নিজস্ব প্রতিবেদক: একুশে আগষ্টের রায়কে প্রভাবিত করার জন্য সরকার উঠে পড়ে লেগেছে সরকার বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। আজ শনিবার নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এ অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী নেতাদের বক্তব্য শুনে মনে হয় একুশে আগষ্টের রায়কে প্রভাবিত করার জন্য তারা উঠে পড়ে লেগেছেন। একুশে আগষ্ট বোমা হামলা মামলার রায় নিজেরা লিখে তা আদালতকে দিয়ে বাস্তবায়ন করাবেন কি না, মানুষের মনে সে সংশয়ও এখন দেখা দিয়েছে। তাদের বক্তব্য শুনে মনে হয় একটি ফরমায়াসি রায় হতে যাচ্ছে। ওবায়দুল কাদের সাহেব গতকাল বলেছেন, একুশে আগাষ্ট মামলার রায় হলে সঙ্কটে পড়বে বিএনপি এবং আগামী সেপ্টেম্বরে সে রায় হবে।
তার বক্তব্যেই পরিষ্কার যে তারা নীল নকশা অনুযায়ী একুশে আগষ্টের বোমা হামলা মামলার রায় নিয়ে আগাম কাজ করছেন এবং সেজন্য একের পর এক ষড়যন্ত্রমূলকভাবে কূটচাল চালছেন তারা ।
রিজভী আরো বলেন, আমরা প্রথম থেকেই দেখছি আওয়ামী লীগ একুশে আগষ্ট বোমা হামলা মামলা নিয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিত রাজনীতি করছে। আওয়ামী লীগের আন্দোলনের ফসল মইনউদ্দিন ফখরুদ্দিন সরকারের সময়ও এ মামলার চার্জশীটে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম ছিল না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাদের দলীয় লোক কাহার আকন্দকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেন। তার আগেই কাহার আকন্দ পুলিশ ডিপার্টমেন্ট থেকে অবসরে গিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এমনকি ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তাকে পুলিশ বিভাগে ফের নিয়োগ দিয়ে এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা করা হয় ২০০৯ সালে। দলীয় চেতনার তদন্ত কর্মকর্তা কাহার আকন্দকে নিয়োগ দেওয়ার উদ্দেশ্যই ছিল এ মামলায় তারেক রহমানকে জড়ানো। পরে ২০১১ সালে তারেক রহমানের নাম সম্পূরক চার্জশীটে অর্ন্তভূক্ত করে শেখ হাসিনার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা হয়। পূর্ব পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে চার্জশীটে জনাব তারেক রহমানের নাম অর্ন্তভূক্ত করা হয়। এ জন্য নানা ধরণের ফন্দি ফিকিরের আশ্রয় নেওয়া হয়। শুধুমাত্র এ মামলায় তারেক রহমানের নাম বলানোর জন্য অন্য মামলায় ৪১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে অমানুষিক ও নির্মম নির্যাতন করা হয় মুফতি হান্নানকে। পৃথিবীর কোন দেশেই এ ধরণের নজির নেই।
তিনি বলেন, ২১শে আগস্টে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সমাবেশ শুরুর ২ ঘন্টা আগেও জানত না সমাবেশ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে হবে। সেখানে মুফতি হান্নান কিভাবে দুই দিন আগেই জেনেছিল সমাবেশ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে হবে? কার সিদ্ধান্তে সমাবেশস্থল মুক্তাঙ্গন থেকে সরিয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে নেওয়া হয়েছিল।
মুফতি হান্নান তার স্বীকারোক্তিতে বলেছিল, মুক্তাঙ্গনে আওয়ামী লীগের সভার কথাটি সে জানত। আবার স্বীকারোক্তিতে বলেছে বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে বোমা হামলার পরিকল্পনা করেছে এবং সে জন্য সে তার বাড্ডার বাসা থেকে বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউর দিকে রওয়ানা দিয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো মুফতি হান্নান মুক্তাঙ্গনে সভার কথা জেনে কেন শুরু থেকে সে বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে বোমা হামলার পরিকল্পনা করেছিল?
মুফতি হান্নান সভার স্থান পরিবর্তনের সংবাদ পেয়েছিল তাহলে কে তাকে এ সংবাদটি দিয়েছিল? মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিতে গ্রেনেড নিক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বন্দুক ব্যবহারের কথা নেই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় ও সিকিউরিটি অফিসার নাজিব আহমেদ বলেন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার বুলেট প্রুফ গাড়িতে অসংখ্য গুলি করা হয়েছে। এ বন্দুক ও গুলি আসল কোথা থেকে?
২১শে আগষ্টের গ্রেনেড হামলা মামলা তদন্ত করতে তৎকালীন বিএনপি সরকার মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআইকে নিয়ে এসেছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এফবিআইকে তদন্তকাজে কোন প্রকার সহায়তা করা হয়নি। এমনকি শেখ হাসিনাকে বহনকারী গাড়িটিও দেখতে দেয়া হয়নি। কেন তারা সুষ্ঠু তদন্ত করতে দিল না-এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদের একুশে আগষ্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কে প্রভাবিত করতেই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানেক নিয়ে বেসামাল বক্তব্য রাখছেন। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে এ জাতীয় বক্তব্য সুদূর প্রসারী ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিতবাহী।