মো.মোক্তার হোসেন বাবু: চট্টগ্রাম বন্দরের নয়টি স্ক্যানারের মধ্যে বর্তমানে পাঁচটি অকার্যকর। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কেনা নতুন চার স্ক্যানার প্রায় দুই বছর ধরে চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে রয়েছে। যা এখনো চালু করা যায়নি।যার ফলে রপ্তানিকারকরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। অতিরিক্ত স্টোরেজ ভাড়ার চাপ বাড়ছে এবং ফ্যাক্টরি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা। তবে চোরাচালান রোধ, নিরাপত্তা ঝুঁকি ও আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য পরিবহন রোধে চট্টগ্রাম বন্দরে চারটিসহ অত্যাধুনিক ছয়টি ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার বসানোর কাজ করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের ১২টি গেটে স্ক্যানার আছে নয়টি। এরমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি) ১ নম্বর গেট এবং নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ৩ নম্বর গেটে আছে এফএস ৬০০০ সিরিজের অত্যাধুনিক ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার। চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) ২, ৪ ও ৫ নম্বর গেটে আছে একটি করে এফএস ৩০০০ মডেলের ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার। এছাড়া সিসিটি-২ ও জিসিবি-২ নম্বর গেটে রয়েছে একটি করে মোবাইল স্ক্যানার। ৪ নম্বর গেট ও সিপিএআর গেটে রয়েছে এফএস ৬০০০ সিরিজের অত্যাধুনিক ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার। যার মধ্যে প্রায় সময় কয়েকটি বন্ধ হয়ে যায়। এতেই প্রায়ই ভোগান্তি পড়তে হয়।
বন্দর সূত্র জানিয়েছে, ২০০৯ সালে স্থাপন করা চারটি স্ক্যানার অনেক আগেই অচল হয়ে গেছে। এখন সেগুলো প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। আরেকটি স্ক্যানার ১৫ দিন ধরে যন্ত্রাংশ পরিবর্তনের জন্য বন্ধ রয়েছে। ফলে কনটেইনার ডেলিভারিতে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটে। এতে বেসরকারি অফডকগুলোতে কনটেইনার পাঠাতে সমস্যা দেখা দেয়।
জানা গেছে, স্ক্যানাগুলো ক্রয়ের ব্যপারে চীনা প্রতিষ্ঠান নাকটেক কোম্পানি লিমিটেডের সাথে ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে এক চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ছয়টি স্ক্যানার বসানোর জন্য এই প্রকল্পে ব্যয় হয় ১৪৭ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা। চীনা প্রতিষ্ঠানটি স্ক্যানারগুলো স্থাপনের পর পাঁচ বছর সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও পালন করার কথা রয়েছে। যা তাদের বাংলাদেশ প্রতিনিধি হিসেবে ফাইভ আর এসোসিয়েটস নামে একটি প্রতিষ্ঠান সার্ভিস দেবে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে সেই স্ক্যানারগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে আসলেও প্রায় দুই বছরে একটি স্ক্যানার মেশিনও চালু করা যায়নি।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের এক কর্মকর্তা জানান, নতুন কেনা কনটেইনার স্ক্যানারগুলোর মধ্যে শিগগিরই আরেকটি স্ক্যানার সচল হতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো এসোসিয়েশনের (বিকডা) মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, সংকট এখন ভয়াবহ। বর্তমানে মাত্র তিন থেকে চারটি স্ক্যানার সচল আছে, ফলে উৎপাদনশীলতা ৭০ শতাংশ কমে গেছে। আমরা প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার রপ্তানি পণ্য ও খালি কনটেইনার আনতে পারি, কিন্তু মাত্র এক হাজার কনটেইনার আমদানি করতে পারছি। যদি সব স্ক্যানার সচল থাকত, তবে প্রতিদিন কমপক্ষে চার হাজার কনটেইনার ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব হতো।
এ বিষয়ে ব্যবসায়ী নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। চট্টগ্রাম সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের নির্বাহী সদস্য সরওয়ার আলম খান বলেন, স্ক্যানার সংকটের কারণে পণ্য সরবরাহে বিলম্ব হচ্ছে, ফলে রপ্তানিকারকরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। অতিরিক্ত স্টোরেজ ভাড়ার চাপ বাড়ছে এবং ফ্যাক্টরি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র মো. ওমর ফারুক বলেন, কনটেইনার ব্যবস্থাপনা ও স্ক্যানিং সম্পূর্ণ কাস্টমস কর্তৃপক্ষের অধীনে। আমরা সমস্যার কথা তাদের জানিয়েছি এবং দ্রুত সমাধানের আহ্বান জানিয়েছি।
সংকটের কথা স্বীকার করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ডেপুটি কমিশনার এইচএম কবির বলেন, একটি স্ক্যানার মেরামতের পর্যায়ে আছে এবং পুরোনো ইউনিট প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। আমরা আশা করছি, পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে।
এর আগে, ২০২৪ সালের ফেব্রুুয়ারিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে দুটি নতুন স্ক্যানার চালু করে। তবে কাস্টমসকে হস্তান্তর করার পর স্বল্প সময় ব্যবহার হতে না হতে রপ্তানি কনটেইনারের জন্য ব্যবহৃত ওই স্ক্যানারগুলো দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। পরে রপ্তানি কনটেইনার স্ক্যানিং কার্যক্রম গত ২ মে পুনরায় চালু হয়।