হে মমতাময়ী মা! আমাদের নিরাশ করবেন না

 

- Advertisement -

প্রিয় সংবাদ ডেস্ক ::  হে মমতাময়ী মা, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।
আপনি বঙ্গকন্যা, আপনার রক্তে মিশে আছে বাংলাদেশের স্হপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত। বঙ্গবন্ধু জীবনদর্শায় সর্বদা বাংলার দুঃখি ও মেহনতি মানুষের কথা ভেবেছেন। যৌবনের বেশিরভাগ সময় তিনি কারাগরে কাটিয়ছেন মানুষকে ভালোবেসে। তার মন প্রাণ ও অন্তর জুড়ে ছিলো বাংলার জনগণ। প্রতিনিয়ত যতটুকু এদেশের অবহেলিত, নির্যাতিত ও হতদরিদ্রসহ আপামর জনসাধারণের কথা ভেবেছেন এর এক সিকিভাগও তিনি নিজ পরিবারসহ আপনাদের (সন্তান) কথা ভাবেননি। ৭৫ পরবর্তি সময়ে সেই মহান ব্যক্তিকে বাংলার কিছু কুলাঙ্গার রাতের আধারে স্বপরিবারে হত্যা করে স্বাধীনতার লাল সূর্যকে অর্ধনির্মযিত করেছিলো, যা কারবালার মর্মান্তিক ঘটনারই নামান্তর। এ হত্যার কারণে জাতি হিসেবে আমরা হলাম কলঙ্কিত। আর দেশ হারালো এক মহান মায়াবি নেতা। হায়নারা নিয়ে নিলো রাষ্ট্র ক্ষমতা। জারি করলো পিতৃহত্যার বিচার না হওয়ার অদ্যাদেশ। মুর্হুতে থমকে গেলো হতদরিদ্র ও মেহনতি মানুষের ভাগ্যের চাকা। আর অন্যদিকে বদলাতে শুরু করলো লুটেরা, মুনাফাখোর, চোরাকারবারি, মজুদদার ও গরীব শোষনকারীদের ভাগ্যের চাকা। অতপর রচিত হলো একেক কাব্য-উপকাব্য, বিকৃতি ও ছিন্নভিন্ন করা হলো ইতিহাসের পাতা।

অবশেষে ভাগ্য বিড়ম্বিত জাতির মুখে হাসি ফুঁটাতে পিতার মত আপনিও সেদিন বীরদর্পে পা রেখেছিলেন স্বদেশের মাটিতে। সেদিন ছিলো না কোন জীবনের মায়া। তারপর বাকীটা কেবল ইতিহাস। সকলের জানা। মানুষের জীবনমান উন্নয়নে হার মানেননি কোন অপশক্তির কাছে। পিতার স্বপ্ন, দৃঢ় মনোবল, কাজের সৃপ্হা ও সর্বোপরি গণমানুষের দোয়ার বদৌলতে কোন বাঁধায় আপনাকে লক্ষ্যে থেকে সরাতে পারেনি। এমনকি কোন বন্দুকের নলের গুলিও।

অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে জয়ী হলেন আপনি। জয় হল মানবতার। জয় হলো মেহনতি মানুষের। বাংলার মানুষ তাদের পিতৃহত্যার কলঙ্ক ঘুঁচাতে আপনার দলকে অকুন্ঠ সমর্থন দিয়ে ক্ষমতায় আসীন করেছিলো। কারণ আপনি হলেন সে মহান নেতার যোগ্য উত্তোসরি। আপনার শিরা-উপশিরা ও ধমনিতে বইছে সেই তেজদীপ্ত রক্ত। যার একটি আঙ্গুলের হেলানে একাত্তরের ৭ মার্চ বাংলার সাড়ে ৭ কোটি মানুষ সেদিন “জয় বাংলা” মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়েছিলো জীবন উৎসর্গ করতে। শেখ রেহানাসহ আপনি সেই পিতার একমাত্র বেঁচে থাকা কান্ডারী। আপনার দু’নয়নের আলোর প্রখরতা বাংলার ৬৪ জেলার আনাচে কানাচে প্রতিফলিত। ঘরের নববধু থেকে আবাল, বৃদ্ধা, যুব-কিশোর ও মাটিতে লুটোপুটি খাওয়া শিশুসহ সবাই আপনার উন্নয়নের জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় রাঙায়িত। সবার একবাক্য আপনার হাতেই দেশ ও জনগণ নিরাপদ।

আপনিও পিতারমত দিবানিশি মানুষকে নিয়ে চিন্তা করছেন। যার সুফল মানুষ ইতোমধ্যে ঘরে ঘরে পেতে শুরু করেছেন। আপনাকে পেয়ে আমরা ধন্য। ধন্য জাতি। এখন গোটা বাঙালির আপনি হলেন একমাত্র আলোর দিশারী।

মমতাময়ী নেত্রী, আপনার দক্ষ নেতৃত্বে দেশ যখন উন্নয়নের রোলমডেলে এগিয়ে চলছে, ঠিক সেই মুর্হুতে মহামারী করোনা ভাইরাসের করল গ্রাসে লন্ডভন্ড গোটাবিশ্ব। আমাদের দেশেও এ ভাইরাসে আজ আক্রান্ত। আপনার সঠিক দিকনির্দেশনায় ডাক্তার, নার্স, সেনাবাহিনী, পুলিশ সহ সরকারি কর্মকর্তাসহ সবাই যার যার অবস্হান থেকে লড়ে যাচ্ছে এ প্রাণঘাতী করোনার বিরুদ্ধে। লড়াইয়ে পিছিয়ে নেই আমরা সংবাদকর্মীরাও। প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনার সর্বশেষ আপডেট তথ্য পৌঁছে দিতে ব্যস্ত। জনগণের কাছে প্রচার করছি এর ভয়াবহতা ও পরিত্রাণ পাওয়ার কৌশল। সবাই যখন এই মহামারী পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যস্ত এ সুযোগে কিছু মুনাফাখোর, মজুদদার ও চোরাকারবারি সিন্ডিকেট ব্যস্ত নিজের আঁখের গোঁছাতে। এদের কেউ দমাতে পারছেনা। তাদের সাথে জড়িত আছে কিছু অসাধু রাজনীতিবিদ। এঁদের বিরুদ্ধে যেই কথা বলেছে তাদের নির্যাতিত, লাঞ্ছিত এমন কি জীবন দিতে হয়েছে। এসব চিত্র গণমাধ্যমকর্মীরা প্রতিনিয়ত তাদের লেখনির মাধ্যমে তুলে ধরছেন। আমিও গত ৭ এপ্রিল পণ্যমূল্য বেশি রাখার দাবির প্রতিবাদ করতে গিয়ে এদের হাতে
নির্যাতিত ও লাঞ্ছিত হয়েছি। কিন্তু দমে যাইনি।

হে নেত্রী করোনা পরিস্থিতিতে আপনি বিভিন্নখাতে হাজার হাজার কোটি টাকা প্রনোদনা ঘোষণা করেছেন। তা সত্যি প্রশংসার দাবীদার। কিন্তু এ প্রনোদনা ঘোষণা থেকে শুধু বাদ পড়লো গণমাধ্যমকর্মীরা। চিকিৎসক, নার্সরা ঝুঁকিতে, তারা পিপিই পেলেন, প্রণোদনাসহ বীমা পেলেন। ব্যাংকসহ অন্যান্য সরকারী অফিস ঝুঁকিতে। দীর্ঘ ছুটি পেলেন। ছুটির সময়ে যারা অফিস করছেন তারা প্রণোদনা পাবেন। অতচ আমরা হতভাগা গণমাধ্যমকমীরাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত সংবাদ সংগ্রহ করছি আমাদের কোন পিপিই নেই, নেই কোন প্রনোদনা। মাস শেষে বেতন পাবো কিনা তারও নেই কোন গ্যারান্টি। ইতোমধ্যে ৬ জন সাংবাদিক করোনা আক্রান্ত হলেও সরকারকে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছি আমরা ঝুঁকিতে আছি। যেমন, “কাদম্বীনি মরিয়া প্রমাণ করিলো সে বাঁচিয়া ছিলো।” আমাদেরও দর্শা তাই হবে, “মরে প্রমাণ করতে হবে আমরা করোনায় আক্রান্ত ছিলাম।” আমরা এখনও করোনার সংবাদ সংগ্রহে মাঠে-ঘাটে, রাজপথে ও অফিসে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু আমরা কি পেলাম? আমাদের পরিবার, আত্মীয় স্বজন যখন প্রশ্ন করে তখন আমরা সাংবাদিকরা কোন উত্তর দিতে পারিনা। মাথা নিচু করে রাখি কারণ প্রশ্নের জবাব আমাদের জানা নেই। মা বাবা ভাই-বোন, স্ত্রীদের কোন উত্তর না দিয়েই পরের দিনের এসাইনমেন্ট কি হবে তার স্বপ্ন দেখে ঘুমিয়ে পড়ি।

মমতাময়ী নেত্রী, প্রসঙ্গক্রমে বলতে চাই আপনার সরকারের সময় অবাধ তথ্য সম্প্রচারের লক্ষ্যে নতুন নতুন পত্রিকা, রেডিও ও টিভি চ্যানেলের অনুমোদন দিয়েছেন। এতে করে অনেক কমসংস্হানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তারজন্য আপনাকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু এতে বেশি লাভবান হয়েছেন মালিক কতৃপক্ষ। মালিকদের ভাগ্য উন্নয়ন হলেও জীবনমান বাড়েনি সংবাদকর্মীদের। যা বেড়েছে তা শুধু কাগজে কলমে দেখানো হচ্ছে। আপনি সাংবাদিকদের জন্য ওয়েজবোর্ড দিলেন, মালিকরা দিচ্ছি দিবো বলে নয় ছয় করে বছর কি বছর পার করছে। প্রতিবাদ করলে আসে প্রতিষ্ঠান বন্ধসহ চাকরি হারানোর হুমকি। একপ্রকার অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটে আমাদের জীবন। আপনি গোয়েন্দা রিপোর্ট নিলে সব অবগত হবেন।

জাতির পিতা সাংবাদিকতা ও সাংবাদিকদের ভালোবাসতেন। কারণ তিনিও জীবনের শুরুতে সাংবাদিকতা করে প্রথম অর্থ উপাজন করেছিলেন। যা উনার আত্মজীবনীতে উনি উল্লেখ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করবে। সাংবাদিকরা অন্যায়ের কাছে মাথানত করবে না। কিন্তু যেখানে একজন সাংবাদিক রাতে ঘুমানোর সময় চিন্তা করতে হয় সকালে উঠে চাকরি আছে না গেছে, সেখানে কিভাবে একজন সাংবাদিক স্বাধীন হয়ে কাজ করবে? বলতে পারেন মাননীয় নেত্রী। এরপরতো আছে অর্থ কষ্ট ও অভাব। অতচ আমরাই প্রতিনিয়ত মানুষের দুঃখ, দুদর্শার এবং অন্যায়ের কথা তুলে ধরি। হক কথা লেখার কারণে সরকারি ও বিরোধী দল থেকে উপাধি পাই দালাল, আর পুলিশ থেকে লাঠি পেটা, সন্ত্রাসী ও রাজনৈতিক মহল থেকে নির্যাতন, হামলা-মামলা, হত্যা ও গুম করার হুমকি। এতো কিছুর পরও আমরা সাংবাদিকরা দমে যাইনি। একজন শহীদ সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু’র অনুপ্রেরণায় জীবনের মায়া ত্যাগ করে শতশত বালু এ পেশায় যোগদান করছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনিমার্ণে।
হে নেত্রী, আমরা কোন প্রণোদনা পাই বা না পাই আপনার নিদের্শনা মেনে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে ঘরে ফিরে যাবো না। ইনশাআল্লাহ
এটাই আমাদের শপথ। শুধু আপনার দোয়া ও ভালোবাসা চাই, হে মমতাময়ী মা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।

লেখকঃ মুহাম্মদ মহরম হোসাইন

সংবাদকর্মী/সংগঠক ও
নিবার্হী সদস্য,
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে)।

সর্বশেষ