spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

রোজা অবস্থায় দাঁতের চিকিৎসা করালে রোজা ভাঙে না

spot_img

 

- Advertisement -

রোজা রাখা অবস্থায় কারো কারো দাঁতে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। ডেন্টাল ক্লিনিকে যাওয়া ছাড়া তখন উপায় থাকে না। এমন জরুরি অবস্থায় দাঁত ও মুখগহ্বরের চিকিৎসা করালে রোজা ভাঙবে কিনা, এ নিয়ে সংশয় থাকে অনেকের মনে। রোজা অবস্থায় দাঁতের সমস্যা থেকে কীভাবে দূরে থাকা যায়, সে সম্পর্কে বলেছেন সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ তায়েফ ডেন্টাল হাসপাতালে কর্মরত বাংলাদেশি দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সিকদার নাজমুল হক। ইমেইলে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অদ্বৈত মারুত

আমাদের সময় : রোজা রাখা অবস্থায় দাঁত ও মুখগহ্বরের চিকিৎসা করালে রোজা ভেঙে যেতে পারে, এমন ভুল ধারণার কারণ কী?

ডা. সিকদার নাজমুল হক : এ ভুল ধারণার কারণ হলো, দাঁতের চিকিৎসায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে রক্তপাতের আশঙ্কা থাকে। ধরা যাক, দাঁত তোলার কথাই। রক্তপাত হতে পারে এতে। মুখগহ্বরের অস্ত্রপচারেও স্বাভাবিকভাবে হতে পারে রক্তপাত। জীবন্ত দাঁতের রুট ক্যানাল চিকিৎসাতেও দাঁতের মজ্জা থেকে রক্তপাত হতে পারে, যদিও মৃত দাঁতের রুট ক্যানেল চিকিৎসায় রক্তপাত হয় না। দাঁতের স্কেলিং বা মাড়ির কিউরেটেজ চিকিৎসায়ও হতে পারে রক্তপাত। রোজা রাখা অবস্থায় দাঁতের কোনো কোনো চিকিৎসায় রক্তপাত হতে পারে বলেই অনেকে তা রোজা ভেঙে যাওয়ার কারণ বলে মনে করে থাকেন।

আমাদের সময় : তা হলে রোজা রাখা অবস্থায় দাঁত ও মুখগহ্বরের চিকিৎসা করালে রোজা ভাঙার আশঙ্কা নেই বলে কি আপনি মনে করেন?

ডা. সিকদার নাজমুল হক : রোজা রাখা অবস্থায় দাঁত ও মুখগহ্বরের চিকিৎসা করালে রোজা ভাঙবে না। এ বিষয়ে ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে মরক্কোর ক্যাসাব্লাঙ্কায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল নবম ফিকাহ মেডিক্যাল সেমিনার। ১৯৯৭ সালের ১৪ থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ইসলামি চিন্তাবিদদের এ সম্মেলনে রোজা রাখা অবস্থায় কী কী চিকিৎসা করলে তা রোজা ভঙ্গের কারণ ঘটাবে না, কী কী চিকিৎসাপ্রক্রিয়ায় রোজা ভঙ্গ হতে পারে এ বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেই পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসার জন্য দাঁতের ড্রিলিং করা, দাঁত তোলা, দাঁত পরিষ্কার করা, মিসওয়াক বা ব্রাশ দিয়ে দাঁত মাজা ইত্যাদি ক্ষেত্রে রোজা ভঙ্গ হয় না। তবে এ সময় যেন পাকস্থলীতে কিছু ঢুকে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

আমাদের সময় : দাঁতের চিকিৎসায় মুখগহ্বরে যে অবশকারক ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়, তা রোজা ভঙ্গের কারণ ঘটাবে কি?

ডা. সিকদার নাজমুল হক : না, অবশকারক ইঞ্জেকশন দিলেও তা রোজা ভঙ্গের কারণ ঘটাবে না। ইসলামি চিন্তাবিদদের মতে, অবশকারক ইঞ্জেকশন নিলে রোজা ভেঙে যায় না। কারণ এ ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে রোগীর শরীরে কোনো পুষ্টি উপাদান প্রবেশ করছে না।

আমাদের সময় : দাঁতের চিকিৎসার সময় পাকস্থলীতে পানি ঢুকে গেলে রোজা ভঙ্গ হবে কী?

ডা. সিকদার নাজমুল হক : এ কথা সত্যি, দাঁতের চিকিৎসার সময় পাকস্থলীতে পানি ঢুকে গেলে রোজা ভঙ্গ হবে। দাঁতের স্কেলিং ও পলিশিংয়ের সময় এবং দাঁত ফিলিং করতে দাঁতে গর্ত তৈরি করার যে যন্ত্র ব্যবহৃত হয়, তা থেকে পানি বেরিয়ে এসে রোগীর পাকস্থলীতে ঢুকে যেতে পারে। এ জাতীয় চিকিৎসার সময় তাই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সাকশান মেশিন ব্যবহার করা হয়, যা মুখের ভেতরের পানি সহজেই শোষণ করে নিতে পারে। ফলে রোগীর পাকস্থলীতে পানি ঢোকার আশঙ্কা নেই বললেই চলে।

আমাদের সময় : রোজা রেখে দাঁত মাজলে রোজা হালকা হবে কী?

ডা. সিকদার নাজমুল হক : রোজা রেখে দাঁত মাজলে, সুতা ব্যবহার করে দাঁতের ফাঁকা স্থান পরিষ্কার করলে (ফ্লোস করা) রোজা হালকা হয়ে যেতে পারে বলে কেউ কেউ ভাবেন। কিন্তু এটিও ভুল ভাবনা। ইসলামি চিন্তাবিদদের মতে, রোজা রাখা অবস্থায় দাঁত মাজলে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। তবে খেয়াল রাখতে হবে, দাঁত মাজার সময় টুথপেস্ট যেন পাকস্থলীতে ঢুকে না যায়। অবশ্য অনিচ্ছাবশত টুথপেস্ট যদি পাকস্থলীতে ঢুকে যায় তা হলে তা রোজা ভঙ্গের কারণ হবে না।

আমাদের সময় : রোজা রাখা অবস্থায় অনেকের মুখেই দুর্গন্ধ দেখা দিতে পারে। এ সমস্যা দূর করতে করণীয় কী?

ডা. সিকদার নাজমুল হক : রোজার সময় মুখের দুর্গন্ধ রোধে সেহরি খাওয়ার পর ভালোভাবে দাঁত পরিষ্কার করতে হবে। টুথব্রাশ বা ডেন্টাল ফ্লোস নামক সুতা ব্যবহার করে দাঁত পরিষ্কার করা যায় সহজেই। জিহ্বাও পরিষ্কার করতে হবে ব্রাশ বা টাং ক্লিনার দিয়ে। জীবাণু প্রতিরোধী মাউথওয়াশও ব্যবহার করা যেতে পারে। যাদের মুখে শুষ্কতা বা জেরোস্টোমিয়া রোগ আছে, তাদের অ্যালকোহলমুক্ত মাউথওয়াশ ব্যবহার করা উচিত।

আমাদের সময় : রোজা রাখা অবস্থায় দাঁতের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে হলে কী করা উচিত?

ডা. সিকদার নাজমুল হক : কারো দাঁতে ক্ষয়রোগ বা ক্যারিজ থাকলে তা রোজার মাসের আগেই ভরাট করে ফেলা উচিত। প্রতি ছমাসে একবার স্কেলিং করে দাঁতে জমে থাকা পাথর পরিষ্কার করা উচিত। বিশেষ করে রোজা শুরু হওয়ার আগে আগে স্কেলিং করিয়ে নিলে রোজাদারদের সুবিধা হবে। যারা মুখে বাঁধাই করা দাঁত পরেন, তা ঠিকমতো ফিট হচ্ছে কিনা, দেখুন। বাঁধাই দাঁত ঠিকমতো ফিট না হলে কিংবা অপরিষ্কার থাকলে সহজেই মুখে ব্যাক্টেরিয়ার বিস্তার ঘটতে পারে। বাঁধাই দাঁতে কোনো সমস্যা থাকলে রোজার আগেই তা ঠিক করিয়ে নিন। সেহরি খাওয়ার শেষ করে দাঁত মাজতে ভুলবেন না। রোজার সময় দাঁতে কোনো সমস্যা দেখা দিলে ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শ নিন।

আমাদের সময় : আপনাকে ধন্যবাদ।

ডা. সিকদার নাজমুল হক : আপনাকেও ধন্যবাদ। সূত্র:আমাদের সময়

spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

সর্বশেষ