মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো এবং ভাসানচরের আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানোর ভয়ে উন্নত জীবন-জীবিকার সন্ধানে উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্প ছেড়ে পালাচ্ছেন রোহিঙ্গারা।
কেননা রোহিঙ্গাদের আকৃতি, ভাষা, পোশাক-পরিচ্ছদ, আচার-আচরণ স্থানীয়দের মতোই। আর এ কারণেই রোহিঙ্গা পুরুষ, নারী ও শিশুরা সহজেই স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার সকালে ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী ১০-১২ রোহিঙ্গা পায়ে হেঁটে উখিয়া সীমান্ত পার হয়ে দালালের মাধ্যমে কুতুপালং ক্যাম্পে তাদের স্বজনদের ঘরে আশ্রয় নিয়েছে।
এরই মধ্যে গত শুক্রবার উখিয়া থানা পুলিশ মরিচ্যা এলাকায় যানবাহনে তল্লাশি চালিয়ে ১৮ রোহিঙ্গাকে আটক করে কুতুপালং ক্যাম্পে ফেরত পাঠিয়েছে।
একই দিনে বিজিবি সদস্যরা তিন রোহিঙ্গাকে যাত্রীবাহী গাড়ি থেকে আটক করে উখিয়া থানা পুলিশের নিকট সোপর্দ করেছে। ১ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার উপজেলা প্রশাসন ১০ রোহিঙ্গাকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রোহিঙ্গা এডুকেশন ডেভেলপমেন্টের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জমির উদ্দিন রেডিও তেহরানকে বলেন, নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ছাড়া তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হতে পারে অথবা সাগরের বুকে ভাসনচরে তাদের সরিয়ে নেয়া হতে পারে, এমন আতঙ্ক থেকে রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা দিন দিন কমে যাওয়ায় শিবিরের তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাসহ দেশি-বিদেশি এনজিওকর্মীরাও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। এ কারণে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে নতুন করে রোহিঙ্গাদের ভেরিফিকেশন (যাচাই) শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনসহ রোহিঙ্গা শিবির তদারকির দায়িত্বে থাকা সরকারের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম জানিয়েছেন, শিবিরে আশ্রয় নেয়া বেশ কিছু রোহিঙ্গার খোঁজ মিলছে না।
এ রকম নিখোঁজ রোহিঙ্গার কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে দুই লক্ষাধিক রোহিঙ্গার মধ্যে মাত্র এক লাখ ৬০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা পরিবার বর্তমানে রেশন নিচ্ছে।
রোহিঙ্গাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থার সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি) সূত্রে জানা গেছে, শিবিরগুলোতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতির আওতায় আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা রয়েছে ১১ লাখ ১৮ হাজার।
অথচ বর্তমানে শিবিরে রোহিঙ্গার হদিস মিলছে ৯ লাখ ১৫ হাজার। আরও দুই লাখ রোহিঙ্গার হদিস না মেলায় শরণার্থী কর্তৃপক্ষের মাঝেও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।