চমেকে চালুর অপেক্ষায় ফ্রি ওষুধের ‘ফার্মেসি’

সিরাজুল আলম টিপু : মলম পাটি, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত (অজ্ঞাত) রোগীদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করেই চলে যায় পথচারী ও সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। তবে অজ্ঞাত রোগীদের জন্য শেষ ভরসা ১৩১৩ শয্যার প্রতিদিন এই হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিচ্ছেন ছয় জেলার অসংখ্য মানুষ। তাদের সাথে নিয়মিত ভর্তি হচ্ছেন অজ্ঞাত রোগীরাও। এই অজ্ঞাত রোগীদের জন্য হাসপাতালের ২৮ নম্বর (নিউরো সার্জারি) ওয়ার্ডের ডিউটি ডাক্তারের রুমে ফ্রি ওষুধের ‘ফার্মেসি’ সেবা চালুর অপেক্ষায় আছে। অজ্ঞাত রোগীদের সেবায় নিয়োজিত থাকবে ওষুধের এই ‘ফার্মেসি’। এখানে থাকছে অজ্ঞাত রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ, সার্জিকেল আইটেম, বিভিন্ন অপারেশনসামগ্রী ও ব্যবহারের জন্য লুঙ্গি। অজ্ঞাত রোগীদের কল্যাণে ডিউটিরত ডাক্তাররা ফার্মেসির খাতায় এন্ট্রি করে ২৪ ঘণ্টা ওষুধসামগ্রী সরবরাহ করতে পারবেন।
জানা গেছে, অজ্ঞাত রোগীদের সবধরনের ওষুধ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় না। তাই চমেক হাসপাতালে আসা অজ্ঞাত রোগীদের বন্ধু সাইফুল ইসলাম নেছারের উদ্যোগে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান জুলফার বাংলাদেশ, রিগালো, পোর্টল্যান্ড গ্রæপ, ইশরাত টেকনোলজি, রোটারি ক্লাব অব মেট্টোপলিটন চট্টগ্রাম, রোটারি ক্লাব অব চট্টগ্রাম মহানগর, কুইক এনার্জি’র সহযোগিতায় চমেক হাসপাতালে এই সেবা চালু হচ্ছে।
এ বিষয়ে সাইফুল ইসলাম নেছার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চমেক হাসপাতালে অজ্ঞাত রোগীদের ওষুধ ও ব্যবহারের জিনিসপত্র ব্যাগে, চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়িতে, নার্স, ওয়ার্ড বয়দের কাছে জমা রাখতাম। বর্তমানে ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে ‘ফার্মেসি’ স্থাপন করা হয়েছে, যা উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে। সেখানে অজ্ঞাত রোগীর প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র থাকবে। কর্তব্যরত চিকিৎসক অজ্ঞাত রোগীর জন্য তা ব্যবহার করবেন।
তিনি আরো জানান, চমেক হাসপাতালে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে (অর্থো: সার্জারি ওয়ার্ডে) অতি শীঘ্রই আরো একটি ‘ফার্মেসি’ স্থাপন করা হবে। সেজন্য অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি। ‘ফার্মেসি’র যাবতীয় জিনিপত্র ক্রয় করা হয়েছে। বর্তমানে সেসব জিনিসপত্র নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে রাখা আছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক এসএম খালেদা চৌধুরী নোমান বলেন, নেছারের অজ্ঞাত রোগীদের জন্য ফ্রি ওষুধের ‘ফার্মেসি’ বসানোর কাজটা দেশে বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এই বিভাগে ফার্মেসিটি চালু হলে অজ্ঞাত রোগীর জন্য চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে দ্রুত সময়ে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে। নেছারের এই কাজকে উৎসাহ ও সকলের সহযোগিতা করা প্রয়োজন। নেছার দীর্ঘ এক যুগ ধরে অজ্ঞাত রোগীদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। তার এই কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ফেনী সদর হাসপাতালে। ২০১৩ সালে পেট্টোল বোমার আঘাতে অজ্ঞাত রোগীরা চমেক হাসপাতালে হাহাকার করছিলো। তখন থেকে চমেক হাসপতালে অজ্ঞাত রোগীর সেবা করে যাচ্ছেন তিনি। তাই চট্টগ্রামের মানুষ নেছার আহমেদকে অজ্ঞাত রোগীর বন্ধু হিসেবে চেনেন।
চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক জহিরুল হক ভূঁইয়া বলেন, চমেক হাসপাতালে প্রতিনিয়ত অজ্ঞাত ভর্তি রোগী হচ্ছে। যাদের ভর্তি করে মেডিকেলে বেডে রেখে চলে যান পথচারী এবং সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ। পরে দায়িত্ব নিতে হয় আমাদেরকে। হাসপাতালে সরবরাহ করা ওষুধ দেয়ার বাইরে আরো যখন ওষুধের প্রয়োজন হয় তখন ‘ফার্মেসি’ থেকে আনার জন্য ওষুধের নাম লিখে আমাদের হাতে দেন। আমরা কিভাবে ওষুধ দিব। নিজেদের পকেটের টাকা দিয়ে (অজ্ঞাত) রোগীদের জন্য ওষুধের ব্যবস্থা করি। পরে রোগীর স্বজন আসলে টাকা না দিলে কিছুই করতে পারি না। রোগীদের বন্ধু নেছার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে অজ্ঞাত রোগীদের জন্য সবধরনের ফ্রি ওষুধের জন্য ‘ফার্মেসি’ স্থাপন করেছেন। তাই এখন অজ্ঞাত রোগীদের জন্য আর কোন ওষুধের অভাব হবে না।

সর্বশেষ