মো.মোক্তার হোসেন বাবু : চলতি বর্ষায় চট্টগ্রাম মহানগরীর ৪১ ওয়ার্ডে ক্ষত-বিক্ষত সড়ক সারাতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) এর প্রয়োজন ৪২৬ কোটি ৮৪ লাখ ২২ হাজার টাকা। এর বাইরে স্ল্যাব নির্মাণ বাবদ ৯ কোটি ৩৩ লাখ ১৫ হাজার এবং নিরাপত্তা বেষ্টনী বাবদ ২১ কোটি ২৯ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। তবে বর্তমানে চসিকের আর্থিক অবস্থা অপ্রতুল হওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে এসব কাজ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
এর আগে সড়কের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে সম্প্রতি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ জরুরি সভা ডেকেছিল। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করে সম্প্রতি চসিক মেয়রকে প্রদান করা হয়। কিছু কিছু সড়কে ইতোমধ্যে জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু করে চসিক। বর্ষা শেষ হলে পুরোদমে ক্ষতিগ্রস্ত সবগুলো সড়কে কাজ শুরু করবে বলে জানান চসিকের কর্মকর্তারা। সম্প্রতি তৈরি হওয়া এই তালিকা অনুযায়ী- এই বর্ষায় নগরীর ৪১ ওয়ার্ডের ১৪২ কিলোমিটার সড়কের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এ বিষয়ে চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বর্ষায় আমাদের কী পরিমাণ সড়কের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, এটার একটা তালিকা করা হয়েছে। সড়ক সংস্কার, ড্রেন নির্মাণ ও খালের পাড়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী দিতে পাঁচশ কোটি টাকার মত আমাদের খরচ হতে পারে। তাই টাকা চেয়ে মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দিয়েছি। এই টাকা পেলে আমরা দ্রুত কাজ করতে পারবো।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, নগরীর মুরাদপুর থেকে অক্সিজেন মোড়, জাকির হোসেন সড়ক, বায়েজিদ বোস্তামী সড়ক, সিডিএ এভিনিউ, অক্সিজেন-কুয়াইশ সংযোগ সড়ক, প্রবর্তক মোড় থেকে ২ নম্বর গেট, পোর্ট কানেকটিং (পিসি) রোডের নিমতলা থেকে বড়পোল পর্যন্ত, সদরঘাট ও মাঝিরঘাট, বারিকবিল্ডিং থেকে ইপিজেড, কাটগড় থেকে সিমেন্ট ক্রসিং, বিমানবন্দর সড়কসহ নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও অলিগলি ক্ষতিগ্রস্ত। এসব সড়কে চলাচলরত চালকরা বলছেন, টানা বৃষ্টির সময় সড়কে পানি জমে যাওয়ায় ছোট-বড় খানাখন্দ তৈরি হয়েছিল। যার কারণে গাড়ি উল্টে প্রায় ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে।
চসিক মেয়রের মন্ত্রণায়ে দেয়া ওই চিঠিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক বর্ষাকালে চট্টগ্রামে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই অতিবৃষ্টির ফলে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, ব্রিজ ও কালভার্টসমূহ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী এবং বন্দর অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় প্রতিদিন নগরীর সড়কসমূহে চট্টগ্রাম বন্দরের লরি, ট্রাক এবং বিভিন্ন সেবা সংস্থার গাড়ি চলাচল করে থাকে। অতিবৃষ্টির ফলে বিভিন্ন সড়কে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় সেখানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে নগরীর বিভিন্ন সড়কে জনসাধারণের চলাচলে ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে এবং জরুরি পণ্য সরবরাহ, চিকিৎসা সেবাসহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
এছাড়াও নগরীর বিভিন্ন খালের পাশে নিরাপত্তা বেষ্টনীর অপ্রতুলতা থাকায় জলাবদ্ধতার ফলে বিভিন্ন দুর্ঘটনার আশঙ্কাও প্রবল আকার ধারণ করেছে এবং সম্প্রতি কিছু দুর্ঘটনাও ঘটেছে। ফলে নগরীর ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, ব্রিজ কালভার্ট মেরামতসহ ঝুঁকিপূর্ণ স্থানসমূহে নিরাপত্তা বেষ্টনী স্থাপন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এতে কর্পোরেশনের প্রায় ৫০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হবে। কিন্তু চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক অবস্থা বর্তমানে অপ্রতুল হওয়ায় কাজসমূহ জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। এমতাবস্থায়, বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অনুকূলে ৫০০ কোটি টাকা বিশেষ আর্থিক বরাদ্দ প্রদানের জন্য।