মো.মোক্তার হোসেন বাবু :চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ক্যাচমেন্ট ১ এর সংশ্লিষ্ট এলাকায় পাইপলাইনের কাজের জন্য সড়কে খোঁড়াখুঁড়িতে নগরবাসীর দিনদিন দুর্ভোগ বাড়ছে। ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়িতে নগরীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়কের বেহাল দশা। প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়ছেন কোমলমতি শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী ও পথচারীরা। তবে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে হস্তান্তরের সাথে সাথে মেরামত করা হলে নগরবাসীর দুর্ভোগ অনেকাংশে কমে আসবে বলে জানান ওয়াসার সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।
সরেজমিনে চট্টগ্রাম নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তিনপোলের মাথা, পাঠানটুলী রোড, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক,হালিশহর এলাকাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় স্যুয়ারেজ পাইপলাইনের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি করছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পের আওতায় সড়কে পাইপলাইন স্থাপনের কাজ চলছে। তবে ধীরগতিতে কাজ ও দ্রুত মেরামত না করার ফলে এলাকাবাসীকে মারাত্বক দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
স্যুয়ারেজ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম দৈনিক নাগরিক সংবাদকে বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ক্যাচমেন্ট ১এ পাইপলাইনের কাজের জন্য নগরীতে পর্যায়ক্রমে ২০০ কিলোমিটার সড়ক কাটা হবে। নগরির হালিশহর ক্যাচমেন্ট ১ এর কাজের জন্য এখন পর্যন্ত আমরা ৯৩ কিলোমিটার সড়ক কেটেছি। এর মধ্যে ৪৮ কিলোমিটার সড়কে কাজ শেষে সিটি কর্পোরেশনকে হস্তান্তর করা হয়েছে। সড়ক কর্তনের জন্য এ পর্যন্ত চসিককে ৮২ কোটি টাকা দিয়েছি। যখন যেটা হস্তান্তর করছি সেটা চসিক সাথে সাথে সংস্কার করলে নগরবাসীর দুর্ভোগ অনেক কমে আসবে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, এই ২০০ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য সিটি কর্পোরেশনের হিসাব অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ বাবদ আমাদেরকে ১৩০ কোটি টাকা দিতে হবে। ২০২১-২২ সালের হিসেব অনুযায়ী, ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতের জন্য ১৩০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হলেও এখন সেটা অনেক বেড়ে গেছে। চসিকের নতুন হিসেব অনুযায়ী এখন ২০০ কোটি টাকার মতো দিতে হবে। সড়ক কাটার ব্যাপারে এখন চসিকের সাথে নিয়মিত সমন্বয় সভা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম সড়কগুলো কাটার কারণে এসব এলাকায় যানবাহন ও পথচারীরা চলাচলে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। যেখানে সড়ক খুঁড়ে স্যুয়ারেজ প্রকল্পের পাইপলাইনের কাজ চলছে সেখানে সকাল থেকে থেমে থেমে দীর্ঘ যানজটের শিকার হচ্ছেন হাজার হাজার পথচারী।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ক্যাচমেন্ট ১ এর কাজ ২০২৬ সালের ৩০ জুন শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু মাঝখানে কাজ কিছুটা ধীরগতিতে হওয়ায় ২০২৭ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের অধীনে ২০০ কিলোমিটার পয়োনিস্কাশন পাইপলাইনের মধ্যে ১১০ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানো হয়েছে। অবশিষ্ট কাজ চলছে। হালিশহরে ১৬৩ একর জমিতে দুটি সর্বাধুনিক ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের সিভিল কন্সট্রাকশনের কাজ ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে।
ওয়াসার মাস্টার প্ল্যানের আওতায় চট্টগ্রাম শহরকে ৬টি ক্যাচমেন্টে ভাগ করা হয়। ক্যাচমেন্টগুলো হলো হালিশহর, কালুরঘাট, ফতেয়াবাদ, পূর্ব বাকলিয়া, উত্তর কাট্টলী ও পতেঙ্গা। এর মধ্যে হালিশহর ক্যাচমেন্টের আওতায় আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা। স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ছয়টি জোনের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ক্যাচমেন্ট ১ এর কাজ শুরু হয় ২০২২ সালের জানুয়ারিতে। বাংলাদেশ সরকার ও ওয়াসার যৌথ অর্থায়নে ৫ হাজার ২১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর নগরীর ২০ লাখ মানুষ স্যুয়ারেজের আওতায় আসবে বলে জানিয়েছেন ওয়াসার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। এ প্রকল্পের অধীনে নগরীর ২১টি ওয়ার্ডের ২৮ হাজার বাড়িঘরে স্যুয়ারেজে লাইনের কাজ চলছে।
নগরবাসীর দাবি নগরীতে যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন কাজ চলমান রেখেছে তাদের মধ্যে কোন প্রকারের সমন্বয় না থাকার কারণে যথাসময়ে কোন কাজ সম্পন্ন করে না বলে সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সকল সেবা সংস্থা সমন্বয় করে কাজ করলে ভোগান্তি কমে আসবে। সেবা সংস্থাগুলো ইচ্ছামত কাজ না করে একে অপরের সাথে সমন্বয় রক্ষা করে উন্নয়ন কাজ করলে যথাসময়ে কাজ শেষ হবে এবং নাগরিক ভোগান্তি কমবে।