নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার ফের সড়কে নেমেছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। গত পাঁচ দিনের মতো আজ সকালেও তারা সড়কের যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে। ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার পাশাপাশি যানবাহনকে লেন মেনে চলতে বাধ্য করছে আন্দোলনকারীরা। এলিফ্যান্ট রোড, সায়েন্স ল্যাব, মিরপুর, উত্তরা, মতিঝিলসহ বিভিন্ন পয়েন্টে শিক্ষার্থীরা তাদের এ কর্মসূচি পালন করছে। শাহবাগ, বাংলামটর, এলিফ্যান্ট রোড, সায়েন্স ল্যাবে বৃষ্টি উপেক্ষা করে গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে শিক্ষার্থীরা। ছুটির পর গর্বমেন্ট ল্যাবটেরি স্কুল, সিটি কলেজ, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা নিউ মার্কেট থেকে মিরপুর রোড এলাকার রাস্তায় নেমে আসে সকাল ১০টার পর মিরপুর-১০ থেকে মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা।
আগের মতোই সেøাগান দিয়ে তারা মিরপুর-১ নম্বরের দিকে চলে যায়। সেখানে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে তারা। ওই এলাকায় পুলিশের একটি প্রিজন ভ্যানের চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় শিক্ষার্থীরা ভ্যানটি আটকে রাখে। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন।
রামপুরা-বাডা রোডে তীব্র যানজট লক্ষ্য করা গেছে। ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির আফতাবনগর গেট এলাকায় শিক্ষার্থীরা ব্যারিকেড দিয়ে লাইসেন্স পরীক্ষা করায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা গাড়িগুলোকে লেন ভাগ করে দিচ্ছে। রিকশা, প্রাইভেট কার, সিএনজি অটোরিকশা ও বাইকের জন্য আলাদা লেন করা হয়েছে। বাড্ডা এলাকায় গুলশান কমার্স কলেজ ও ন্যাশনাল কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই এলাকায় কোনো ট্রাফিক সার্জেন্ট বা পুলিশ দেখা যায়নি।
সায়দাবাদ-যাত্রাবাড়ি এলাকায় শ্রমিকেরা দূরপাল্লার গাড়ি ছাড়তে বাধা দিচ্ছে। ঢাকার বাইরে থেকে সকালে যেসব গাড়ি এসেছে সেগুলোকে ঢুকতে দেয়নি শ্রমিকরা। সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকার বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা মহড়া দিচ্ছে। দূর দূরান্তের যাত্রীরা গাড়ির জন্য টার্মিনাল এলাকায় ভিড় করেছে। গাড়ি না পেয়ে অনেকে বাসায় ফিরে যাচ্ছেন। যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুলের শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিষ্ঠানের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়েছে। সাড়ে নয়টার দিকে মগবাজার, মৌচাক, মালিবাগ রেলগটেও দল বেঁধে সেøাগান দিয়ে রামপুরা পুরো মোড় রিকশার দখলে। গণপরিহন না থাকায় অনেকটা ফাঁকা মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারা। মতিঝিল পোস্ট অফিস হাই স্কুলের সামনে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে সেখানকার শিক্ষার্থীরা। তারা লাইন করে গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা করছে। আরামবাগে বৃষ্টিতে ভিজে নটরডেম থেকে আশপাশের এলাকার যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে শিক্ষার্থীরা। মতিঝিল শাপলা চত্বরে জড়ো হতে শুরু করেছে ওই অঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে শাহবাগ থেকে কাঁটাবনমুখী রাস্তা আটকে দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। তারা রাস্তার মুখ আটকে গাড়ির কাগজপত্র চেক করছে। গাড়িগুলোকে লেন ধরে চলতে বাধ্য করছে তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন কলেজ, শেখ বোরহানউদ্দিন গ্রাজুয়েট কলেজ, ওপেন ইউনিভার্সিটি, সেন্ট্রাল উইমেন কলেজসহ ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শাহবাগে জড়ো হচ্ছে। বিপুল পরিমাণ পুলিশ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে সেখানে।
তাঁতীবাজার মোড়ে কবি নজরুল, সোহরাওয়ার্দী, ইসলামিয়া স্কুলসহ পুরান ঢাকার স্কুল কলেজের ছাত্ররা নেমে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করছে। কিছু ছাত্র মোড়ে দাড়িয়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছে। রাস্তার মাঝে দাড়িয়ে রিকশা ও গাড়ীগুলোকে আলাদা লেনে চলতে বাধ্য করছে তারা। কেউ কেউ গাড়ীর লাইসেন্স চেক করে ছেড়ে দিচ্ছে।
শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজের দুই ছাত্র-ছাত্রী নিহতের জের ধরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে গত ছয়দিন ধরে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন পরবর্তীতে ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে। সড়কের নিয়ন্ত্রণ শিক্ষার্থীদের কাছে চলে যাওয়ায় ধর্মঘটের অঘোষিতভাবে ধর্মঘট পালন শুরু করে পরিবহন মালিক- শ্রমিকরা। লোকাল সার্ভিসের পাশাপাশি রাজধানীতে গত তিন দিন থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচলও বন্ধ রয়েছে। মালিক-শ্রমিকদের ভাষ্য, সড়কে তাদের গাড়ি ভাঙচুরের শিকার হচ্ছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে তারা গাড়ি বের করবেন না। আজ শনিবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ও নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান।