ট্রাম্প প্রশাসনে তদবির চালাতে বিএনপির ‘লবিস্ট’ নিয়োগ

 

- Advertisement -

ডেস্ক রিপোর্ট : বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনে তদবির চালাতে বিএনপি ওয়াশিংটনে একটি ‘লবিং ফার্ম’ ভাড়া করেছে বলে খবর দিয়েছে রাজনীতি বিষয়ক ম্যাগাজিন পলিটিকো।

যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের বরাত দিয়ে গত মঙ্গলবার ওই ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আব্দুল সাত্তার নামে বিএনপির একজন’ গত অগাস্টে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ব্লু স্টার স্ট্র্যাটেজিস’ এবং ‘রাস্কি পার্টনার্স’ এর সঙ্গে চুক্তি করেন, যাতে তারা বাংলাদেশের নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির পক্ষে ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে তদবির করে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এ খবরের সত্যতা অস্বীকার করে বিষয়টিকে ‘একটা মহলের অপপ্রচার’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, এ ধরনের ফার্মের আয়-ব্যয়ের বিবরণী জাস্টিস ডিপার্টমেন্টে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই বিবরণীর ভিত্তিতেই এ প্রতিবেদন প্রকাশ করার কথা জানিয়েছে পলিটিকো।

যুক্তরাষ্ট্রের এই সাময়িকী হোয়াইট হাউজ, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস, প্রশাসনসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থায় অর্থের বিনিময়ে তদবিরকারীদের যোগ্যতা, সক্ষমতা এবং কাজের গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করে নিয়মিতভাবে তা প্রকাশ করে।

পলিটিকো লিখেছে, ব্লু স্টার স্ট্র্যাটেজিস বিএনপির পক্ষে বিভিন্ন বার্তা তৈরি করে তা যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে দেবে।

এছাড়া মার্কিন কংগ্রেস; আন্তর্জাতিক বিভিন্ন আর্থিক সংস্থা; স্বাস্থ্য, শ্রম, মানবাধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন ও নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা; যুক্তরাষ্ট্রের পাবলিক পলিসি ইন্সটিটিউট; সাবেক কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রদূত; বেসরকারি খাতের প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং প্রবাসীদের কাছে বিএনপির বার্তা পৌঁছে দিতে তারা কাজ করবে।

চুক্তি অনুযায়ী এ কাজের জন্য অগাস্ট মাসে ব্লু স্টার স্ট্র্যাটেজিসকে দেওয়া হয়েছে ২০ হাজার ডলার। আর সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে প্রতি মাসে দিতে হবে ৩৫ হাজার ডলার করে।

এর মধ্যে ব্লু স্টারের সহযোগী রাস্কি পার্টনার্স অগাস্টে ১০ হাজার ডলার এবং বছরের বাকি চার মাস ১৫ হাজার ডলার করে পাবে।

ব্লু স্টার স্ট্র্যাটেজিসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কারেন ট্রামোন্টানো সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ ছিলেন। ওই ফার্মের চিফ অপারেটিভ অফিসার জন পডেস্টা একসময় ক্লিনটনের একজন জ্যেষ্ঠ পরামর্শক ছিলেন।

পলিটিকো লিখেছে, বিএনপির প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের ক্ষমতায়। বাংলাদেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুমের ঘটনার অনুসন্ধান করে গতবছর হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তাদের অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে আটকে রাখা ও হত্যার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও জড়িত, যদিও সরকারের তরফ থেকে তা অস্বীকার করা হয়েছে।”

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির একজন নেতা বলছেন, আবদুস সাত্তার নামে সেখানে বিএনপির কেউ নেই।

আবদুস সাত্তার নামে বাংলাদেশে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একজন একান্ত ব্যক্তিগত সহকারী রয়েছেন। লবিস্ট নিয়োগ প্রসঙ্গে আবদুস সাত্তার বলেন, ওরা হয়তো আমার নামটি ভুল করে দিয়েছে। আমি প্রশাসনিক কিছু কাজ করে থাকি। দলীয় কোনো কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। বিষয়টি আমিও জানতে পেরেছি। তবে আমার সম্পৃক্ততা থাকার বিষয়টি সঠিক নয়।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে থাকায় ‘লবিং ফার্ম’ নিয়োগের বিষয়ে তার বক্তব্য জানা যায়নি। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন দলটির অন্যতম মুখপাত্র জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবি রিজভী।

তবে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল বিএনপি। ন্যূনতম নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে যে দলটি ক্ষমতার ম্যান্ডেট পাবে, সেই দল বিদেশিদের আনুকূল্যের জন্য লবিস্ট নিয়োগ করবে কেন? আমরা কখনো বিদেশিদের কাছে ধর্ণা দিয়ে রাজনীতি করি না। আমাদের শক্তি এদেশের জনগণ।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। এগুলো নিয়ে ঢাকায় কোনো আলোচনা হয় না।

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ও দলীয় চেয়ারপারসনের দাবি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

বাংলাদেশে বিভিন্ন দেশের দূতাবাস ও সংস্থার সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ এবং চিঠি আদান-প্রদান করছে বিএনপি। সূত্র : বাংলাদেশ জার্নাল

সর্বশেষ