজন ভাল। স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) পুরো আয়োজনটাই তদারকি করছে। তাদের পরামর্শ মোতাবেক পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে পুলিশ থাকবে। পাশাপাশি সিসি ক্যামেরা, ড্রোন থাকবে। মোটকথা, পুরো শহর জুড়ে নিরাপত্তা থাকবে। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা থাকবে। ওইদিন যারা মিছিলে আসবেন, গাড়ি কোথায় রাখবেন সেটা আমরা পরে বলে দেব। তিনি আরো বলেন, ওইদিন স্কুলের পরীক্ষা আছে। সেদিকে আমাদের নজর আছে। আমরা অভিভাবকদের বলব আপনারা হাতে সময় নিয়ে বের হবেন। তবে কোন সমস্যার সম্মুখীন হলে আমাদের খবর দিলে আমরা গাড়ি করে কেন্দ্রে পৌঁছে দেব। এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কমিশনার বলেন, আমরা সবদিকে নজর রেখেছি। খোঁজ খবর রাখছি। তাই আমরা বলতে পারি নাশকতা হতে পারে এমন কোন খবর বা শংকা নেই। এসময় সাথে ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনসহ সিএমপির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ। অন্যদিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, এ জনসভা থেকে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে বিজয়ের জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেবেন। দলীয় নেতাকর্মীদের মাধ্যমে হয়তো তিনি জনগণের কাছে আগামীর চট্টগ্রাম ও বাংলাদেশ সম্পর্কে বার্তা পাঠাতে পারেন। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে বেশি সময় দিতে ও করোনা মহামারিসহ নানা কারণে তিনি দীর্ঘদিন খোলা মাঠে দলীয় জনসভায় যোগ দেননি। চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড মাঠে তিনি দীর্ঘ ১০বছর পর সমাবেশে ভাষণ দেবেন।তিনি আরও বলেন, আমরা প্রিয় নেত্রীর আগমনে খুবই খুশি। আমরা সেদিন স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জনসমাগম ঘটিয়ে আমাদের নেত্রীকে দেশবাসীকে দেখিয়ে দিতে চাই চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ, আওয়ামী লীগ মানুষের পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে। আর চট্টগ্রামের মানুষ আওয়ামী লীগের সঙ্গে রয়েছে ও থাকবে। চট্টগ্রাম থেকেই আগামী নির্বাচনে নৌকার বিজয় মিছিলের আগাম পদধ্বনি আমরা স্বাধীনতাবিরোধী বিএনপি-জামায়াত জোটকে শোনাতে পারবো বলে বিশ্বাস করি। নগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এবারের জনসভায় তারা জনসমাগমের রেকর্ড গড়তে চান। জনসভায় অন্তত ১০ লাখ মানুষের সমাগম হবে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য আশপাশের মানুষ যাতে শুনতে পারে এ জন্য লাগানো হবে ৩০০ মাইক। পলোগ্রাউন্ডে সাত ফুট উঁচু মঞ্চ তৈরি করা হবে। এর দৈর্ঘ্য হবে ১২০ ফুট ও প্রস্থ হবে ১৪০ ফুট। মঞ্চে এক সঙ্গে ২০০ অতিথি বসতে পারবেন। এর আগে, গত ১২ অক্টোবর পলোগ্রাউন্ড মাঠে সমাবেশ করেছিল বিএনপি। এ সমাবেশে বিপুল সংখ্যক জনসমাগম হয়। তবে বিএনপির জনসভার চেয়ে বেশি লোক সমাগম ঘটাতে চায় আওয়ামী লীগ। এজন্য মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ কাজ শুরু করেছেন। নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রস্তুতি সভা। পাশাপাশি উপজেলাগুলো থেকেও বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী এ জনসভায় উপস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রস্তুতি সভা করা হচ্ছে। এদিকে রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও রাউজানের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন পর পলোগ্রাউন্ড মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভা হচ্ছে। সমাবেশে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখবেন। এ সমাবেশকে ঘিরে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও উজ্জ্বীবিত। আওয়ামী লীগকে ভাড়া করে লোক আনতে হবে না। মানুষ নিজ থেকেই আসবে। এদিকে আয়োজন বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ৪ ডিসেম্বর পলোগ্রাউন্ড মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভাকে ঘিরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নগরীকে পরিপাটি করে সাজানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় প্রবেশের পথ সুগম ও মসৃণ করে তোলা হয়েছে। জনসভায় আগত জনসাধারণের কোনও সমস্যা যাতে না হয় সে জন্য সুপেয় পানি, ভ্রাম্যমাণ ও অস্থায়ী টয়লেট স্থাপন করা হবে।