ডেস্ক রিপোর্ট: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে বিভক্ত আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট বেঞ্চ। জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বৈধ বললেও কনিষ্ঠ বিচারপতি মো.ইকবাল কবির বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছেন। মঙ্গলবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে আদালত এ রায় দেন। বিষয়টি এখন তৃতীয় বেঞ্চে পাঠানো হয়েছে হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।
আদেশের পর খালেদা জিয়ার আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, বেঞ্চের প্রিজাইডিং জজ খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু অপর বিচারপতি দ্বিমত পোষণ করেছেন। এখন নিয়ম অনুসারে আবেদনগুলো প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হবে। তিনি বিষয়গুলো নিষ্পত্তির জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠাবেন।
এদিকে সোমবার শুনানির সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইলেকশন এক্সপার্ট মিশনের আইনজ্ঞ ইরিনি মারিয়া গোনারি। শুনানির শুরুতে এজলাস কক্ষের শেষ সারিতে দাঁড়িয়েছিলেন মারিয়া গোনারি। পরে আদালত তাকে দেখে বসার ব্যবস্থা করে দিতে বলেন। তখন একটি বেঞ্চে আইনজীবীরা তাদের পাশে বসান গোনারিকে।
কারাগারে থাকা খালেদা জিয়াকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ফেনী-১ এবং বগুড়া-৬ ও ৭ আসনে প্রার্থী করেছিল বিএনপি। তবে বাছাইয়ের সময় খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করলে তাও ইসিতে নাকচ হয়ে যায়। তাই হাইকোর্টে আইনি লড়াইয়ে নামেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।
সোমবার শুনানির পর ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন কমিশন বেআইনিভাবে খালেদা জিয়ার তিনটি মনোনয়নপত্র বাতিল করে দিয়েছিল। আমরা আশা করছি, বেগম খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার পাবেন এবং জনগণের আশা-আকাঙ্খা অনুযায়ী আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।
গতকাল শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী বলেন, সংবিধান বা আইনের কোথাও বলা নেই যে শুধু নিম্ন আদালতে বা হাইকোর্টে দণ্ড হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের বিরুদ্ধে করা একটি দুনীতি মামলায় আপিল বিভাগের একটি রায় রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তের আগে কোনোভাবেই বলা যাবে না যে, তিনি (সংশ্লিষ্ট) সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার পৃথক দুটি আপিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন। এরশাদের মামলায় আপিল বিভাগের দেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খালেদা জিয়ার সাজা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তাই সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুচ্ছেদ তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। সংবিধানের এই অুনচ্ছেদে চূড়ান্ত সাজার কথা বলা হয়েছে।
জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, কোনো মামলায় সাজা (কনভিকশন) হলে তা স্থগিত করার নজীর বা আইন নেই। দুটি মামলায় হাইকোর্ট একথা বলে দিয়েছেন। আর আপিল বিভাগ তা বহাল রেখেছেন। এছাড়া অপর একটি মামলায় একক বেঞ্চ আদেশ দিয়েছিলেন নির্বাচন করার পক্ষে। পরে আপিল বিভাগ তা স্থগিত করেছেন। এছাড়া সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দুর্নীতির মামলায় ২ বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি দণ্ড ভোগ করে মুক্তি লাভের ৫ বছর আগে নির্বাচন করতে পারবেন না। সংবিধানের এই বিধান অনুযায়ী খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন না।