মো.মুক্তার হোসেন,বাবু : চট্টগ্রামে প্রতিপক্ষের দায়ের করা ১০ টি মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হচ্ছে একটি নিরীহ পরিবার। এসব মামলায় গ্রেফতার হয়ে মুনসুরাবাদস্থ ইউনাইটেড স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেনীর শিক্ষার্থী গণিত পরীক্ষা দিতে পারেনি বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। একই সাথে কারাগারে থাকাকালীন পেশাগত ক্ষমতা বলে কোর্ট হাজতে ওই শিক্ষার্থীকে ভীষণ মারধর করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা ১২ টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ আনা হয়। চট্টগ্রাম মহানগরীর আকবরশাহ থানাধীন লতিফপুর কালিরহাটের মোঃ মতিউর রহমানের পুত্র মো. জাহাঙ্গীর আলমের পরিবার ও আত্মীয় স্বজন উক্ত সম্মেলনের আয়োজন করে।
লিখিত বক্তব্যে জাহাঙ্গীর বলেন, চট্টগ্রাম জেলার আইনজীবি সমিতির সদস্য, নোয়াখালীর সুধাররাম থানার ইসলামীয়া মাদ্রাসার খলিসাটোলা গ্রামের নুরনবী পাটোয়ারীর পুত্র এড. আফতাব উদ্দিন (আলতাফ) এর একের পর এক হয়রানিতে অতিষ্ট হয়ে আজ এখানে এসেছি। বিগত দিন থেকে ওই আইনজীবিকে এসব হয়রানি বন্ধ করতে অনেক কাকুতি মিনতি করেও তার কাছ থেকে কোন সদূত্তর পাইনি। বরং একের পর এক মামলা দেয়া হচ্ছে আমাদের বিরুদ্ধে। এছাড়া এসবের বিচার চেয়ে চট্টগ্রাম আদালত ও থানা পুলিশের দ্বারস্থ হয়েও কোন প্রতিকার পাইনি।
জাহাঙ্গীর বলেন, চট্টগ্রামস্থ লতিফপুর এলাকার সীতাকুন্ড মৌজার রেজিষ্ট্রীকৃত বায়না দলিল মূলে ১০ শতক ক্রয়কৃত আমার নামে জমি ঘেরা-বেড়া দিয়ে রাখলে গত বছরের ১৩/১১/২০১৭ এসবগুলো ভাংচুর করে সাইবোর্ড নিয়ে যায় দুবৃর্ত্তরা। সাথে সাথে আকবরশাহ্ থানায় ঘটনাটি অবহিত করিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে আসামী মোঃ মাসুদ আল (২৭) ও আইয়ুব আলী (৩১) কে গ্রেফতার করলেও বাকি ১৫-১৬ জন পালিয়ে যান। গ্রেফতারকৃত দুই ব্যক্তিকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা এড.আফতাব উদ্দিন আলতাফ এর ভাড়া করা লোক বলে জানায়। পরে এদের পুলিশ আদালতে চালান দেয়। এরপর আমাদের পিছু নেয় ওই আইনজীবি। এক পর্যায়ে আমাকে ও আমার পরিবারকে বিভিন্ন ফৌজদারি মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিতে থাকে।
জাহাঙ্গীর আরো বলেন, গত বছরের ২০ নভেম্বর চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির বরাবরে এবং গত ১৯ মার্চ বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে এড. আফতাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করি। জেলা আইনজীবী সমিতি এড.মো. খোরশেদ আলমকে দায়িত্ব দেন উভয় পক্ষের দলিল পর্যালোচনা করে আইনগত মতামত প্রদান করার জন্য। এড.মো. খোরশেদ আলম ওই বছরের ১০ ডিসেম্বর আমি উক্ত জায়গার স্বত্ব-স্বার্থ লাভ করবে মর্মে আইনগত অভিমত প্রদান করেন। এই অভিমত জানার পর এড. আফতাব আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে আমার উপর, আমার পরিবার ও বিদ্যালয়ের অধ্যায়নরত সন্তানের বিরুদ্ধে একে একে আরো মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা সমূহ দায়ের করে হয়রানি করছে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম আদালতে সিআর মামলা (নং-৯৬৮/২০১৪) মামলায় ১২ বছর বয়সী ছেলে নয়নকে আসামী করা হয়েছে । ছেলেকে স্বাক্ষী বানিয়ে ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়। উক্ত মামলায় সকল স্বাক্ষীগণের নাম নথিতে কম্পিউটারে লিখিত থাকলে আমার ছেলের নাম হাতের লিখনী দিয়ে পি-ডব্লিউ ইস্যু করা হয়। এছাড়া আকবরশাহ্ থানা সেকেন্ড অফিসার একটি মিথ্যা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আমাদেরকে থানায় যেতে নোটিশ প্রেরণ করলে গত বছরের ২৭ নভেম্বর আমার স্কুল পড়ুয়া ছেলে মোঃ জালাল উদ্দিন (নয়ন) সহ থানায় যাই। এ সময় এই মিথ্যা মামলার বাদী উপস্থিত ছিলনা। তখন এড. আফতাব পুলিশকে একটি গ্রেফতারি পরোয়ানা হাতে দিয়ে থানা থেকে চলে যায়। পরে পুলিশ আমার ছেলেকে গ্রেফতার করে আদালতে চালান দেয়। আমার ছেলে কারাগারে থাকাকালীন ওই আইনজীবি তার পেশাগত ক্ষমতা বলে কোর্ট হাজতে আমার পুত্রকে ভীষণ মারধর করে। পরে ওই বছরের ২৯ নভেম্বর আদালতে থেকে আমার ছেলে জামিন লাভ করলেও জামিন পায়নি। পরে জেল কারাগারে যোগাযোগ করে জানতে পারি ৭ম যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদলতে আরো মামলা আছে মর্মে ওই আইনজীবি আর্জিতে স্বাক্ষর করে কারাগারে পাঠালে আমার ছেলেকে মুক্ত করতে পারিনি। এভাবে একের পর এক মামলা দাঁড় করিয়ে আমার ছেলেকে, আমাকেও কারাগারে আটকে রাখে।
এর মধ্যে একটি মিথ্যা চেক মামলায় পর্যালোচনা করে দেখা যায় মামলাটি যাহার মূল বিবাদী এড. আফতাব এর পার্টনার মিতুয়া টেইলার্স এর নামে চেকটি। যাহার প্রোপাইটর মো. ফেরদৌস। উক্ত মামলায় আমাকেও গ্রেফতার করে নিয়া জেল হাজতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে আমি জামিনে বেরিয়ে আসি। এড. আফতাব ইতিপূর্বে পাহাড়তলী থানায় লতিফপুর নিবাসী মোঃ ওসমান গংদের নামে অনেকটি মিথ্যা মামলা করেন। কিছু সম্পত্তিতে সীতাকুন্ড চট্টগ্রাম রেকর্ড অফিস পুড়ে যাওয়ার কারণে ১৯৬২ হইতে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত কোন দলিলের নকল কপি না পাওয়ার কারণে জাল দলিল তৈরী করিয়া তাদের ও পরিবারদের বিরুদ্ধে একইভাবে বিভিন্ন ফৌজদারি মামলা করে।
এক পর্যায়ে তাহাদেরকে ঘরচ্যুত করে অনেক জায়গা-জমি দখল করে বায়না বিক্রি করিয়া অনেক সম্পদশালী হয়ে উঠেছে এই আইনজীবি। আমাদের স্থানীয় আকবরশাহ্ থানায় এস.আই জাকির (নোয়াখালী) এড. আফতাব এর আত্মীয় হওয়ায় শেষ পর্যন্ত কোন উপায়ন্তর না দেখে তাহার মাধ্যমে আপোষ করার প্রস্তাব দেয়। জাকির আমাকে তার সাথে আপোষ করতে বলে এবং না করলে আমাকে আরও একাধিক মামলায় জড়িয়ে দিবে বলেও জানায়। আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে বললেন, বেশি বারাবরি করিও না করলে আরও ৬ হতে ৭টি মামলা দিয়ে আদালতে চালান দিবে বলেন।
তিনি বলেন, এড. আফতাব একজন আইনজীবী হওয়ায় তিনি নিজে এবং তার জুনিয়রের মাধ্যমে আমার, আমার সন্তান, আমার পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম আদালত ও বিভিন্ন থানাতে ২২ টি মামলা দায়ের করেছে। এসব হয়রানি থেকে বাঁচতে আবারো গত ৮ ফেব্রুয়ারী চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি বরাবরে আরো একটি অভিযোগ দায়ের করি। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তিনি সঠিক তদন্ত পূর্বক ওই আইনজীবি ও তার চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন জানান। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরের বাবা মতিউর রহমান, মা খায়রুন নেছা, স্ত্রী শাহানাজ বেগম, স্কুল পড়ুয়া সন্তান মোঃ জালাল উদ্দিন (নয়ন) ,জাহাঙ্গীরের ভাগিনা মো.রুবেলসহ আত্বীয় স্বজনরা।