গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন বলেছেন, ভালোবাসা দিবসের একটা অর্থনীতি আছে ঠিকই। তবে এর একটি রাজনৈতিক দিকও রয়েছে। ভালোবাসা দিবস পালনের আগে ১৪ই ফেব্রুয়ারী স্বৈরাচারপ্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন হতো।
বৃহস্পতিবার বিবিসি বাংলাকে তিনি আরো বলেন, ১৯৮৩ সালে সেই সময়ের সরকারের শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৪ই ফেব্রুয়ারিতে স্মারকলিপি দিতে শিক্ষার্থীরা মিছিল করে সচিবালয়ের দিকে যাবার সময় পুলিশ গুলি চালায়। এতে জাফর, জয়নাল, মোজাম্মেল, আইয়ুব ও দীপালি সাহাসহ ১০জন নিহত হন। অনেকে নিখোঁজ হন। এই রাজনৈতিক ঘটনা ঢেকে ফেলেছে বিরাজনৈতিক একটি দিবস।
তিনি বলেন, বিরাজনীতিকরণের এই ধারা বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনেরা অব্যাহত রেখেছে নিজেদের স্বার্থে। তবে ছাত্র সংসদগুলো চালু থাকলে সেটি হতে পারতো না, কারণ ছাত্র সংসদ দিবস পালনের মধ্য দিয়েও রাজনৈতিক ঘটনা বিস্মৃত হতে দিত না।
তিনি জানান, বাংলাদেশ বা এ অঞ্চলে এটি খুব পুরনো ব্যপার নয়, কারণ এই সময়েই শুরু হয় বসন্ত ঋতু। বসন্ত ফুল ফোটার সময়, সেই সাথে বসন্ত প্রেমের সময় বলেও প্রচলিত আছে। বাংলাদেশে ভালোবাসার প্রকাশ নিয়ে এখনো অনেক সামাজিক ট্যাবু আছে। দিনটি কেন্দ্র করে শুভেচ্ছা কার্ড, ফুল, চকোলেট বা উপহারসামগ্রী বিনিময় হয়। বাংলাদেশে ভালোবাসার প্রকাশ খুব স্বাভাবিক ব্যাপার না, যে কারণে মানুষ খুব স্বচ্ছন্দে প্রকাশ্যে ভালোবাসার কথা বলে না।
তিনি জানান, ভালোবাসা দিবস নিয়ে নানা রকম প্রচার আছে, কিন্তু এখনো এখানে দিবসটি সেভাবে পালন হয় না। কারণ পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে ছোট বাচ্চারাও যেভাবে কার্ড বানায়, ফুল বা চকলেট দিয়ে উদযাপন করে, সেটা বাংলাদেশে হয় না। ফলে দিবসটিকে যতোটা বানিয়ে তোলা হচ্ছে, ততোটা উদযাপন হয় না। বরং এখন একে কেন্দ্র করে নানা রকম বাণিজ্যও গড়ে উঠেছে। গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে এই দিবসটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরাই বেশি উৎসাহী এই দিনটি পালনের ব্যপারে। তবে তা মূলত শহরকেন্দ্রিক।