জনগণের সংগ্রাম কখনও ব্যর্থ হয়নি জয়ী আমরা হবই: মির্জা ফখরুল

 

- Advertisement -

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জনগণের সংগ্রাম কখনও ব্যর্থ হয়নি। আমরা জয়ী হব। ন্যায়ের জয় অবশ্যই হবে। অন্যায় পরাজিত হবে। রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) একাংশের বার্ষিক কাউন্সিলে তিনি একথা বলেন।

ফখরুল বলেন, ‘সব সময় যে সব আন্দোলন সফল হবে এটা নাও হতে পারে। ফ্যাসিবাদী শক্তির সঙ্গে গণতান্ত্রিক শক্তি যখন লড়াই করে তখন আপনাকে মনে করতে হবে সেই আন্দোলন সহজ ও সাধারণ সংগ্রাম নয়। বুঝতে হবে ১৯৭১, ’৫২, ’৪৭ আর বর্তমান সময় এক নয়। কোন রাস্তায় গেলে আমরা গণতান্ত্রিকভাবে একটি পরিবর্তন আনতে সক্ষম হব তা বুঝতে হবে।’

রাজনীতিবিদরা সব সময় খারাপ নন- মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, ‘রাজনীতিবিদরা সব সময় শুধু স্বার্থের জন্য কাজ করেন না। তারা ত্যাগ স্বীকার করেন। ত্যাগ স্বীকার করেন বলেই বড় জিনিস অর্জন করা সম্ভব হয়। আমরা যারা রাজনীতি করছি, অনেক আরাম-আয়েশে রাজনীতি করছি- একথা যদি ভেবে থাকেন, তাহলে ভুল করছেন। গণতন্ত্রের জন্য ১৯৫২ সাল থেকে এ দেশের রাজনীতিবিদরা অনেক কষ্ট, ত্যাগ স্বীকার করেছেন, কারাগারে গেছেন, অনেকে নিহত হয়েছেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেই নির্যাতন আরও বেড়েছে। গণতন্ত্র ধ্বংস করার জন্য সেই প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করে গণমাধ্যমের ওপর পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রণ নেয়া হয়েছে।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘আজকে রাজনীতিটা হচ্ছে না। অনেকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, ব্যবসা-বাণিজ্য, বাড়িঘর শেষ হয়েছে এবং অনেককে প্রাণও দিতে হয়েছে।’

ফখরুল বলেন, ‘গণতন্ত্র কখনও সুষ্ঠু ও অবাধ হতে পারে না, যদি একটি শক্তিশালী, মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যম না থাকে। দুর্ভাগ্য, স্বাধীনতার ৪৮ বছর পার হলেও বাংলাদেশে গণমাধ্যম স্বাধীন করতে পারিনি এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অর্জন করতে পারিনি। এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। কারণ, দেশে গণতন্ত্র না থাকলে সংবাদ মাধ্যমেও স্বাধীনতা থাকে না।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী’ সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বিচার ব্যবস্থা ও প্রশাসন দখল করে নিয়েছে। গণমাধ্যমের মালিকানা পুরোপুরিভাবে তারা নিয়ন্ত্রণ করছে। সংবাদ মাধ্যমের সংগঠনকে বিভক্ত করে দিয়ে তারা সেখানেও পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা যেমন আপনাদের সমস্যা বুঝি। ঠিক একইভাবে আমাদের সমস্যাগুলো আপনারা অনুধাবন করার চেষ্টা করবেন। সাংবাদিকরা পত্রিকায় এক কলাম লিখে দিলেই আমার সারা জীবনের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেতে পারে। তার আগে আপনি আমার সঙ্গে কথা বলবেন। কিন্তু অনেকে কষ্ট করে সেটুকুও করেন না। বোঝার চেষ্টা করেন না। নিজের একটা ধারণা থেকে সেটা বলে দেন। এটা দল, রাজনীতি এবং দেশের যে অবস্থা, সে অবস্থার ক্ষতি করছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে জানি, অনেক সংবাদকর্মীর কাজ নেই। অনেকে অত্যন্ত আর্থিক কষ্টে আছেন। এটাই হচ্ছে এখনকার রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও রাজনীতির পরিণতি। আমাদের বহু ছেলে আছেন যারা ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল বা বিএনপি করেন। তারা ঢাকায় রিকশা চালাচ্ছেন, হকারি করছেন। অনেকে কাজ না পেয়ে আত্মহত্যা করছেন। এটা বাস্তবতা।’

তিনি বলেন, ‘আজকের এ সংকট আওয়ামী লীগ সৃষ্টি করেছে। এটা নতুন নয়। ১৯৭২ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল তখন এ অবস্থা তৈরি করেছিল। ওই সময়ে ক্ষমতাসীন দল থেকে একটি বড় অংশ বেরিয়ে গিয়ে জাসদ তৈরি করেছিল, তারা সরকারের বিরোধিতা করেছিল। ওই সময়ে জাসদের অসংখ্য নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল। যারা বাম রাজনীতি করেছেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন তাদের অনেককেই হত্যা করা হয়েছিল। তখন যারা সত্য কথা বলতেন তাদের কারাগারে নেয়া হতো। আমরা আওয়ামী লীগকে ভালোভাবে চিনি, সমস্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে চিনেছি, আমরা জীবন দিয়ে চিনেছি- আমরা জানি আওয়ামী লীগ কি?’

কারাবন্দি খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাকে জোর করে আটক করে রাখা হয়েছে। আওয়ামী লীগ চাচ্ছে কারাগারে তার মৃত্যু হোক। এজন্য সঠিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না।’

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মজিবুর রহমান বলেন, ‘আজকে মানুষের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই, হত্যা-গুম-খুন হচ্ছে। যারা গুম হচ্ছে, তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে গুম-খুনের দেশ বাংলাদেশ। এখন আমাদের সময় এসেছে সত্য কথা বলার, হক কথা বলার। হক কথা বলার জন্য যে চেষ্টা করা দরকার সেটা আমাদের করতে হবে।’

বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, আজ মিডিয়ার স্বাধীনতা নেই, সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নেই, রাজনীতিবিদদের স্বাধীনতা নেই। এ অবস্থার পরিবর্তনে অবশ্যই আমাদের শপথ নিতে হবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার।

সাংবাদিক নেতা শফিউল আলম দোলন, আহমেদ মতিউর রহমান ও জিএম আশেকুল্লাহর পরিচালনায় কাউন্সিলে বিএফইউজের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, সাবেক মহাসচিব এমএ আজিজ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামালউদ্দিন সবুজ, ডিইউজের কাদের গনি চৌধুরী, চট্টগ্রামের শাহ নেওয়াজ, কুমিল্লার রমিজ খান, কক্সবাজারের মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম, দিনাজপুরের জিএম মঈনুদ্দিন হিরু, কুষ্টিয়ার আবুল বাশার বাচ্চু, ময়মনসিংহের এম আইয়ুব আলী, খুলনার রাশেদুল ইসলাম, গাজীপুরের এইচএম দেলওয়ার, বগুড়ার মির্জা সেলিম রেজা, কাফী কামাল, তরিকুল ইসলাম তারেক প্রমুখ বক্তব্য দেন। পরে বিএফইউজের কর্ম অধিবেশনে সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। যুগান্তর

সর্বশেষ