ভুয়া জন্মদিন পালন ও যুদ্ধাপরাধীদের মদদ দেওয়ার অভিযোগ করা আলাদা দুই মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে করা জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (৫ জুলাই) দুই আলাদা আদালতে শুনানি শেষে এই রায় দেন মহানগর হাকিম আহসান হাবিব ও মহানগর হাকিম খুরশিদ আলম।
এর মধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের মদদ দেওয়ার মামলার শুনানি হয় মহানগর হাকিম আহসান হাবিবের আদালতে এবং ভুয়া জন্মদিন পালনের মামলার শুনানি করেন মহানগর হাকিম খুরশিদ আলম।
এছাড়া মামলার পরবর্ত ী কার্যক্রমের জন্য আগামী ২ আগস্ট দিন ধার্য করা হয়।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার। শুনানিতে তিনি বলেন, এটি জামিনযোগ্য ধারা। জামিন পাওয়া তার অধিকার।
তবে শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করেন আদালত।
ভুয়া জন্মদিন পালনের অভিযোগে ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী জহিরুল ইসলাম বাদী হয়ে ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
বাদী মামলার এজাহারে বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার একাধিক জন্মদিন নিয়ে ১৯৯৭ সালে ১৯ ও ২২ আগস্টে দুই জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর মেট্রিকুলেশন পরীক্ষার নম্বরপত্র অনুযায়ী জন্ম তারিখ ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৪৬ সাল। ১৯৯১ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে একটি দৈনিকে তার জীবনী নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জন্মদিন ১৯৪৫ সালে ১৯ আগস্ট বলে উল্লেখ করা হয়। অন্যদিকে তার বিয়ের কাবিননামায় জন্মদিন হিসেবে লেখা আছে ৪ আগস্ট, ১৯৪৪ সাল। সর্বশেষ ২০০১ সালে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট অনুযায়ী তার জন্মদিন ৫ আগস্ট ১৯৪৬ সাল।
মামলায় আরও বলা হয়, বিভিন্ন মাধ্যমে তার ৫টি জন্মদিন পাওয়া গেলেও কোথাও ১৫ আগস্ট জন্মদিন পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় তিনি ৫টি জন্মদিনের একটিও পালন না করে ১৯৯৬ সাল থেকে ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী জাতীয় শোক দিবসে আনন্দ উৎসব করে জন্মদিন পালন করে আসছেন। শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য তিনি ওইদিন জন্মদিন পালন করেন।
এছাড়া ২০১৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এ বি এম মশিউর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের মদদ দেওয়া সংক্রান্ত মামলাটির প্রতিবেদন দাখিল করেন।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করলে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেন। ওই মন্ত্রিপরিষদে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা প্রকাশ্য ও আত্মস্বীকৃত পাকিস্তানের দোসর হিসেবে নিজেদের পরিচয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন- সেই জামায়াত, ছাত্রশিবির, আলবদর ও আলশামস সদস্যদের মন্ত্রী ও এমপি বানান। পরবর্তীতে ওই ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে মৃত্যুদণ্ডসহ বিভিন্ন দণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে খালেদা জিয়া সরকারের মন্ত্রিত্বপ্রাপ্ত মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মুত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। কিন্তু তারা ক্ষমতায় থাকাকালে মন্ত্রিত্বের সুবিধা নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা তাদের বাড়ি-গাড়িতে ব্যবহার করেছেন।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া স্বাধীনতাবিরোধী ব্যক্তিদের তার মন্ত্রিসভায় মন্ত্রিত্ব দিয়ে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত পতাকাকে ওই স্বাধীনতাবিরোধীদের গাড়িতে তুলে দিয়ে সত্যিকারের দেশপ্রেমিক জনগণের মর্যাদা ভুলুণ্ঠিত করেছেন। অন্যদিকে প্রচলিত আইনে মৃত ব্যক্তির বিচারের সুযোগ না থাকায় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে অব্যাহতির প্রদানের সুপারিশ করা হলো’।
২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর এ বি সিদ্দিকী ‘স্বীকৃত স্বাধীনতাবিরোধীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে দেশের মানচিত্র ও জাতীয় পতাকার মানহানি ঘটানোর’ অভিযোগে ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে মানহানির মামলাটি দায়ের করেছিলেন।