ডেস্ক রিপোর্ট: রাজধানীর পল্টন মডেল থানায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করেছে পুলিশ। দলটির মানববন্ধন ও প্রতীকী অনশন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পরপর দুইদিনে এ মামলা তিনটি দায়ের হয়। মামলাগুলোতে বিএনপি স্থায়ী কমিটির তিন সদস্য তরিকুল ইসলাম, মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ কেন্দ্রীয়, মহানগর ও অঙ্গদলের শতাধিক নেতার নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।
সরকারি ও পুলিশের কাজে বাধাদান, সড়ক অবরোধ ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে পুলিশ এসব মামলা করে। মামলার পর নেতাদের বাসায় বাসায় হানা দিচ্ছে পুলিশ।
দীর্ঘদিন ধরেই কিডনি জটিলতায় ভুগছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম। সমপ্রতি ক্যানসার ধরা পড়েছে তার শরীরে। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ দূরের কথা গুরুতর অসুস্থতার কারণে স্থায়ী কমিটির বৈঠকেই অংশ নিতে পারছেন না তিনি।
বিগত এক বছর ধরে ঘরবন্দি এ নেতা অন্যের সহযোগিতা ছাড়া স্বাভাবিকভাবে চলাফেরাই করতে পারেন না।
কিন্তু ১১ই সেপ্টেম্বর পল্টন মডেল থানায় দায়েরকৃত মামলাটিতে আসামির তালিকায় ২৭ নম্বরে রয়েছে তার নাম। মামলার বাদী পল্টন থানার এসআই জাহিদুল ইসলাম এজাহারে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন সড়ক বন্ধ করে যানচলাচলে বিঘ্ন ঘটনোর। এজাহারে (মামলা নং-২৩) বলা হয়েছে, ১১ই সেপ্টেম্বর রাত আটটা ১৫ মিনিটে বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে রাস্তা বন্ধ করে যানচলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি ও পুলিশের কাজে বাধা দিয়েছেন আসামিরা।
মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবী ও দলটির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনকে করা হয়েছে ১ নম্বর আসামি। এই মামলায় বিএনপি ও অঙ্গদলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি খালেদা জিয়ার একজন আইনজীবীকেও আসামি করা হয়েছে। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত না থাকা বৃদ্ধ এ আইনজীবীর নাম অ্যাডভোকেট আবদুর রেজাক খান। আসামির তালিকায় তার নাম রয়েছে ২৫ নম্বরে।
এ মামলায় আসামির তালিকায় রয়েছে- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাৎ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এমএ মালেক, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, শহীদুল ইসলাম বাবুল, তাইফুল ইসলাম টিপু ও বেলাল আহমেদ, কণ্ঠশিল্পী মনির খান, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিরুজ্জামান খান শিমুল, হাসান মামুন, রফিক শিকদার, তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ, শেখ মো. শামীম, অ্যাডভোকেট ফেরদৌসী আক্তার ওয়াহিদা, সাবেরা আলাউদ্দিন ও কাজী মফিজুর রহমান প্রমুখের নাম। তরিকুল ইসলামের পারিবারিক সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার বেলা ১টার দিকে পুলিশের একটি টিম তাদের শান্তিনগরের বাসায় গিয়েছিলেন। তবে ওই সময় ফলোআপ চিকিৎসায় হাসপাতালে ছিলেন তরিকুল ইসলাম।
১২ই সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত বিএনপির শান্তিপূর্ণ প্রতীকী অনশন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ওইদিন রাতে পল্টন থানায় আরো দুইটি মামলা করে পুলিশ। মামলা দুইটিতে আসামির তালিকায় রয়েছে- বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, হাবিব-উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা শহীদুল ইসলাম বাবুল, আমিরুজ্জামান খান শিমুলসহ বিএনপি ও অঙ্গদলের শতাধিক নেতার নাম।
পুলিশের মতিঝিল জোনের এসি মিশু বিশ্বাস গতকাল সন্ধ্যায় মানবজমিনকে জানান, বিএনপির অনশন কর্মসূচিতে সরকারি কাজে বাধা ও ভাঙচুরের অভিযোগে বুধবার রাতে পল্টন থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে। অন্যদিকে পল্টন থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. শাহেদুজ্জামান জানান, অনশন কর্মসূচিকে ঘিরে ২টি মামলা হয়েছে।
একটি মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে সরকারি ও পুলিশের কাজে বাধা ও অন্যটি সড়ক অবরোধ করে গাড়িতে অগ্নিসংযোগের। মামলা নং- ২৫ ও ২৬। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, অনশন কর্মসূচিকে ঘিরে বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা দিয়েছে। ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদের পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছে। মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর নেতাদের আসামি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শান্তিপূর্ণভাবেই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। এই কর্মসূচি পালনে মৌখিক অনুমতিও দিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু পুলিশই বিনা উস্কানিতে সেখান থেকে বিএনপি ও অঙ্গদলের আড়াই শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। পরদিন রাতে বায়তুল মোকাররম এলাকায় সড়ক অবরোধের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। কিন্তু মিথ্যা অভিযোগ এনে মামলা করেছে পুলিশ।
একইভাবে বুধবারের প্রতীকী অনশন কর্মসূচিটি ছিল সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। পুলিশের মৌখিক অনুমতিও ছিল। কর্মসূচি চলাকালে কর্মসূচিস্থল বা আশপাশে কোথাও কোনো ধরেন অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেনি। তারপরও সেখান থেকে শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি বলেন, বিএনপিকে কর্মসূচি পালনে মৌখিক অনুমতি দিচ্ছে পুলিশ। আবার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে চালাচ্ছে ব্যাপক ধরপাকড়। এটা যেন বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের নতুন ফাঁদ।
রিজভী বলেন, কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে যেখানে সামান্য কোনো গণ্ডগোলই হয়নি সেখানে সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে মামলা দায়েরের কারণ ও উদ্দেশ্য দেশের মানুষের কাছে পরিষ্কার। আগামী নির্বাচন সরকারি দলের নাগালের মধ্যে রাখার জন্যই বিএনপিকে দমনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আর তাই তাদের বানোয়াট মামলার শিকার হয়েছেন তরিকুল ইসলামের মতো একজন প্রবীণ ও গুরুতর অসুস্থ নেতা। রিজভী বলেন, মামলা দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি পুলিশ। এখন নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় হানা দিচ্ছে। তরিকুল ইসলাম, নিতাই রায় চৌধুরী, হাবিব-উন নবী খান সোহেল, চলচ্চিত্র অভিনেতা হেলাল খান, আশরাফউদ্দিন উজ্জ্বল, হাসান মামুনসহ অনেকের বাসায় গিয়ে তাদের খোঁজ করেছে পুলিশ। মানবজমিন