spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

আ’লীগের প্রেসিডিয়াম, যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক পদে ব্যাপক রদবদলের আভাস

spot_img

 

- Advertisement -

প্রিয় সংবাদ ডেস্ক:: আওয়ামী লীগের ২১ তম জাতীয় সম্মেলনে শুরু হচ্ছে আজ। এই সম্মেলন ঘিরে তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা গেলেও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে কেন্দ্রের হেভিওয়েট নেতাদের মধ্যে। তাদের মধ্যে বিরাজ করছে কমিটি থেকে বাদ পড়ার আতঙ্ক।

ক্যাসিনোকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলো থেকে দোর্দণ্ড প্রতাপশালী নেতাদের ঝেটিয়ে বিদায় করা হয়। নেতৃত্বে আনা হয় স্বচ্ছ ভাবমূর্তির অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতাদের। মূল দল আওয়ামী লীগের এবারের কাউন্সিলেও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখছেন সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই স্পষ্ট বার্তায় দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ করে আসা নেতাদেরও হাটুয় কাঁপুটি শুরু হয়ে গেছে। তবে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতারা রয়েছেন ফুরফুরে মেজাজে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিষয়ক ভিত্তিক সম্পাদকীয় পদগুলোতে এবার চমক আসবে। বাদ পড়বেন অনেক হেভিওয়েট নেতা। পদোন্নতি দেয়া হবে তরুণদে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্রগুলো বলছে, সভাপতি হিসেবে এবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই থাকছেন—এটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসছে কি না, এটাই এখন মূল আলোচনার বিষয়। এ পদে পরিবর্তনের কোনো ইঙ্গিত আছে কি না, দলে নতুন কে আসছেন, কারা বাদ পড়ছেন—এসব বিষয়ে ধারণা পেতে নেতারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে শেষ মুহূর্তে যোগাযোগ রাখছেন।

তবে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, রেওয়াজ অনুযায়ী ওবায়দুল কাদেরই আবার সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন। এ পদে আরও ৪-৫ জন আলোচনায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা তার রানিংমেট হিসেবে কাদেরের ওপরই আস্থা রাখবেন। অসুস্থতার ধকল কাটিয়ে ওঠা ওবায়দুল কাদেরের সাংগঠনিক দক্ষতা নিয়ে কারো কোনো প্রশ্ন নেই।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, এবারের সম্মেলনে মূল চমক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নয়। মূল চমক প্রেসিডিয়াম, যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে। সভাপতিমণ্ডলীতে পদ ১৭টি। চার–পাঁচজনের বাদ পড়ার কথা শোনা যাচ্ছে। বর্তমানে তিনটি পদ ফাঁকা আছে। সব মিলিয়ে ব্যাপক রদবদলেরই আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগের ১৭ সদস্যবিশিষ্ট সম্পাদকমণ্ডলীর মধ্যে বাদের তালিকায় আছেন অন্তত ১০ জন। বাদ পড়াদের মধ্যে সাবেক ২ মন্ত্রীসহ ৬ জন উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পেতে পারেন। প্রেসিডিয়াম থেকে কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য পদ পেতে পারেন ২ জন। উপদেষ্টা পরিষদ থেকে ২ জন প্রেসিডিয়ামে আসতে পারেন বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে।

চারজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের বেশির ভাগেই নতুন আসতে পারেন। দলের হয়ে বিরোধীদের বক্তব্যের জবাব দিতে পারেন এমন নেতাদের বেছে নেয়া হবে। বর্তমান যুগ্ম সম্পাদকদের মধ্যে অন্তত দুজন সভাপতিমণ্ডলীতে যেতে পারেন।

৮ জন সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে দু–তিনজনের পদোন্নতি হতে পারে। চার–পাঁচজন নতুন মুখ যুক্ত হতে পারেন সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে।

সূত্রগুলো বলছে, দলে নিষ্ক্রিয়তা, কমিটি বাণিজ্য, নিজ এলাকায় দলীয় কোন্দলসহ নানা কারণে ৮ সাংগঠনিক সম্পাদকের ৪ জনই বাদ পড়তে পারেন। ২ জনের স্থান হতে পারে প্রেসিডিয়ামে।

১৯ জন বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকের মধ্যে পাঁচ–ছয়জন ছাড়া অন্যরা এতটা সক্রিয় ছিলেন না। ফলে সম্পাদকমণ্ডলীতে বড় পরিবর্তনই আসতে পারে। কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও সম্পাদকমণ্ডলীতে কয়েকজন নারী এবং প্রয়াত নেতাদের পরিবারের সদস্যরা যুক্ত হতে পারেন।

পরিবর্তন আসতে পারে স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক, বাণিজ্য ও শিল্প সম্পাদক, শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক পদে। এসব পদে থাকা বেশ কয়েকজন নেতার পদোন্নতি কিংবা পদাবনত হতে পারে।

আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য সংখ্যা ২৮। কাউন্সিলের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ পদে যাদের স্থান দেয়া সম্ভব হয় না, সাধারণত তারাই সদস্য পদ পেয়ে থাকেন। বর্তমান সদস্যদের অনেকেই নিজ পদ ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তার করা, মন্ত্রণালয়ে গিয়ে দলীয় প্রভাব খাটানোসহ বিভিন্ন অভিযোগের কারণে বাদ পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।

সেক্ষেত্রে বিগত কয়েক কমিটি থেকে বাদ পড়া ত্যাগী ও প্রভাবশালী নেতা, দুর্দিনে দলের পাশে থাকা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাজনীতি করা পরিবারের সদস্য, মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখা মুক্তিযোদ্ধা কিংবা তাদের পরিবারের সদস্যরা স্থান পাবেন নতুন কমিটিতে। এছাড়া কার্যনির্বাহী সংসদের ২৮ সদস্যের মধ্যে ২ জন প্রেসিডিয়ামে স্থান পেতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে।

তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সবাই চান শুদ্ধি অভিযানের ভেতর দিয়ে হতে যাওয়া কাউন্সিলে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ও ত্যাগীদের মূল্যায়ন। বিশেষ করে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দেশে ফেরার পর যারা ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দুঃসময়ে মাঠে ছিলেন তারা কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে আসুক- এ রকম চাওয়া নেতাকর্মীদের। সেই চাওয়া অনুয়ায়ী অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতাদের এবারের কমিটির গুরুত্বপূর্ণ ঠাই দেয়া হবে।

আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইতিমধ্যে নেতা নির্বাচনে বর্তমান কমিটির সব স্তরের নেতার আমলনামা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। সংশ্লিষ্ট নেতাদের সফলতা ও ব্যর্থতার পাশাপাশি নিজ এলাকায় জনপ্রিয়তা, দলীয় কোন্দলে সম্পৃক্ততাসহ সার্বিক কর্মকাণ্ডের বিশ্লেষণের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে নতুন নেতৃত্বও প্রস্তুত করেছেন তিনি। দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের ধারণা- ‘নতুন মুখ, নতুন নেতৃত্ব’র যে প্রত্যাশা আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড করছে, এর প্রতিফলন ঘটবে এবারের কাউন্সিলে।

বাড়তে পারে নারী নেতৃত্ব : ৮১ সদস্যবিশিষ্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারীর সংখ্যা বাড়তে পারে। দলটির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, এ সংখ্যা কেন্দ্রীয় কমিটির মোট সদস্যের ৩৩ শতাংশের কাছাকাছি। এক্ষেত্রে দলের সাবেক ও বর্তমান নারী সংসদ সদস্যরা (এমপি) অগ্রাধিকার পাবেন।

এছাড়া মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ ও ছাত্রলীগের সাবেক কয়েকজন আলোচিত নেত্রী আসতে পারেন কমিটিতে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ (আরপিও) বাস্তবায়ন করতেই এ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে দলটি।

ইতিমধ্যে কাউন্সিল ঘিরে নারী নেতৃত্ব বাছাইয়ের কাজ সম্পন্ন করেছে দলটির হাইকমান্ড। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি যুগান্তরকে বলেন, কমিটিতে এবার সর্বোচ্চসংখ্যক নারী স্থান পাবেন। এটা আরপিওর প্রায় কাছাকাছিই হবে। ২০২০ সালের মধ্যেই আমরা ৩৩ ভাগ পূরণ করতে পারব বলে আশা করি। সূত্র:: যুগান্তর

spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

সর্বশেষ