প্রিয় সংবাদ ডেস্ক :: করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে দেশের একাধিক হাসপাতালের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্যসেবা না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। সাধারণ সর্দি-কাশি বা জ্বর থাকলে রোগীদের কাছে যাচ্ছেন না চিকিৎসক। এতে কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা না পেয়ে রোগী বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। কোথাও কোথাও মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। তাই মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে মাঠে নামছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের বিশেষ তদারকি সেল।
ইতোমধ্যে অধিদফতরের পক্ষ থেকে ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারকে প্রধান করে ৫টি টিম গঠন করা হয়েছে। টিমগুলো একটি সেল হিসেবে কাজ করবে। টিমের সদস্যরা আজ রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে অভিযান চালাবেন। পর্যায়ক্রমে দেশের বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে অভিযান চলবে। সঙ্গে থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অধিদফতর সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, ভোক্তা আইনে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সরাসরি আইনি ব্যবস্থা নেয়ার বিধান নেই। কাজেই অভিযানের সময় অনিয়ম পেলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়া হবে। এতে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে শাস্তির আওতায় আনার সুপারিশ করা হবে। সঙ্গে রোগীর সিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হবে। ইতোমধ্যে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে চিকিৎসাসেবা না দেয়ার বিষয়টি দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসে। এরপর তিনি সব চিকিৎসককে রোগীদের প্রয়োজনীয় সেবা দেয়ার নির্দেশ দেন। এরপরও কিছু এলাকায় রোগীরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা খবরের কাগজ ও টেলিভিশনের খবরে জানতে পেরেছি- করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসকরা নির্ধারিত চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না। এতে কিছু রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। সাধারণ মানুষ কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না। সঙ্গে হাসপাতালের কর্মকর্তাদের কাছে অশোভন আচরণের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তাই আমরা অধিদফতরের পক্ষ থেকে দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করব। যাতে জনগণ চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়ে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয়।’
তিনি বলেন, অধিদফতরের পক্ষ থেকে ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় আমাকে প্রধান করে ৫টি মনিটরিং টিম গঠন করেছে। প্রথম পর্যায়ে আজ থেকে (রোববার) রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করা হবে। পর্যায়ক্রমে সারা দেশের অধিদফতরের কর্মকর্তারা হাসপাতালগুলোতে অভিযান পরিচালনা করবেন। সঙ্গে থাকবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার জানান, ‘অভিযানকালে কমিটির সদস্যরা রোগী ও তার স্বজনদের সঙ্গে কথা বলবেন। তাদের চিকিৎসাসেবা নিতে কোনো ধরনের সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে কিনা, সে বিষয়ে জানা হবে। অভিযোগ পেলে দায়িত্বরত চিকিৎসকদের সঙ্গে ওই বিষয়ে কথা হবে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে। এছাড়া কোনো রোগী চিকিৎসাসেবা না পেলে অধিদফতরের ভোক্তা হটলাইন ১৬১২১ নম্বরে অভিযোগ জানাতে পারবেন।’
এ বিষয়ে মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ‘ভোক্তা আইনের ৫২ ও ৫৩ ধারায় শাস্তির কথা উল্লেখ থাকলেও আইনে নির্দিষ্টভাবে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে বা চিকিৎসাসেবা দেয়া সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি ভোক্তা আইনে শাস্তির কথা নেই। তাই আমরা কোনো অনিয়ম পেলে সরাসরি শাস্তি দিতে পারব না। তবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ওই বিভাগে বা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করে শাস্তির আওতায় আনার সুপারিশ করব।’
অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল জব্বার মণ্ডল যুগান্তরকে বলেন, বিশেষভাবে অভিযান পরিচালনার আগে পরীক্ষামূলকভাবে শনিবার রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল, ল্যাবএইড, শমরিতা হাসপাতাল, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হসপিটাল, বিআরবি, গ্রিন লাইফ, কমফোর্ট ও আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালগুলোতে রোগীদের যথাযথভাবে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে কিনা- তা ক্ষতিয়ে দেখা হয়। সর্দি জ্বর বা কাশি এমন রোগী ভর্তি করা হচ্ছে কি-না বা রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে কি-না তা দেখা হয়। এছাড়া এসব হাসপাতালে ডাক্তার নিয়মিত আসছে কি-না তা দেখা হয়। এছাড়া যেসব ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মী হাসপাতালে আসছেন না, তাদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা দেশের সব মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে মাঠে আছি।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, ‘জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বেশকিছু ভালো উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে হাসপাতালগুলোতে তদারকি করা একটি। কারণ হাসপাতালে অনেক সময় উপযুক্ত সেবাও পাওয়া যায় না। তাই অভিযান পরিচালনা হলে চিকিৎসাসেবার সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্টদের সচেতনতা বাড়বে, সঙ্গে সাধারণ মানুষেরও উপকার হবে।’
বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হসপিটালের সিইও আল ইমরান চৌধুরী বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের এমন তদারকি সাধুবাদ জানাই। কারণ চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য হাসপাতালে চিকিৎসকের উপস্থিতি অবশ্যই দরকার। এছাড়া আমরা যা করছি, জ্বর নিয়ে কোনো রোগী এলে তাদের আমরা তাপমাত্রা মাপছি। তাপমাত্রা বেশি পেলে তাদের আলাদা করে চিকিৎসা দিচ্ছি। তিনি জানান, এর মধ্যে দু’জন করোনা আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে এসেছিলেন। তাদের চিকিৎসার জন্য সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে পাঠিয়েছিলাম। সঙ্গে এ দু’জন রোগীর যারা স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছিলেন তাদেরও আমরা কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়েছিলাম। পরে ডাক্তারদের করোনা আক্রান্ত পরীক্ষায় সংক্রমণ ধরা না পড়ায় আমরা আবার তাদের নিয়ে এসে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত করেছি।