নিজস্ব প্রতিবেদক: নগরীর পাহাড়তলী থানাধীন পশ্চিম নাছিরাবাদ আবদুল লতিফ সড়কের পাশে প্রায় ৫০শতাংশের পুকুরটি ভরাট করেছে প্রভাবশালীরা। জানা যায় যে, চট্টগ্রামে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া পাহাড়তলী থানা বিএনপির সহ-সভাপতি জনৈক আবদুল গনি সর্দার মাটির পরিবর্তে ময়লা-আর্বজনা ফেলে পুকুর ভরাট করছে। জলাধার সংরক্ষণ আইন অনুসারে জলাশয় ভরাট করা বেআইনি হলেও একশ্রেণীর লোক কৌশলে জোরপূর্বক পুকুরের কিয়দাংশ ইট, কংকর, মাটি ও ময়লা আবর্জনা দিয়ে ভরাট করায় পুকুরটির ঐতিহ্য হারাতে বসেছে অন্যদিকে প্রতিনিয়ত ধোয়া মোছা, রান্নাবান্না, গোসালাদি সম্পন্নকারী শত শত জনমানব বিপাকে পড়েছেন। নগরে পানি সংকটের মাঝে একের পর এক পুকুর জলাশয় ভরাট চলছে। পুকুর, দিঘি এমনকি জলাশয়ের ক্ষেত্রগুলো ভরাটের কারণে এখানে পানি সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করছে। আর ফায়ার সার্ভিসের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারিত জলাশয়গুলো ভরাটের কারণে অগ্নিকাণ্ডে তাৎক্ষণিকভাবে পানি সংগ্রহ করা দুরূহ হয়ে পড়বে। তথ্য মতে হালিশহর, বাকলিয়া, চান্দগাঁও, বায়েজিদ বোস্তামীসহ নগরীর কয়েকটি স্থানে গত দুই যুগে ১২টি পরিবেশবান্ধব ছোট বড় পুকুর ভরাট করা হয়েছে। ভরাট করা হয়েছে জলাশয়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রগুলোও। ইমারত নির্মাণ আইন অনুযায়ী নগরীতে পুকুর ভরাট কিংবা খনন করতে সিডিএর অনুমোদন নিতে হয়। একই সঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক। এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কাছ থেকেও ছাড়পত্র নিতে হয়। কিন্তু পুকুরটি ভরাট করার আগে কোনো সংস্থা থেকেই অনুমোদন নেওয়া হয়নি। পূর্বেও অবৈধ পুকুর ভরাট নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত স্থানীয় দৈনিক পত্রিকাও ঢাকা থেকে প্রকাশিত জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রচার হলে কিছুদিন পুকুর ভরাটের কাজ বন্ধ রাখে পুনরায় পুরোদমে পুকুর ভরাটের কাজ চলছে। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত-২০১০) এর ৬(ঙ) অনুযায়ী জাতীয় অপরিহার্য স্বার্থ ছাড়া কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধা-সরকারি এমনকি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বা ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুর ভরাট করা না করার বিধান রয়েছে। প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুসারে কোনো পুকুর, জলাশয়, নদী, খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। ওই আইনের ৫ ধারা মতে প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণী পরিবর্তন করা যাবে না বা উক্তরূপ জায়গা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করা যাবে না বা অনুরূপ ব্যবহারের জন্য ভাড়া, ইজারা বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তরও করা যাবে না। একই সঙ্গে প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০ এর ৮ ও ১২ ধারার বিধানমতে, কোনো ব্যক্তি এই বিধান লঙ্ঘন করলে ৫ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডনীয় হবে। এছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী যে কোনো ধরনের জলাশয় ভরাট করা নিষিদ্ধ। জলাশয় ভরাটকারীর বিরুদ্ধে আইনের ৭ নম্বর ধারায় প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও জীববৈচিত্র্য নষ্ট করে পরিবেশগত ক্ষতির জন্য কঠোর ব্যবস্থা ও বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিধান রয়েছে। কিন্তু বিভিন্নস্থানে ভরাটকারীরা পরিবেশ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নির্বিঘ্নে ভরাট কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।