ক’দিন পরই পবিত্র ঈদ। জমজমাট চট্টগ্রামের ঈদবাজার। সকাল থেকে গভীর রাত নগরের ছোট-বড় মার্কেট, বিপণী বিতান, ফুটপাতে ভিড়। তবে সেই জম্পেশচিত্র অনেকটা ফ্যাকাশে আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার ফুটপাতের জুতার দোকানে।
ভাসমান এই জুতার বাজার বেশ জনপ্রিয়। প্রতিদিন দুপুরের পর বিভিন্ন মডেলের জুতার পসরা সাজিয়ে বসেন শতাধিক বিক্রেতা। পছন্দের জুতা কিনতে এখানে ছুটে আসেন সব শ্রেণির মানুষ। দেশি কিংবা বিদেশি সবধরনের জুতা পাওয়া যায়। সারাবছর সমানে চলে বেচাকেনা। তবে ঈদ ঘিরে থাকে বাড়তি ভিড়। কিন্তু এবার সেই ভিড় চোখে পড়েনি এখনো। ভীষণ মন খারাপ বিক্রেতাদের।শুক্রবার (২১ মার্চ) সন্ধ্যার পর সরেজমিনে দেখা গেছে, অধিকাংশ দোকানি অলস সময় পার করছেন। চলছে নিজেদের মধ্যে আড্ডাবাজি। কেউ বা পরিবারের সাথে ভিডিও কলে কথা বলছেন।
ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড আগ্রাবাদ ব্রাঞ্চ সংলগ্ন ফুটপাতে জুতার ব্যবসায় জড়িত মো. জাকির মোল্লা। প্রায় এক যুগ ধরে তিনি সেখানে জুতা বিক্রি করেন। এবারের ঈদবাজার নিয়ে তিনি বেশ হতাশ। বললেন, ‘বিশেষ কোনো আমেজ নেই। স্বাভাবিক সময়ের মতো চলছে। গতানুগতিক বেচাকেনা। কাস্টমার তেমন নাই। এবার প্রায় ১৫ লাখ টাকার মাল এনেছি। বেচাবিক্রির দেখা নেই। আল্লাহ যা কপালে রাখছে তাই হবে। হয়তো সামনে বেচাবিক্রি বাড়বে।আরেক বিক্রেতা মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘বেচাবিক্রি তো নাই। আগের বছর এমন সময়ে আপনি দাঁড়ানোর জায়গাও পেতেন না। এবার তো কাস্টমারই নাই। ইফতারের পর থেকে এখন পর্যন্ত একজোড়া জুতা বিক্রি হয়েছে।’
বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নগরের বৃহত্তম এই ভাসমান জুতার বাজারের সিংহভাগ জুতা আসে ঢাকা থেকে। আর স্নিকার্স জুতার অধিকাংশ চীন থেকে আনা। দামও নাগালের মধ্যে। পাঁচশ থেকে তিন হাজার টাকা দামের জুতা পাওয়া যায় এখানে।বিক্রেতা আব্দুর রহিম বলেন, ‘কাস্টমার কই ভাই? বসে আছি। কাস্টমার যা-ও দুই একজন আসতেছে দেখতেছে শুধু; কিনতেছে না। অনেকের সাথে দামদরে মিলতেছে না। মশা মারতেছি বসে বসে।’
এ সময় মিনহাজ নামের একজনকে জুতা পছন্দ করতে দেখা যায়। দাম জানতে চাইলে বিক্রেতা ১ হাজার ৬০০ টাকা দাবি করেন। পরে দর কষাকষি করে জুতা জোড়ার জন্য এক হাজার টাকা দিতে চান মিনহাজ। তবে ১৩৫০ টাকা একদাম বলে জানিয়ে দেন বিক্রেতা। শেষ পর্যন্ত আর জুতা কেনা হয়নি মিনহাজের। মিনহাজ বলেন, ‘মানুষ বলে আগ্রাবাদের ফুটপাতে জুতার দাম কম। কিন্তু কিনতে আসলে বোঝা যায়। ঈদের বাজার হিসাব করে দাম আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দাম ছাড়তে চান না।’
পাশের দোকানে কয়েকজন কিশোরকে স্নিকার্স জুতা পছন্দ করতে দেখা যায়। তবে দামদরে না মেলায় তারাও জুতা না কিনে ফিরে গেছে।ব্যবসায়ীরা জানান, রপ্তানিমুখী বিভিন্ন কারখানার বিদেশি ক্রেতাদের রিজেক্ট করা জুতা আসে এই বাজারে। কারখানা থেকে তুলনামূলক কম মূল্যে কিনে কয়েকহাত ঘুরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন পার্টির মাধ্যমে আনা হয় বিক্রির উদ্দেশ্যে। এখানে ঢাকা ও চীন থেকেই সবচেয়ে বেশি জুতা আসে। চট্টগ্রামের ইপিজেডগুলো থেকেও আসে। শপিংমলের চেয়ে তুলনামূলক কম দামে ভালো জুতা পাওয়ায় এখানে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ আসে।