মো.মুক্তার হোসেন বাবু : চট্টগ্রাম মহানগরীর ঘনবসতি ও ব্যস্ততম এলাকায় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে প্রায় দুই শতাধিক অবৈধ ট্রাক টার্মিনাল। এসব অবৈধ টার্মিনাল প্রতিনিয়ত যানজট ও ভোগান্তি সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতিনিয়ত চট্টগ্রামে পণ্যবাহী সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান চলাচল করলেও এখন পর্যন্ত স্থায়ী কোন ট্রাক টার্মিনাল গড়ে ওঠেনি। অথচ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি ও রফতানি করা অধিকাংশ পণ্য পরিবহন করা হয় ট্রাক এবং কাভার্ড ভ্যান দিয়ে।
তবে চলতি বছরের শুরুতে মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে মহানগরীর বায়োজিদের অক্সিজেন এলাকার কুলগাঁও এবং টোল রোড এলাকায় দুটি বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) যে প্রকল্পটি হাতে নিয়েছিল, তা চূড়ান্ত অনুমোদন এখনো মেলেনি। প্রকল্পটি ৮ দশমিক ১০ একর জমি ক্রয় করে ২৫ হাজার বর্গমিটারের ড্রেনেজসহ ইয়ার্ড নির্মাণের লক্ষ্যে ডিপিপি তৈরি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠায় চসিক। চসিকের বিভিন্ন ওয়ার্ডের সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়ন এবং বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ শীর্ষক ওই ডিপিপিতে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ২৩০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে চসিকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রকল্পটির চূড়ান্ত অনুমোদন এখনো মেলেনি। যদিও চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন সংস্থাটির সাধারণ সভায় জানিয়েছেন, টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
চট্টগ্রাম আন্ত:জেলা মালামাল পরিবহন ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি মুনির আহমদ বলেন, চট্টগ্রামে টার্মিনাল সংকট এখন প্রকট আকার ধারণ করেছে। বাধ্য হয়েই মাদারবাড়ি থেকে শুরু করে কদমতলি এলাকা, বিমানবন্দর সড়ক, পিসি রোডসহ বিভিন্ন সড়কের ওপর গাড়ি রাখছেন চালকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহানগরীর মাদারবাড়ি, অলংকার মোড়, বন্দর, মাঝিরঘাটসহ অন্তত ১৫টি ঘনবসতি ও ব্যস্ত এলাকায় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে বেশকিছু ট্রাক টার্মিনাল। এসব টার্মিনালের সঠিক হিসেব কারো কাছে না থাকলেও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের ধারণা, এই সংখ্যা দুই শতাধিক হতে পারে। এসব টার্মিনালের কারণে প্রতিনিয়ত নগরীতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। পথচারীর হাঁটা-চলায় বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দর ও কর্ণফুলী নদীর ১৬টি ঘাট থেকে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পণ্য নিয়ে আসা-যাওয়া করে সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান। তাই দীর্ঘদিন ধরে নগরীতে স্থায়ী ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের দাবি করে আসছেন বিশেষজ্ঞ মহল ও পরিবহন খাতের সংশ্লিষ্টরা।
জানতে চাইলে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাস-ট্রাকের জন্য প্রয়োজনীয় টার্মিনাল না থাকাটা এ নগরীর অন্যতম প্রধান সমস্যা। পরিকল্পিত নগরী গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইতিমধ্যে চসিক মেয়র মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী নির্দিষ্ট এলাকাগুলোতে টার্মিনাল গড়ে তোলার নির্দেশনা দিয়েছেন।