একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর রাজনীতিতে বেশ চাপে আছে বিএনপি। আজ-কালের মধ্যে বিএনপির আরও তিনজনের শপথ নেয়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ যুগান্তরকে বলেন, বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতিতে বিএনপি কিছুটা বিব্রত।
গণফোরামের দুই প্রার্থীর শপথের পর বিএনপির একজনও শপথ নিয়েছেন। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে শপথ নেয়ায় বিরোধী শিবিরে অস্বস্তি সৃষ্টি হয়েছে।
তবে শপথ নেয়ার ক্ষেত্রে সরকারের চাপ রয়েছে বলে মনে করছেন বিএনপির অনেকে। যদিও সরকার তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম দাবি করেন, শপথ নেয়ার ব্যাপারে সরকারের দিক থেকে নিঃসন্দেহে চাপ রয়েছে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তারা এই ধরনের চেষ্টা করে থাকে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের মতে, বিএনপি হল একটা বড় বটগাছ। এখান থেকে দু-একটা পাতা ঝরে গেলে কিছু যায় আসে না।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা অনেকটা বিব্রত ও অস্বস্তিতে রয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি সামাল দিতে নড়েচড়ে বসেছেন দলটির হাইকমান্ড।
এক এমপি শপথ নেয়ার পরপরই বাকিদের সঙ্গে কথা বলেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা। বাকিরা যাতে শপথ না নেন সে ব্যাপারে নেয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ।
শনিবার রাতে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা পরিস্থিতি মোকাবেলায় করণীয় চূড়ান্তে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।
তবে দলের একটি সূত্র জানায়, হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত বা অনুরোধ উপেক্ষা করেও আরও কয়েকজন শপথ নিতে পারেন।
জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে নির্বাচিত উকিল আবদুস সাত্তার বলেন, যারা বিপদের মধ্যেও ঝুঁকি নিয়ে ভোট দিয়েছিলেন, তাদের থেকে সংসদে যাওয়ার চাপ আছে। যারা জেল-জুলুম-হামলা-মামলা উপেক্ষা করে তার জন্য এলাকায় কাজ করেছেন তাদের জন্য হলেও সংসদে যেতে চান।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ থেকে নির্বাচিত আমিনুল ইসলাম জানান, শপথ না নিলে তিনি এলাকায় যেতে পারবেন না। জনগণের দাবি যেন সংসদে যাই। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে এখনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। দলীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মাত্র আটটি আসনে জয়লাভ করে। গণফোরাম থেকে নির্বাচিত দু’জন এমপি- মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া-কমলগঞ্জ) আসনের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও সিলেট-২ আসনের মোকাব্বির খান ইতিমধ্যে শপথ নিয়েছেন।
অনেকেই মনে করেন, এর পেছনে গণফোরামের শীর্ষ নেতাদের ইন্ধন রয়েছে। গণফোরামের শীর্ষ নেতাদের কর্মকাণ্ডে তাই মনে হচ্ছে।
ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর থেকেই ড. কামাল হোসেনের ভূমিকা নিয়ে বিএনপির অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেন। বিশেষ করে নির্বাচনের আগের দিন ভোট কারচুপির অভিযোগ উঠলেও ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা হয়ে তিনি এর প্রতিবাদে কোনো উদ্যোগই নেননি।
উল্টো নির্বাচনের দিন নিজের ভোট দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, এখন পর্যন্ত ভোট মোটামুটি সুষ্ঠু হয়েছে। নির্বাচনে যাওয়া, শেষ পর্যন্ত বিএনপিকে নির্বাচনে রাখা এবং গণফোরামের দুই এমপির শপথের বিষয়টি একই সূত্রে গাঁথা বলেও তারা মনে করেন।
বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের অনেক নেতার অভিযোগ, শপথ নেয়ার পর সুলতান মনসুরকে বহিষ্কার করেই দায়িত্ব শেষ করে গণফোরাম।
কিন্তু তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে স্পিকার বা নির্বাচন কমিশনে কোনো চিঠি দেয়া হয়নি। মনসুরকে লোক দেখানো বহিষ্কার করা হলেও মোকাব্বিরের ক্ষেত্রে সেটাও করা হয়নি। শপথ নেয়ার পর শোকজ করেই দায়িত্ব শেষ করেন গণফোরামের নেতারা।