প্রিয় সংবাদ ডেস্ক:: তৃণমূল নেতাদের চাপে কেন্দ্রীয় নেতারা এবার চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন জোরদার করতে বাধ্য হচ্ছেন। ইতোমধ্যে পেশাজীবীরা খালেদা জিয়ার মুক্তির লক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ (শনিবার) জাতীয় প্রেসক্লাবে আইনজীবী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়াও সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে বৃহত্তর সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিএনপিও বিক্ষোভ-প্রতিবাদ, সভা-সমাবেশের পাশাপাশি প্রয়োজনে স্বেচ্ছায় কারাবরণ কর্মসূচি ঘোষণা করবে। ইনকিলাব
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দি আছেন ৭৫ বছর বয়সী বেগম খালেদা জিয়া। চিকিৎসার জন্য গত এপ্রিল থেকে তিনি রয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা ভাল নেই বলে দলীয় এমপি ও পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। চলতি মাসের শুরুর দিকে বিএনপি দলীয় সাতজন সংসদ সদস্য বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। এছাড়া তার বোন, ভাই এবং স্বজনরা দুই দফা দেখা করেছেন। গত ১১ অক্টোবর এবং সর্বশেষ শুক্রবার বোন সেলিমা ইসলাম বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। সাক্ষাত শেষে তিনি জানান, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের তুলনায় অনেক বেশি খারাপ। নিজ হাতে খাবারও তুলে খেতে পারছেন না। অন্যের সাহায্য ছাড়া দাঁড়াতেও পারেন না। তাঁর এ অবস্থায় দেশের নেতাকর্মীরা উৎকণ্ঠিত। আর তাই সবাই চাচ্ছে খালেদা জিয়ার মুক্তি লক্ষে দ্রুত আন্দোলন কর্মসূচি।
চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বিএনপি এখন পর্যন্ত রাজপথে কোনো জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। এটা কেন্দ্রীয় নেতাদের ব্যর্থতা বলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনে করেন। গত সেপ্টেম্বর মাসে বিএনপি বিভিন্ন বিভাগীয় শহরের সমাবেশ করেছে। প্রতিটি সমাবেশেই নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ঢল ছিলো। চেয়ারপার্সনের মুক্তির লক্ষে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের জোরালো কর্মসূচি ঘোষণার দাবি ছিলো কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে। কেন্দ্রীয় নেতারা কর্মসূচি না দিলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরাই আন্দোলন শুরু করবে, এমন বক্তব্যও অনেকে দিয়েছেন। রাজপথে মিছিল সমাবেশ করার সাহস না থাকলে স্বেচ্ছায় কারাবরণ কর্মসূচি দেয়ারও দাবি জানান অনেক নেতা। তারা বলেন, আমাদের নেতা, গণতন্ত্রের মা। তিনি যদি মিথ্যা মামলায় প্রায় দুই বছর কারাগারে বন্দি থাকতে পারেন, তাহলে আমরা কেন স্বেচ্ছায় কারাগারে যেতে পারবো না। তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাপের মুখে কেন্দ্রীয় নেতারা এবার খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নতুন করে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করতে যাচ্ছেন। বিএনপি চেয়ারপার্সনকে আটকের পর তার আইনজীবীরা সবসময় বলে আসছিলেন, আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে। তবে সময় যত গড়ায় আইনী প্রক্রিয়ায় তার মুক্তির বিষয়টি ততই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। সিনিয়র আইনজীবী এবং দলের নীতিনির্ধারকরা বুঝতে পারেন আন্দোলন ছাড়া বেগম জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব নয়।
এ ব্যাপারে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে এ সরকার সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কারাবন্দি করে রেখেছে। তাই তাকে শুধুমাত্র আইনী প্রক্রিয়ায় মুক্ত করা সম্ভব নয়। তাকে মুক্ত করতে জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য আমান উল্লাহ আমান বলেন, আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। ম্যাডামকে মুক্ত করতে আমরা এবার সর্বাত্মক আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। বিক্ষোভ-মিছিল, সভা-সমাবেশের পাশাপাশি প্রয়োজনে স্বেচ্ছায় কারাবরণ কর্মসূচি নেয়া হবে। সম্প্রতি দলীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতে খালেদা জিয়া মুক্তির বিষয়ে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। একজন এমপি বলেন, জামিনের বিষয়ে কথা এলে তিনি বলেন, জামিন হবে। সরকার আমাকে কতোদিন আর আটকে রাখবে। সংসদ সদস্য জিএম সিরাজ এ বিষয়ে বলেন, নেত্রীর মতো আমরাও আশাবাদী তার মুক্তি হবে। তবে সেটা যতো আগে আমরা করতে পারবো, তার জন্য ততোই ভালো হবে।