spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

রমজাননির্ভর ৬ পণ্য: দাম বাড়ানো শুরু তিন মাস আগেই

spot_img

 

- Advertisement -

প্রিয় সংবাদ ডেস্ক:: রমজানকে লক্ষ্য করে অসাধু ব্যবসায়ীচক্র পুরনো ছক কাজে লাগাচ্ছে। রমজাননির্ভর ছয়টি পণ্যের দাম তারা তিন মাস আগেই বাড়াতে শুরু করেছে- যাতে রমজানে নতুন করে বাড়ানোর প্রয়োজন না পড়ে। সেই সঙ্গে দীর্ঘ সময় ভোক্তার পকেট কেটে অতিরিক্ত মুনাফা করা যায়।

পণ্যগুলো হচ্ছে- ছোলা, ভোজ্যতেল, ডাল, খেজুর, আদা ও রসুন। আরেক পণ্য পেঁয়াজের বাজার তো কয়েক মাস ধরেই চড়া। সেই সঙ্গে বাজারে চাল, সব ধরনের সবজিসহ বেশকিছু খাদ্যপণ্য বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ নিয়ে তাই ভোক্তারা শঙ্কায় রয়েছেন- এ বছর রমজানেও অসাধু ব্যবসায়ীরা বাড়তি দরে খাদ্যপণ্য কিনতে সাধারণ মানুষকে বাধ্য করবেন।

কারওয়ান বাজার, শান্তিনগর কাঁচাবাজার, নয়াবাজারসহ রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এবং খুচরা বিক্রেতা ও ভোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে মঙ্গলবার এসব তথ্য জানা গেছে। এদিন দেখা গেছে, রমজানে অতিব্যবহৃত পণ্যের মধ্যে ছোলা, ডাল, ভোজ্যতেল ও খেজুর এক মাসের ব্যবধানে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে।

রসুন ২০ থেকে ৪০ টাকা এবং আদা ১০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। এছাড়া গত বছরের একই সময়ের তুলনায় পেঁয়াজ কেজিতে এখনও ৭০-৮০ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। সূত্র জানায়, রমজানকে ঘিরে সরকারের একাধিক সংস্থা তিন মাস আগেই বাজার তদারকিতে নেমেছে। তারা মোকাম থেকে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে তদারকি করছে।

যাতে রমজানে ভোক্তাদের বাড়তি দরে নিত্যপণ্য কিনতে না হয়। তারপরও বিভিন্ন কৌশল ও অজুহাতে অসাধু ব্যবসায়ী চক্র এসব পণ্যের দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে। রাজধানীর বাজারগুলোয় মঙ্গলবার প্রতি কেজি ছোলা মানভেদে বিক্রি হয়েছে ৭৫-৮০ টাকা, যা এক মাস আগে বিক্রি হয় ৭০-৭৫ টাকা।

প্রতিকেজি মশুরের ডাল মানভেদে বিক্রি হয়েছে ৬৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১২৫ টাকা, যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা। প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হয়েছে মানভেদে ১৪০ থেকে ২২৫ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ১২০ থেকে ১৮০ টাকা। আদা প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১৩০ থেকে ১৭০ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ১০০ থেকে ১৬০ টাকা।

ভোজ্যতেলের মধ্যে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন মঙ্গলবার বিক্রি হয়েছে ৯৩ থেকে ৯৫ টাকা, যা এক মাস আগে বিক্রি হয় ৮৪ থেকে ৮৮ টাকা। কোম্পানিভেদে বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ১০৫-১১৫ টাকা, যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ১০০-১১০ টাকা। প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ৮০-৮৫ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ৬৯-৭০ টাকা।

পাম অয়েল সুপার বিক্রি হয়েছে ৮৪-৮৮ টাকা, যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৭৪-৭৮ টাকা। তাছাড়া মৌসুমেও বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পেঁয়াজ। এদিন প্রতি কেজি পেঁয়াজ দেশি বিক্রি হয়েছে ৯০-১১০ টাকা, যা গত বছর এ সময়ে বিক্রি হয়েছিল ২২ থেকে ৩০ টাকা।

দাম বৃদ্ধির এ চিত্র উঠে এসেছে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার মূল্যতালিকায়ও। এতে বলা হয়েছে, গত মাসের তুলনায় মসুরের ডাল ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাসের ব্যবধানে রসুন ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং আদা ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। মাসের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন প্রতি লিটারে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি দরে, এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

মাসের ব্যবধানে লুজ পাম অয়েল বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ১৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। এছাড়া খেজুরের দাম শতাংশে হিসাব না করে দেখালেও সংস্থাটি বলছে, কেজিতে ২০ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। ছোলা কেজিতে ৫ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে।

নয়াবাজারের মুদি বিক্রেতা মো. তুহিন যুগান্তরকে বলেন, রমজানে অতিব্যবহৃত পণ্য- ছোলা, ভোজ্যতেল, ডালের মূল্য মোকাম পর্যায়ে বাড়ানো হয়েছে। ফলে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম বেড়েছে। একেক পণ্যের দাম একেক অজ–হাতে বেড়েছে। কিন্তু এর সবই তাদের ভোক্তা ঠকানোর কারসাজি। তিনি বলেন, ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর পেছনে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সয়াবিন তেল আমদানি করতে খরচ বেশি হচ্ছে। এছাড়া শীতে পাম অয়েল জমে যায়, ফলে সয়াবিনের ওপর চাপ পড়ছে। তাই সরবরাহে ঘাটতি থাকায় দাম বাড়ছে। তিনি বলেন, ছোলার ক্ষেত্রেও সরবরাহের ঘাটতির অজুহাত দেখাচ্ছেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ডাল আমদানিতেও খরচ বেশি হওয়ার কথা বলছেন।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, রমজানের চাহিদা মেটাতে ভোজ্যতেল, ছোলা, আদা, রসুন, খেজুরসহ সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা, উৎপাদন, আমদানি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় মজুদ করা হচ্ছে। বিগত দিনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আগামী দিনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। যাতে রমজানে মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট না হয়। সহনীয় দামে কিনতে পারে। সেজন্য সরকারের একাধিক সংস্থা কঠোর মনিটরিং করছে।

কিন্তু মঙ্গলবার বিভিন্ন বাজারে ভোক্তারা জানিয়েছেন, গত দুই বছরের মতো এবারও রমজানের অনেক আগেই রমজাননির্ভর পণ্যের দাম বাড়াতে শুরু করেছে ব্যবসায়ীরা। এতে নানা অজুহাত দেখালেও আগের দুইবারের অভিজ্ঞতা বলে দাম আর কমবে না। বরং গেলবার যা দেখা গেছে, ৫-১০ রোজা পর্যন্ত দাম বেড়েছেই।

এবারও গেলবারের মতোই মনে হচ্ছে। এতে আমাদের নিত্যপণ্য কিনতে আবারও হিমশিম খেয়েই যেতে হবে। রমজান আসার আগেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর বিষয়ে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান ড. গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, কয়েক বছর ধরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা রমজানে পণ্যের দাম খুব কম বাড়ায়। রমজান আসার এক-দুই মাস আগেই দাম বাড়িয়ে দেয়।

তিনি বলেন, বর্তমান বাজারে সবকিছুই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। তাই রমজান আসার আগেই এ বিষয়টি নিয়ে কঠোর মনিটরিং করে সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া বাজার ব্যবস্থায় বর্তমানে কোনো ধরনের প্রতিযোগিতা নেই। তারা অযৌক্তিক মুনাফার উদ্দেশ্যে সময় ও সুযোগ বুঝে পণ্যের দাম বাড়িয়ে আসছে। এ প্রবণতা ভোক্তা কিংবা সরকার কারও জন্যই শুভ নয়।

অসাধ্য ব্যবসায়ীচক্রের বিষয়ে ড. গোলাম রহমান বলেন, এখন থেকে যদি বাজার ঠিকমতো মনিটরিং করা না হয়, তাহলে এ চক্রকে রমজান পর্যন্ত থামানো যাবে না। তাই এখন থেকেই সরকারের উচিত বাজার গভীরভাবে পর্যালোচনা করে তদারকি করা। ভোক্তাদের উদ্দেশে গোলাম রহমান বলেন, রমজান ঘিরে ভোক্তাদেরও সচেতন হতে হবে। ১৫ দিনের পণ্য একদিনে কেনা ঠিক হবে না। এতে বাজারে পণ্যের ঘাটতি দেখা দেয়, ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়।

জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার যুগান্তরকে বলেন, অধিদফতরের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাজার তদারকি করা হচ্ছে। দিনে দুইটি টিম তদারকি করছে। কিন্তু কাঁচাবাজারে পণ্যের দাম গায়ে লেখা না থাকায় কিছুই করা যাচ্ছে না।

তাই আমরা এবার মোকাম থেকে পাইকারি ও খুচরায় তদারকি নতুনভাবে করব। বিশেষ করে মোকাম ও পাইকারি বাজারে পণ্যের বস্তায় মূল্য লিখতে বলব, যাতে খুচরাতে এসে বেশি দামে বিক্রি করলে সহজেই ধরা যায়। অনিয়মের প্রমাণ মিললেই কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। ::যুগান্তর

spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

সর্বশেষ