spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে যে দু’টি বিষয়ে সতর্ক থাকবে বিএনপি

spot_img

 

- Advertisement -

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হারের কারণ পর্যালোচনা করে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে কিছু কৌশল নির্ধারণ করছে বিএনপি। খুলনা সিটি নির্বাচনে হারের পেছনে দু’টি বিষয় বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন দলটির নেতারা। প্রথমত ভোটকেন্দ্রের ভেতরে পোলিং এজেন্টের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে না পারা; দ্বিতীয়ত কেন্দ্রের বাইরে ভোটার স্লিপ বুথ নিশ্চিত না করা। এ কারণে তাই গাজীপুরে ভোটের দিন এই দু’টি বিষয় আগেই নিশ্চিত করতে চায় বিএনপি। দলটির নীতিনির্ধারকেদর সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

বিএনপি সূত্র জানায়—গত ২১ মে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশ নির্বাচনের কৌশল নির্ধারণ করতে বৈঠক করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন ও গাজীপুর সিটির দলের মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। ওই বৈঠকে গাজীপুরের মেয়র প্রার্থী ও নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের এ দু’টি বিষয় নিশ্চিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘গাজীপুর সিটি নির্বাচনে অবশ্যই বিএনপির নিজস্ব কিছু কৌশল থাকবে। তবে সেটা তো মিডিয়া প্রকাশ করা যাবে না। কারণ এটা আমাদের নিজস্ব কৌশল।’

বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতার অভিযোগ—খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২৪৯টি ভোটকেন্দ্র ছিল। অধিকাংশ ভোটকেন্দ্র থেকেই বিএনপির পোলিং এজেন্টকে বের করে দেওয়া হয়েছে। কিছু কেন্দ্রের এজেন্টকে আগেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের পোলিং এজেন্ট না হতে হুমকি দেওয়ায় অনেক কেন্দ্রে এজেন্ট যাননি। এর ফলে যেসব কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট ছিলেন না, সেখানে আওয়ামী লীগের লোকেরা একেচেটিয়া জাল ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। পোলিং এজেন্ট উপস্থিত না থাকায় কোন কোন ভোটকেন্দ্রে জাল ভোট পড়েছে, সেই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য তুলে ধরা যায়নি। এর বাইরে প্রত্যেকটি কেন্দ্রের সামনে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের ‘সন্ত্রাসীরা’ বুকে নৌকা প্রতীক লাগিয়ে সাধারণ ভোটারদেরও আসতে দেননি। তাই গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে পোলিং এজেন্টের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় বিএনপি। বিষয়টি নিশ্চিত করা গেলে কোনও পক্ষ যদি ভোট চুরির পরিকল্পনা করে, সেটা বাস্তবায়ন করতে যেমন অসুবিধা হবে, তেমনি ভোটের পরে সুনির্দিষ্টভাবে কেন্দ্রভিত্তিক চিত্রও গণমাধ্যম, বিভিন্ন সংস্থা ও বিভিন্ন দূতাবাসের কাছে তুলে ধরা যাবে।

দলটির নেতারা আরও বলেছেন, এছাড়া সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে প্রতিটি কেন্দ্রের বাইরে ভোটার স্লিপ বুথে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা। এর ফলে খুলনা সিটিতে দল বেঁধে জাল ভোট দেওয়ার যে ঘটনা ঘটেছে, সেটা করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘খুলনায় নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের সহযোগিতায় ভোট চুরি নির্বাচনে বিজয় হয়েছে। একইভাবে গাজীপুরেও তারা ভোট চুরির চেষ্টা করবে। তাই আমাদের কাজ হবে গাজীপুরে কীভাবে ভোট চুরি থেকে রক্ষা করে দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করা যায়। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোটেক আহমেদ আজম খান বলেন, ‘‘খুলনা সিটি নির্বাচনে কত নির্লজ্জভাবে সরকার ভোট চুরি করেছে, তা জাতি দেখেছে। সেখানে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনের আগে নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশের লোকজন পোলিং এজেন্ট না হতে হুকমি দিয়ে এসেছে। সেখানে গণমাধ্যমেও সরকার নিয়ন্ত্রণ করেছে। এখন আবার সরকার জোর গলায় বলছে ‘খুলনা মড়েলে’ আগামী নির্বাচনগুলোও হবে। তাই আমরা ধরে নিতে পারি সরকার খুলনার কায়দায় ভোট চুরির পরিকল্পনা নিয়ে গাজীপুরসহ বিভিন্ন সিটি নির্বাচন ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার চেষ্টা করবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশ নির্বাচনে বিএনপির করণীয় নিয়ে দলের সিনিয়র নেতারা বিভিন্ন সময় বৈঠক করে ঠিক করছেন। নিশ্চিয় আমরা খুলনা সিটি থেকে শিক্ষা নিয়ে গাজীপুর সিটিতে করণীয় নির্ধারণ করবো। ’

দলের নেতারা বলছেন, গাজীপুর সিটির ৫৭টি ওয়ার্ডে কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে ৫৭টি টিম গঠন করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী তারা নির্বাচনি প্রচারণা করেছে। আগামীতে আবার যখন নির্বাচনি প্রচারণা শুরু হবে তখনও একইভাবে এই টিমগুলো প্রচারণা করবে। এর বাইরে গাজীপুরে সরকার পরিবার ভোটের মাঠে খুবই শক্তিশালী। তাই সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপির প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, খুলনা সিটিতে সরকার ভোট চুরির মাধ্যমে আমাদের বিজয় চিনিয়ে নিয়েছে, যা সারাবিশ্ব দেখেছে। তবে যদি গাজীপুরে ভোটাররা ভোট দিতে পারেন, আর নির্বাচন সুষ্ঠু হয়, তাহলে আমাদের প্রার্থী জয়ী হবে বলে আশা করি।’

বিএনপির ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন বলেন, ‘খুলনা সিটি নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রগুলোয় যেসব অনিয়ম হয়েছে, গাজীপুরে সেসব প্রতিহিত করার পরিকল্পনা আছে আমাদের। সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করে যাচ্ছি, যেন কেউ জোর করে ভোট চুরি করে নিয়ে যেতে না পারে। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের ও সরকাররে। আশা করি, নির্বাচন কমিশন খুলনায় যেসব ভুল করেছে, সেটা গাজীপুরে করবে না। ’ তিনি আরও বলেন, ‘গাজীপুর সিটি ভোট স্থগিত হওয়ার আগে যেভাবে নির্বাচনি প্রচারণা করেছি, সেটা আবার প্রচারণা শুরু হলে নিয়মিত করবো আমরা।’ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন

spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

সর্বশেষ