সকল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে সক্রিয় করার অংশ হিসেবে সংস্কারপন্থী ১২ নেতাকে দলে ফিরিয়েছে বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে ডেকে পাঠানো হয় তাদের। সেখানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাতে ফুল দিয়ে তারা দলীয় কর্মকাণ্ডে আনুষ্ঠানিকভাবে সক্রিয় হওয়ার অঙ্গীকার করেন।
বিকাল চারটা থেকে দুইঘণ্টা ব্যাপী এ বৈঠক শেষে সংস্কারপন্থী নেতাদের পক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সাবেক এমপি সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল। পরে দলের তরফে এ ব্যাপারে একটি বিবৃতি দেয়া হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া দলকে সময় উপযোগী ও ঐক্যবদ্ধ করে, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী ধারার ঐক্য নিশ্চিত করে; জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় দেশে বিএনপিসহ সকল গণতন্ত্রকামী দল ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত হয়েছে ‘জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট’। এই প্রেক্ষাপটে বিএনপি দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছে।
বিবৃতি বলা হয়, বৈঠকে চলমান জাতীয় সংকট, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ সকল নির্যাতিত নেতাকর্মীদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার এবং জনগণের ভোটাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়। দলের পক্ষ থেকে মহাসচিব মির্জা আলমগীর কাল বিলম্ব না করে সকলকে পূর্ণমাত্রায় সক্রিয় হয়ে দলকে শক্তিশালী করার এবং সকল কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানান। সভায় সাবেক মন্ত্রী আলমগীর কবির, সাবেক হুইপ আবু ইউসুফ মো. খলিলুর রহমান, আবু হেনা, গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ (জিএম সিরাজ), সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, নজির হোসেন, ডা. জিয়াউল হক মোল্লা, আতাউর রহমান আঙ্গুর, ইলেন ভুট্টো, শফিকুল ইসলাম তালুকদার, শহিদুল আলম তালুকদার ও জহির উদ্দিন স্বপন অংশ নেন। বিবৃতিতে বলা হয়, পর্যায়ক্রমে প্রয়োজন অনুযায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এ ধরনের বৈঠক অব্যাহত থাকবে।
এদিকে বৈঠক থেকে বেরিয়ে বিএনপির সাবেক এমপি সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল বলেন, আমরা দলে আছি, আগে ছিলাম এবং দলে থাকবো। আরও সক্রিয়ভাবে কাজ করার নির্দেশ পেয়েছি। আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্দেশনা দিয়েছেন, সেই বিষয়ে জেনেছি। আমরা দলের নির্দেশনা অনুযায়ী একযোগে কাজ করে যাবো। সাবেক এমপি শহীদুল আলম তালুকদার বলেন, আমরা এতদিন দলে নিষ্ক্রিয় ছিলাম, এখন আমাদের সক্রিয় হওয়ার জন্য দল থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দলের চেয়ারপারসন জেলে আছেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিদেশে আছেন এবং সামনে নির্বাচন আছে। আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের মুক্ত করবো। পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছি। এতদিন কেন নিষ্ক্রিয় ছিলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে শহীদুল আলম তালুকদার বলেন, একটি ঘরের ভেতরে তো বিভিন্ন রকমের সমস্যা থাকতেই পারে। এখন সবাই এক হয়ে কাজ করবো। অনেক সময় অন্য কেউ দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার কারণে নিষ্ক্রিয় ছিলাম, এখন দলের জন্য কাজ করবো। আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া বা এমপি হওয়া মূল বিষয় নয়, দলকে টিকিয়ে রাখাই আমাদের লক্ষ্য। উল্লেখ্য, ওয়ান ইলেভেনের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দলের সংস্কারপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কারণে পরবর্তীতে সাবেক অনেক এমপি-মন্ত্রী দলে কোনঠাসা ও রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিলেন। তবে নানা সময়ে তাদের অনেকেই দলের মূলস্রোতে ফিরে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন।
অন্যরা দীর্ঘ এক যুগ ধরে দলে ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন। এ সময় তাদের সামনে নানা ধরনের লোভনিয় প্রস্তাব এলে তারা নতুন কোন দল বা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে হাত মেলাননি। দলীয় সূত্র জানায়, এ প্রক্রিয়ায় আরও কয়েকজন নেতা দলে সক্রিয় হবেন। সেই সঙ্গে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার হওয়ার নেতাদের দলের ফিরে এনে রাজনীতিতে সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। শিগগিরই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের মাধ্যমে বেশ কয়েকজন নেতা আনুষ্ঠানিকভাবে দলে সক্রিয় হওয়ার সুযোগ পাবেন। মানবজমি