spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে ইসি!

spot_img

 

- Advertisement -

ডেস্ক রিপোর্ট: নিজেদের অবিবেচনাপ্রসূত বক্তব্য ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। গত ৭ আগস্ট ইসিতে এক কর্মশালা উদ্বোধনের পর সিইসি বলেছিলেন, বড় পাবলিক নির্বাচনে যে অনিয়ম হবে না, এটি নিশ্চিত করে বলা যাবে না। তার এমন বক্তব্যের পর দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। সিইসির আরো সতর্ক হয়ে কথা বলা উচিত বলে মন্তব্য করেন খোদ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এরপর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ভোটের মাত্র দেড় মাস আগে গত শুক্রবার প্রশাসনের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সামনেই নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেছেন, বাংলাদেশে শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।

এ দিকে তফসিল ঘোষণার ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও সব দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর জোর দাবি থাকলেও এ প্রশ্নে নীরব ইসি। তফসিল ঘোষণার পর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষেত্রে সবার জন্য সমান সুযোগ দেয়ার ঘোষণা দেয় ইসি। কিন্তু ভোটের তারিখ পরিবর্তন, দলীয় মনোনয়ন উত্তোলন ও জমা দেয়ার সময় কর্মীদের মিছিল সমাবেশসহ নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো। অন্য দিকে নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি পুলিশি তল্লাশি ও গ্রেফতারসহ নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছে বিএনপি ও তাদের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো।

তফসিল ঘোষণার পর থেকেই অব্যাহত রয়েছে পুলিশের গ্রেফতার অভিযান। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। বাদ যাচ্ছেন না বিরোধী দলের সমর্থকেরাও। মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে দিনমজুর সমর্থকদেরও গ্রেফতার করা হচ্ছে। এতে সারা দেশে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মী এবং ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আর ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন।

নির্বাচন কমিশনের এমন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড এবং অবিবেচনাপ্রসূত বক্তব্য গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে।

নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একজন নির্বাচন কমিশনারের পক্ষে এ ধরনের কথা বলা খুবই গর্হিত কাজ। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, এ কথা বলাটা একেবারেই অযাচিত ও অবিবেচনাপ্রসূত। এমন বক্তব্য মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য অজুহাত তৈরিতে সহায়ক হবে। তাদেরকে একপ্রকার বার্তাই দেয়া হলো যে, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সক্ষম নয়। একজন নির্বাচন কমিশনারের এমন বক্তব্য দেয়া নৈতিকতার পরিপন্থী।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, যুদ্ধের আগেই তারা পরাজয় বরণ করছেন কেন? এতে তো নৈতিকতা দুর্বল হয়ে যায়। যারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেন, তারা তো অনেক ঝুঁকি নিয়ে কাজটি পরিচালনা করেন। নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সুরক্ষার বিষয়টি তো নিশ্চিত করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। কিন্তু এমন যদি হয়, একজন নির্বাচনী কর্মকর্তাকে কেউ হুমকি দিলো বা লাঞ্ছিত করল, সে ক্ষেত্রে আপনি তার সুরক্ষা না দিয়ে বললেন যে এমনটি তো হবেই। তা হলে তো কেউ আর নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে আগ্রহী হবেন না। এখানে যদি তারা নির্বাচন শুরু হওয়ার আগেই বলে দেন যে, সুষ্ঠু হবে না, তা হলে তো নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বে তাদের থাকাই উচিত না। তাদের সবারই পদত্যাগ করা উচিত। যারা অনিয়ম ঠেকাতে পারবে, সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করতে পারবে, তাদেরই নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বে থাকা উচিত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, একজন নির্বাচন কমিশনার এটি কোনোভাবেই বলতে পারেন না। এভাবে কথা বললে কমিশন বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে। নির্বাচন কমিশনের ত্রুটি থাকতে পারে। কিন্তু তারা এভাবে বললে অজুহাত দাঁড় করানো হবে। তারা কর্মকর্তাদের জন্য আগেই অজুহাত তৈরি করে রাখছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে না পারলে তাদের উচিত ওই পদ থেকে সরে যাওয়া।

নির্বাচন কমিশন এমন বক্তব্যের মাধ্যমে নিজেদের দুর্বলতা প্রকাশ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমন বক্তব্যের কারণে প্রশ্ন জাগে, নির্বাচন কমিশন আসলেই ভালো নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত কি না। এগুলো নির্বাচন কমিশনের বেসামাল হওয়ার লক্ষণ কি না তা জানা দরকার।
বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, এটি নৈতিকতার ব্যাপার। নির্বাচন কমিশনারদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য। কেউ যদি মনে করেন তার পক্ষে এটি সম্ভব না, তা হলে নৈতিকভাবে দায়িত্ব পালনে তার তো ওই পদে থাকা উচিত নয়। দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোই তার জন্য নৈতিক কাজ হবে।

শুক্রবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের উদ্দেশে এক ব্রিফিংয়ে নির্বাচন কমিশনার বেগম কবিতা খানম বলেন, বাংলাদেশে শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আমরা জনগণকে এমন কোনো নির্বাচন উপহার দিতে চাই না, যেন জনগণের কাছে আমাদের জবাবদিহি করতে হয়। কিন্তু শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন এটি পৃথিবীর কোনো দেশেই হয় না। আমাদের দেশেও তা সম্ভব নয়। সুতরাং আমরা বলতে চাই, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে, যেটা প্রশ্নের ঊর্ধ্বে থাকবে।

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, দেশে নির্বাচনী হাওয়া বইছে। এই হাওয়া যেন কোনোভাবেই বৈরী না হয়, এই নির্দেশনা কমিশন থেকে থাকবে। আপনাদের সেটি প্রতিপালন করতে হবে। কমিশন চায় না নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হোক।
অন্য দিকে ‘জাতীয় নির্বাচনে অনিয়ম হবে না, এমন নিশ্চয়তা দেয়ার সুযোগ নেই’ মন্তব্য করে গত আগস্টে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা।

পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই সময় জাতীয় নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ আছে কি না এমন প্রশ্নে কে এম নুরুল হুদা সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এ ধরনের নির্বাচনে অনিয়ম হয়েই থাকে। বড় বড় পাবলিক নির্বাচনে কিছু কিছু অনিয়ম হয়ে থাকে। আমরা সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিয়ে থাকি। বরিশালে বেশি অনিয়ম হয়েছে, সেখানে আমরা বাড়তি ব্যবস্থা নিয়েছি। নির্বাচনে অনিয়ম হলে যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার, সেভাবে আমরা নিয়ন্ত্রণ করব। সিইসির এ বক্তব্যের সাথে বেগম কবিতা খানমসহ চার নির্বাচন কমিশনারই দ্বিমত করেছিলেন। তখন তারা বলেছিলেন, এটি ইসির অবস্থানও নয়।

ওই সময় বেগম কবিতা খানম সিইসির বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, সিইসির ওই বক্তব্যকে আমি সমর্থন করি না। আমি দ্বিমত পোষণ করি। কারণ সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্যই তো আমরা শপথ নিয়েছি। সুতরাং আমি এটি কখনই সমর্থন করি না। এটি কমিশনের বক্তব্য বলেও আমি মনে করি না। সিইসির এমন বক্তব্য নির্বাচনে অনিয়মকারীদের উসকে দিতে পারে বলেও মন্তব্য করেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। সিইসির ওই বক্তব্য নিয়ে তার সাথে নির্বাচন কমিশনের দূরত্বও সৃষ্টি হয়েছিল বলে শোনা যাচ্ছিল। তখন সিইসিকে সংযতভাবে কথা বলার পরামর্শও দিয়েছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। অন্য দিকে সিইসিকে অভয় দিয়ে দেশবাসীর ওপর আস্থা রাখতে বলেছিলেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক।

spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

সর্বশেষ