প্রিয় সংবাদ ডেস্ক:: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে গত দুদিনে দলীয় ৭ সংসদ সদস্যের সাক্ষাতের পর তার মুক্তি নিয়ে ফের গুঞ্জন তৈরি হয়েছে। তবে দলের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, এটি নিছক সাক্ষাৎ ছিলো। সাক্ষাতে এমপিদের কয়েকজন যে কোনোভাবে, প্রয়োজনে সরকারের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে প্যারোল এবং পরে বিদেশ যাওয়ার পক্ষে মত দিলেও তা নাকচ করে দেন খালেদা জিয়া। তিনি তাদের বলেন, আল্লাহ যে ক’দিন বাঁচিয়ে রেখেছেন, ততদিন আছি। এভাবে মুক্তি নেব না।-দৈনিক আমাদের সময়
গতকাল বুধবার বিএনপির চার এমপি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আগের দিন আরও তিন এমপি দেখা করেন তার সঙ্গে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এমপিদের দুই দফায় সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া গতকাল সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের
সঙ্গে দেখা করেন বিএনপিদলীয় এমপি হারুনুর রশীদ। তার পরই খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন ছড়ায়। অবশ্য ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সবই আদালতের বিষয় (খালেদা জিয়ার মুক্তি)। আদালত মুক্তি দিলেই তারা চিকিৎসার বিষয়ে কথা বলবেন।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির একজন এমপি গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, ম্যাডামের সঙ্গে আমাদের সাক্ষাতের বিষয়টি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির অনেক সদস্যই জানেন।
গতকাল বিকালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মোশাররফ হোসেন, জিএম সিরাজ, জাহিদুর রহমান জাহিদ ও রুমিন ফারহানা। তাদের একজন আমাদের সময়কে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা, দেশের রাজনীতি ও দলীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা প্যারোলে মুক্তির বিষয় উত্থাপন করা মাত্র তিনি বলেছেন, ‘এসব তো আমি বলিনি, কে বলেছে? আমি তো কোনো অপরাধ করিনি। তা হলে প্যারোল চাওয়ার প্রশ্ন আসছে কেন?’
আগের দিন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে এমপি হারুনুর রশিদ বলেছিলেন, ‘আজ জামিন পেলে কালই চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাবেন।’ গতকাল এ বক্তব্য খালেদা জিয়ার নজরে আনেন একজন এমপি। সাক্ষাৎ করতে যাওয়া বিএনপির একজন এমপি জানান, ‘এ প্রসঙ্গে কথা তোলা মাত্র ম্যাডাম বলেছেন, এসব ঠিক নয়। আমি কোথায় চিকিৎসা নেব না নেব, সেটা আমার চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নেব।’ একজন এমপির সঙ্গে একান্তে বেশ কিছুক্ষণ কথাও বলেছেন খালেদা জিয়া।
সাক্ষাৎ শেষে জিএম সিরাজ বলেন, আমাদের নেত্রী রাজনৈতিক বন্দি। আমরা বিশ্বাস করি, এখানে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দরকার। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছাড়া ম্যাডামের মুক্তি হবে না। খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবেন কিনা এমন প্রশ্নে সিরাজ বলেন, এটা তার ও তার পরিবারের সিদ্ধান্ত। আগে তো তার মুক্তি দরকার।
যেখানে পরিবারের সদস্যদের দেখা করতে বিলম্ব হচ্ছে, সেখানে আপনারা সাক্ষাৎ পাচ্ছেনÑ সরকার আপনাদের পাঠাল কিনা এমন প্রশ্নে রুমিন ফারহানা বলেন, একদমই না। প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি সরাসরি প্যারোলের বিষয়ে ম্যাডামকে বলেছিলাম। ম্যাডাম আমাকে বলেছেন, জামিন আমার ‘হক’। দেশের আইন অনুযায়ী আমি এখনই জামিন লাভের যোগ্য। সুতরাং এখানে প্যারোলের প্রশ্ন কেন আসবে? খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে রুমিন ফারহানা বলেন, ম্যাডামের শুধু হাত ধরেছিলাম, তাতেই তিনি ব্যথায় কুঁকড়ে উঠেছেন। তিনি অন্যের সাহায্য ছাড়া নড়াচড়া করতে পারেন না।
সাক্ষাতের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে ধন্যবাদ জানান জিএম সিরাজ। তিনি বলেন, একসঙ্গে ৪ জনের বেশি উপরে (কেবিন ব্লক) যাওয়ার বিধান নেই। সে জন্য দ্ইু দফায় আমরা ৭ জন নেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। মঙ্গলবার হঠাৎ করেই তিন এমপি হারুনুর রশীদ, উকিল আবদুস সাত্তার ও আমিনুল ইসলাম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে হাসপাতালে যান।
খালেদার বগুড়ার আসনের বর্তমান এমপি জিএম সিরাজ আরও বলেন, ‘আমরা সাতজন সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলতে চাই, আপনি নিজে একবার আসুন, দেখে যান। আমরা নিশ্চিত-আপনি যদি নিজে এসে দেখেন, তা হলে আপনার মানবিকতাবোধ জাগ্রত হবে, আপনার মায়া হবে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আপনার কাছে আমাদের সবিনয় অনুরোধ, আপনি আমাদের ম্যাডামের জামিনের জন্য পদক্ষেপ নিন। আপনি আমলাতান্ত্রিক পরামর্শ না নিয়ে দয়া করে রাজনৈতিক দূরদর্শিতায় আমাদের নেত্রীকে ছেড়ে দিন, জামিনের ব্যবস্থা করুন।
এদিকে সেতুমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে এমপি হারুন বলেন, নানা রোগে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। আগে তার মুক্তি হোক। তার পর দেখা যাবে চিকিৎসা দেশে হবে নাকি বিদেশে। সামর্থ্য থাকলে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা কেন বিদেশে হবে না।
খালেদা জিয়ার জামিন ও বিএনপির এমপিদের সাক্ষাৎসহ সার্বিক বিষয়ে ওবায়দুল কাদের সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, দুর্নীতি মামলায় কারাবন্দি খালেদা জিয়া জামিন পেলে যে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চান, সে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। হারুনুর রশীদ বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে বলতে অনুরোধ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী এটিকে আদালতের বিষয় বলেছেন। তিনি বলেছেন, আদালতে জামিন না হলে কীভাবে দেখব? হারুনুর রশীদ নিজেও এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানান ওবায়দুল কাদের।
তিনি আরও বলেন, জামিন পেলে চিকিৎসকরা যদি খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার পরামর্শ দেন, তখনই সরকার বিষয়টি দেখবে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে তো আমাদের কোনো শত্রুতা নেই।