অন্তর্বর্তী সরকারকে নিরপেক্ষ থেকে শক্ত হাতে সরকার পরিচালনার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার ইন্সটিটিউটে পিলখানায় শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি ।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের প্রতি এই আহ্বান জানাতে চাই, আপনি শক্ত হাতে আপনার সরকারকে পরিচালনা করুন। এই কথা কেউ যেন না বলে, আপনি পক্ষপাতিত্ব করছেন। এই কথা শুনতে চাই না আমি। কারণ আপনি অত্যন্ত প্রতিষ্ঠিত, বিখ্যাত মানুষ। সারাবিশ্বে আপনার নাম আছে। আপনি সেটা রাখবে সেটাই আমরা বিশ্বাস করি। আমরা আশা করবো, সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতা বজায় রেখে যত দ্রুত সম্ভব, সংস্কার যেটা ন্যুনতম প্রয়োজন সেটা সম্পন্ন করে নির্বাচনের এগিয়ে যান। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে স্থিতিশীলতা, শান্তি এবং ভবিষ্যতের জন্য সমৃদ্ধি আনবেন এটা আপনার কাছে আমরা প্রত্যাশা করি।
অনেকে বিএনপির সমালোচনা করে বলার চেষ্টা করছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা নাকি শুধু নির্বাচন নির্বাচন করছি। আমরা সংস্কার করতে চাই না। এত বড় মিথ্যা কথা, মিথ্যা প্রচারণা তারা চালাচ্ছে বিভিন্নভাবে। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়াতে। কয়েকজন মানুষ, গুটিকতক মানুষ টার্গেট করেছে বিএনপিকে। মিথ্যা অপপ্রচারণা করে বিএনপিকে হেয় প্রতিপন্ন করতে চায়। বিএনপিই হচ্ছে সেই দল যারা এই দেশের স্বাধীনতাকে রক্ষা করেছে অতীতে, এখনো করবে ইনশাআল্লাহ।
মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশে যে পরিবর্তন হয়েছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে হয়েছে, বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তুলবার যে নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলবার, আজকে আবার তা ধ্বংস করে দেবার চক্রান্ত চলছে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা দিল্লীতে আশ্রয় নিয়েছেন, সেখান থেকে তিনি চক্রান্ত করছেন, কি করে এই বিজয়ের সকল ফলাফলকে নস্যাৎ করে দেয়া যায়। কিভাবে আবার নৈরাজ্য, অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করা যায়। তারই প্রেক্ষাপটে আজকে দেখছি, বিভিন্ন পক্ষ থেকে একটি অস্থির অবস্থা সৃষ্টি করা হচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকার অন্তর্বর্তী সরকার। ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আসা একটি সরকার। প্রায় ২ হাজার ছাত্র-জনতার রক্তের উপর দিয়ে এই সরকার গঠন হয়েছে। আমাদের প্রত্যেকের যে আশা, প্রত্যাশা সেটা পূরণ করবে। আমরা বার বার করে এই কথা বলছি, বলে আসছি, দেশে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত না করলে কোনমতেই আমরা স্থিতিশীল অবস্থা পাবো। সেই জন্যই প্রথম থেকেই বলে আসছি, প্রকৃত পক্ষে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটার জন্য আন্দোলন করছি দীর্ঘ দিন ধরে।
আজকে বিভিন্ন প্রশ্ন তুলে একটি নৈরাজ্যের দিকে দেশকে নিয়ে যাবার চেষ্টা করা হচ্ছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, কিছু সংখ্যক মানুষ অন্যায়ভাবে দেশকে, দেশের মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে তুলার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন সবাই রাস্তায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। একইভাবে দেশে একটা নৈরাজ্য সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন। যা কোনভাবেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য শুভ নয়, গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়, দেশের স্থিতিশীলতার জন্য শুভ নয়।
জাতীয়তাবাদী আদর্শের সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা সবাই ধৈর্য ধরবেন, ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। দেশের সব মানুষ কে আহ্বান জানাই, কাদা ছুড়াছুড়ি বন্ধ করে, তর্কবিতর্ক বন্ধ করে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকুন। জাতির ঐক্যবদ্ধ থাকার মধ্য দিয়ে আমরা একটি কাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌঁছতে পারি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের শক্তি। সবসময় দেখেছি, জাতির দুঃসময়ে তারা এগিয়ে আসে। ১৯৭১ সালে যখন সারা কিংকর্তব্যবিমূঢ়, পাকিস্তান সেনাবাহিনী আক্রমণ করেছে, গণহত্যা করেছে সে সময় সেনাবাহিনীর এক অখ্যাত মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা করে পুরো জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছে। আবার ৭ নভেম্বর এই জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করেছে। এইবার ২৪ ও সেনাবাহিনী একটি দেশপ্রেমিক বাহিনীর ভূমিকা পালন করেছে।
এসময় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম, যুবদল সভাপতি মোনায়েম মুন্না প্রমুখ।