দুই পথে মুক্তি তিন পথে আশা

 

- Advertisement -

প্রিয় সংবাদ ডেস্ক:: আশা ভেঙেছে। তৃণমূূলে ক্ষোভ বেড়েছে বিএনপির হাইকমান্ডের ওপর; যারা দলটির সিদ্ধান্তের মালিক। নেতাকর্মীদের ভাষ্য— শীর্ষ নেতারা খালেদা জিয়ার ওপর অকৃতজ্ঞ।

ভবিষ্যৎ ক্ষমতার চিন্তায় বিশেষ মহলের দেখানো লোভ ও সরকারের ছকেই চলছে দল। তাই ‘মুক্ত খালেদা জিয়াকে’ জীবন্ত অবস্থায় পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে গেছে। কারাবন্দির ৬৭৫ দিনেও দলীয় করণীয় বের করতে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি।

গত বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন পর্যবেক্ষণসহ খারিজ করে দেয়ায় দলটির নেতাকর্মীরা এমনই মনে করছেন।

তবে দলটির হাইকমান্ডের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখনো খালেদা জিয়াকে মুক্তির জন্য বেশ কয়েকটি পথ খোলা রয়েছে। এর মধ্যে দুই পথে খালেদা জিয়ার চূড়ান্তভাবে কারাগার থেকে বের হতে পারেন।

প্রথমত. বিএনপি যদি হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দিয়ে সরকারকে ঠেকিয়ে দেয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তাহলে চাপের মধ্যে থেকে সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে বাধ্য হবে।

দ্বিতীয়ত. খালেদা জিয়া যদি মাথানত করে প্যারোলের জন্য আবেদন করেন, তাহলে তিনি মুক্তি পেয়ে যেতে পারেন।

এছাড়া মুক্তির জন্য আরো তিনটি আশা দেখছে দলটি, খালেদা জিয়ার সাবেক সেনাপ্রধানের স্ত্রী, সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী তিনি সুস্থ অবস্থায় হেঁটে কারাগারে গিয়েছেন এখন তিনি স্বাভাবিকভাবে দাঁড়াতে পারেন না, নড়াচড়া করতে পারেন না, বাতের কারণে তার হাত-পা বাঁকাত্যাড়া হয়ে যাচ্ছে— এমন অবস্থায় মানবিক বিবেচনায় নির্বাহী আদেশে তিনি মুক্তি পেতে পারেন।

এছাড়াও দলটির অন্য একটির সূত্রের ভাষ্য, খালেদা জিয়া এখনই বড় সমস্যা রয়েছেন, কিছুদিন পর একেবারে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চলে যাবেন।

এ অবস্থায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ— বিষয়টি উল্লেখ করে ফের উন্নত চিকিৎসার জন্য আবেদন করা হবে। এছাড়া এখনো রিভিউয়ের সুযোগ রয়েছে। দলটি ধারণা করছে, শেষ সময়ে হয়তো সুবিচার পাওয়া যেতে পারে।

আপিল বিভাগে জামিন আবেদন পর্যবেক্ষণসহ খারিজ হয়ে যাওয়ায়, এরপর খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আর কী পথ খোলা আছে এবং বিএনপি কী করবে?

এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার আদালত জামিন আবেদন খারিজ করে যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন, তাতে খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘই হবে। জীবন্ত অবস্থায় বের হওয়া নিয়ে বড় শঙ্কা দেখছে দলটি।

আইনজীবীরাও মনে করছেন, আপিল বিভাগে জামিন আবেদন খারিজ হওয়ায় অন্য আরেকটি মামলায়ও জামিনের পথ আটকে গেছে। কারণ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সঙ্গে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলারও সম্পৃক্ততা রয়েছে। একটি মামলায় সাত বছর আরেকটি মামলায় ১০ বছরের সাজা হয়েছে।

দলটির আশা ছিলো— জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটির জামিন হয়ে গেলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায়ও জামিন পেয়ে যাবেন। তাই এটি যখন আটকে গেলো। এখন ‘উচ্চ আদালতে আইনি লড়াই’ শেষ অধ্যায় হিসেবে মনে করছে তারা। এখন আন্দোলন আর প্যারোল এ দুটিই একমাত্র চূড়ান্ত পথ হিসেবে রয়েছে।

তবে প্যারোলে বা রাষ্ট্রের কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি এখনো বিএনপি ভাবছে না। দলের বামপন্থি আদর্শের বৃহৎ একটি অংশ খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তির জন্য অনেকভাবে বুঝানোর চেষ্টা করলেও তিনি রাজি হননি। তাই প্যারোলও খালেদা জিয়া শেষ পর্যন্ত নেবেন না বলে দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবি।

যদিও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর আগে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে দেখা করে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তের মতো প্যারোলে মুক্তি নিতেও খালেদা জিয়াকে বুঝিয়েছেন বলে দলটির বৃহৎ অংশের দাবি।

তবে এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেছেন, প্যারোলে খালেদা জিয়ার মুক্তির আবেদন করার প্রশ্নই আসে না।

তিনি প্যারোলে মুক্তি নেবেন না। এর আগে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও বলেছেন, খালেদা জিয়া রাষ্ট্রের কাছে ক্ষমা চেয়ে মুক্তি নেবেন না। তিনি ভেতরে থাকাই উত্তম হবে।

কারণ ‘আপসহীন’ নেত্রী হিসেবে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে আলাদা ইমেজ রয়েছে। তিনি ’৮৬ সালে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের সঙ্গে আপস করে নির্বাচনে যাননি।

ওয়ান-ইলেভেনের সময়ও কোনো প্রকার ‘সমঝোতা’ করতে রাজি হননি। দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য তিনি বরাবরই ত্যাগ স্বীকার করে আসছেন বলে দলটি দাবি করে আসছে। ভবিষ্যতেও এর অন্যথা হবে না।

দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলোর সঙ্গে কথা বলে আরো জানা যায়, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের পর শক্ত কর্মসূচি দিতে যাচ্ছে বিএনপি।

বৃহস্পতিবার রাতে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আন্দোলনের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। শীর্ষ নেতাদের অনেকেই খালেদা জিয়ার জামিন না হলে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে কঠোর আন্দোলনের প্রস্তাবও করেন।

কেননা, এখনই তৃণমূল থেকে কর্মসূচি চেয়ে চাপ আসছে দলে। দলে বিদ্রোহ ঠেকাতে ও দল ঠেকাতে আন্দোলনের পথেই হাঁটবে এমন সিদ্ধান্ত হয়।

এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা বিস্মিত ও হতবাক উচ্চ আদালতের এমন সিদ্ধান্ত দেখে। তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অসুস্থতার ব্যাপারে সামান্যতম মানবিকতা স্থান পায়নি। বিএনপি চেয়ারপারসনকে মুক্ত করতে যা যা দরকার তার সবই করবে এখন বিএনপি।

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, খালেদা জিয়া সুবিচার পাননি। তাই বাংলাদেশের মানুষ খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের যে সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে, সেটাই করবে।

আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের পথ একটাই— আন্দোলন। বাধ্য হয়ে আমরা আন্দোলনের কথা ভাবছি। এই সরকারের পতন ঘটাতে না পারলে বেগম জিয়ার মুক্তি মিলবে না। সূত্র:: আমার সংবাদ

সর্বশেষ