নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামে উল্টোপথে গাড়ি নিয়ে যেতে বাধা দেয়ায় সহকারী পু্লিশ সুপার (এএসপি) কর্তৃক এক ট্রাফিক সার্জেন্টকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার (০৩ আগস্ট) বেলা ১২টা ০৫ মিনিটের দিকে কর্ণফুলী থানাধীন মইজ্যারটেক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, মইজ্জারটেক গরুর বাজার এলাকায় সড়কের কাজ চলায় এক পাশ বন্ধ ছিল। অন্য পাশ দিয়ে যাতায়াত করছিল চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের গাড়িগুলো। এই অবস্থায় শাহ আমানত সেতু অতিক্রম করে উল্টোপথে কক্সবাজারের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে বেশকিছু গাড়ি। এসময় উল্টোপথে যাওয়ার বিষয়টি লক্ষ্য করে তাৎক্ষণিক দৌঁড়ে আসেন ঐ এলাকায় কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট জলিল মিয়া। অনুরোধ করেন উল্টো পথে না যেতে।
ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তার এমন অনুরোধে উল্টাপথে লাইনে থাকা পুলিশকে বহনকারী সরকারি একটি গাড়ি থেকে ক্ষিপ্তাবস্থায় নেমে আসেন সাদা পোশাকধারী একজন লোক। নিজেকে সহকারী পু্লিশ সুপার (এএসপি) পরিচয় দিয়ে ট্রাফিক সার্জেন্টকে ওখান থেকে চলে যেতে বলেন।
কিন্তু ট্রাফিক সার্জেন্ট তো নাছোড়বান্দা, তার একটাই কথা ‘উল্টোপথে যাওয়া যাবে না স্যার’।
ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তার এমন কথায় আরও ক্ষিপ্ত হয়ে যান ঐ পুলিশ কর্মকর্তা। এবার অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করেন ট্রাফিক সার্জেন্টকে। দেন দেখে নেয়ার হুমকি। এবং উল্টোপথে গাড়ি যাতে যেতে না পারে তার জন্য ব্যবহার করা প্রতিবন্ধকগুলোও লাথি মেরে সরিয়ে দেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভিযোগ ওঠা এই পুলিশ কর্মকর্তার নাম মশিউর রহমান। তিনি চট্টগ্রামের মিরসরাই সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে কর্মরত।
এই ঘটনায় নগর পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্ট জলিল মিয়া ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
এদিকে, ট্রাফিক সার্জেন্টকে লাঞ্ছিত করেও ক্ষ্যান্ত হননি এএসপি মশিউর। চট্টগ্রাম থেকে যাওয়ার পথে নামেন চন্দনাইশ থানায়। সেখানেও দায়িত্বরত কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে মারধর ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধ।
মারধরে আহত চন্দনাইশ থানার এসআই সেলিম মিয়া ও কনস্টেবল মঙ্গলমনি চাকমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে চন্দনাইশ থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, মইজ্যারটেক এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত ও চন্দনাইশ থানার দায়িত্বরত কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে মারধর ও লাঞ্ছিত করার পূর্বে বেলা পৌনে ১২টার দিকে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু টোল প্লাজায় ভাঙচুর ও কর্মচারীদের মারধর করেন তিনি।
এ ঘটনায় শাহ আমানত টোল প্লাজার ব্যবস্থাপক মহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে কর্ণফুলী থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় এএসপির নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় আরও তিন থেকে চারজনকে আসামি করা হয়।
এ বিষয়ে কথা বলা হলে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) নুরে আলম মিনা বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের না জানিয়ে সরকারি গাড়ি নিয়ে মিরসরাইয়ের এএসপি মশিউর রহমান দক্ষিণ চট্টগ্রামে কেন গিয়েছেন, তদন্ত করা হচ্ছে। টোল প্লাজায় ভাঙচুর, ট্রাফিক সার্জেন্টকে লাঞ্ছিত এবং চন্দনাইশ থানার দায়িত্বরত কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে মারধর ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠায় প্রাথমিকভাবে তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মশিউর রহমানের মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাতে সংযোগ পাওয়া যায়নি।