ক্ষমতাধরদের পকেটে বছরে ১২শত কোটি টাকা

 

- Advertisement -

প্রিয় সংবাদ ডেস্ক:: রাজধানীর ৫ শতাধিক বস্তিতে বিদ্যুৎ গ্যাস ও পানির অবৈধ সংযোগ দিয়ে ক্ষমতাধররা বছরে হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রায় ১২’শত কোটি টাকা। বৈধভাবে সংযোগ দেয়া হলে এ অর্থ জমা হতো সরকারের কোষাগারে। কিন্তু বিদ্যুৎ, গ্যাস ও ওয়াসার এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে স্থানীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা অবৈধ সংযোগের এই টাকা পুড়ছেন নিজেদের পকেটে। এর একটি অংশ যাচ্ছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পকেটেও। বিষয়টি জেনেও নির্বিকার ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ (ডেসা), তিতাস গ্যাস ও ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। আর হাত গুটিয়ে বসে আছে মন্ত্রণালয়ও।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানী ঢাকার অন্তত পাঁচ শতাধিক বস্তির কয়েক লাখ কাঁচা ঘড়ে রয়েছে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির অবৈধ সংযোগ। এসব সংযোগ বৈধ হলে সরকারি কোষাগারে প্রতি মাসে জমা হতো শত কোটি টাকা। বছরে জমা হতো প্রায় ১২শত কোটি টাকা। অথচ ডেসা, তিতাস গ্যাস ও ওয়াসার এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতি আর অনৈতিকতায় এ আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে মিরপুরের ঝিলপাড় চলন্তিকা বস্তির প্রায় সাড়ে ৩ হাজার টিনসেট ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছিলো। গ্যাস ও ওয়াসার সংযোগ দেয়া হয়েছিলো ১ হাজারেরও বেশি। এসব বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সংযোগে স্থানীয় ক্ষমতাধরদের মাসে আয় হতো ১০ লাখ টাকার মত। সরকারের আলোচিত তিন সেবা প্রতিষ্ঠানের অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মত এ অবৈধ আয়ের একটি অংশ যায় সংসদ সদস্যের পকেটেও।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, রাজধানীর বস্তিগুলোর অবৈধ বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগের বিষয়টি ডেসা এবং তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ জেনেও সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। ফলে সরকারের সেবা খাতের এই দুটি প্রতিষ্ঠান বছরে অন্তত ১২’শ কোটি টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিষয়টি অবগত হয়েও হাত গুটিয়ে বসে আছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্তা ব্যক্তিরা।

এ বিষয়ে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ বি এম আব্দুল ফাত্তাহ দৈনিক জাগরণকে বলেন, ‘বস্তিতে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ বন্ধে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসবের সঙ্গে সরকারি কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত তাদের তালিকা করা হয়েছে। আন্ত:মন্ত্রণালয়ের পরবর্তী বৈঠকেই বিষয়টি উত্থাপন করে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

অনুসন্ধানে দেখা যায়, রাজধানীর সবচেয়ে বড় বস্তি হিসেবে পরিচিত গুলশানের কড়াইল বস্তি, বৌবাজার বস্তি ও জামাইবাজার বস্তি, মহাখালির সাততলা বস্তি, খিলগাঁও ঝিলপাড় বস্তি, বাসাবোর ওহাব কলোনী বস্তি, মগবাজারের মধুবাগ ঝিলপাড় বস্তি, শন্তিবাগ রেললাইন বস্তি, মালিবাগ বস্তি, মোহাম্মাদপুরের লাট মিয়ার বস্তি, রায়ের বাজারের সাদেক খান বস্তি ও বৌ-বাজার বস্তি, হাজারীবাগ বস্তি, মিরপুর কালশির রাজু বস্তি, মগবাজার-তেজগাঁওর রেললাইন বস্তিতে স্থায়ীভাবেই রয়েছে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ। শুধু নেই কোনো মিটার। কি নেই এসব বস্তিতে? একাধিক বাতি, বৈদ্যুতিক চুলা, টিভি, ফ্রিজ, কারো ঘরে রয়েছে ভাড়ার এসিও। শুধু প্রতি ঘরে ঘরে নেই গ্যাসের চুলা আর বাথরুম। পাঁচ-ছয়টি পরিবারের রয়েছে তিন-চারটি চুলা ও দু’টি বাথরুম।

আইসিডিডিআরবি’র হিসাবে অনুযায়ী ১৯৯১ সালে ঢাকায় বস্তি ছিলো- ২,১৫৬টি। পাঁচ বছর পর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩,০০৭টিতে। আর ২০০৫ সালে তা ৪,৯৬৬-তে দাড়ায়। গত দশ বছরে বস্তির এই সংখ্যা কত বেড়েছে, এই পরিসংখ্যান না পাওয়া গেলেও, পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে এটা প্রায় নিশ্চিত করে বলা যায়। অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের ক্ষমতাধররা বড় বড় বস্তিগুলোতে তাদের মাদকের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতেই বস্তিগুলোর নিয়ন্ত্রণ করেন।

এ বিষয়ে ডেসকোর গুলশান জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন ভূইয়া দৈনিক জাগরণকে বলেন, বস্তিতে আমাদের কোনো বিদ্যুতের সংযোগ নেই। যা আছে এটির চারপাশে। সেখানে কিছু পোল মিটার আছে, সেগুলোর মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।

আর তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশনের মহাখালী জোনের ডিজিএম রতন চন্দ্র দে দৈনিক জাগরণকে জানান, ‘কড়াইল বস্তিতে তাদের কোনো প্রকার গ্যাসের বৈধ সংযোগ নেই। গত আড়াই বছরে তিনি আসার পর বস্তিতে পাঁচবার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নে অভিযান চালিয়েছেন। কিন্তু দিনে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলে রাতে আবার একটি পক্ষ সংযোগ দিয়ে দেয়। ফলে এই সংযোগ কিছুতেই স্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন করা যাচ্ছে না। জাগরন

সর্বশেষ