এনআইডির তথ্য ফাঁস করে ২০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ জিয়াউলকে গ্রেপ্তার করেছে, সিআইডি

নিজস্ব প্রতিবেদক

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তার বিরুদ্ধে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্য ফাঁস ও বিক্রি করে ২০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের করা মামলা রয়েছে।

- Advertisement -

মঙ্গলবার (৪ মার্চ) রাতে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় এক আত্মীয় বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে বুধবার (৫ মার্চ) সিআইডির একটি দল পাঁচলাইশ থানা থেকে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসে। তবে রাত ১০টা পর্যন্ত তিনি ঢাকায় সিআইডি কার্যালয়ে পৌঁছাননি। আজ বৃহস্পতিবার সকালে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করার পরিকল্পনা রয়েছে সিআইডির।

গ্রেপ্তারের বিষয়টি সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের অতিরিক্ত ডিআইজি আশরাফুজ্জামান দৌলা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এনআইডির তথ্য ব্যবহার করে ডিজিকন গ্লোবাল সার্ভিসেস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসার অনুমতি দেওয়ার অভিযোগে ঢাকার কাফরুল থানায় একটি মামলা করা হয়। এ মামলায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব গ্রেপ্তার করা হয়।

বাংলাদেশে একটি বড় ধরনের তথ্য চুরির ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে অভিযোগ করা হয়েছে যে, জিয়াউল ইসলাম নামে একজন ব্যক্তি এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) তথ্য ব্যবহার করে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তাকে এই বিশাল আর্থিক দুর্নীতির জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে, যা পুরো দেশের নিরাপত্তা ও তথ্য সুরক্ষা নিয়ে নতুন উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

জিয়াউল ইসলাম, যিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সংস্থার কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত, অভিযোগ করা হচ্ছে যে তিনি দেশের ১০ কোটি মানুষের এনআইডি তথ্য চুরি করেছেন। এই তথ্যগুলো তিনি অনলাইনে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেছেন এবং এতে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এতে দেশের নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য যেমন নাম, জন্মতারিখ, ঠিকানা, ছবি, ফোন নম্বর এবং আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ হয়ে গেছে।

এনআইডি তথ্য ফাঁসের ফলে বিপুল পরিমাণ টাকার লেনদেনের ঘটনা সামনে এসেছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, তিনি এই তথ্য ব্যবহার করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছেন এবং সরকারি প্রকল্পগুলির নামে টাকা উত্তোলন করেছেন। একে একে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন, যা বাংলাদেশের জন্য একটি শকিং ঘটনা।

কীভাবে ফাঁস হল এনআইডি তথ্য?

প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, জিয়াউল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে এনআইডি তথ্যের ডাটাবেজে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছিলেন। তিনি তার সরকারি সংস্থার কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় এই কাজটি করেছেন এবং বিভিন্ন ডিজিটাল চ্যানেলের মাধ্যমে এসব তথ্য বিক্রি করেছেন। এই তথ্যগুলো প্রক্রিয়া করে তারা ভার্চুয়াল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে এবং সেখান থেকে বিশাল অঙ্কের টাকা ট্রান্সফার করেছেন।

পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ জানিয়েছে, তারা জিয়াউল ইসলামের বিরুদ্ধে একটি তদন্ত শুরু করেছে। তারা মনে করছেন, এই ঘটনার পিছনে আরও অনেকেই যুক্ত থাকতে পারে, যাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জিয়াউলের সাথে আরও কয়েকজন নামহীন ব্যক্তিরও যোগাযোগ পাওয়া গেছে, যারা দেশের এনআইডি তথ্য চুরির এই চক্রের সাথে জড়িত ছিলেন।

এনআইডি তথ্য ফাঁস হওয়ার পর দেশের জনগণ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। অনেকেই তাদের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশেষত, ব্যাংক লেনদেন, বিভিন্ন সরকারি সুবিধা ও আর্থিক সেবা পেতে এসব তথ্য ব্যবহৃত হওয়া সরকারের জন্য বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।

সরকার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে এবং ইতোমধ্যে এনআইডি তথ্য সুরক্ষার জন্য নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে ঠেকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।

এছাড়া, গণমাধ্যমেও বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচারিত হওয়ার পর জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তারা অনলাইনে নিজেদের তথ্য সুরক্ষিত রাখার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে শুরু করেছে।

এটি বাংলাদেশের তথ্য সুরক্ষা ব্যবস্থার জন্য একটি বড় ধাক্কা। যত দ্রুত সম্ভব এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঠিক বিচার নিশ্চিত করা এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধ করতে শক্তিশালী ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

সর্বশেষ