রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী বিশ্বভারতী প্রাঙ্গনে শুক্রবার ঠিক দুপুরে নবনির্মিত বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সঙ্গে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঐতিহাসিক এই মুহুর্তে সকলের মধ্যে ছিল খুশির রেশ। ভবনের উদ্বোধনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ শুধু ভারতের নয়, তিনি আমাদেরও। রবীন্দ্রনাথ তার অধিকাংশ কবিতা বাংলাদেশে বসেই লিখেছিলেন। তাছাড়া ভারতের মত বাংলাদেশেরও জাতীয় সঙ্গীত রবীন্দ্রনাথের লেখা।
তিনি বলেন, মানুষ ও প্রকৃতির মেল বন্ধন ঘটেছে এই শান্তিনিকেতনে। আর তাই এখান প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তৈরি করা হয়েছে বাংলাদেশ ভবন। এই ভবনের ডিজাইনের মধ্যে তা সুষ্পষ্ট। অনুষ্ঠানের শুরুতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, বাংলাদেশ ভবনটি অপূর্ব হয়েছে। আগামী দিনে এটি একটি তীর্থস্থানে পরিণত হবে বলে মমতা আশা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, আমরা আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গে একটি বঙ্গবন্ধু ভবনও করতে চাই। এ ব্যাপারে বাংলাদেশে সরকারের সহযোগিতা তান তিনি। এর আগে বিশ্বভারতীর সমাবর্তনে ভাষণ দিতে গিয়ে আচার্য নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ভারত ও বাংলাদেশ দুটি আলাদা দেশ হলেও সহযোগিতা এই দুই দেশকে জুড়ে দিয়েছে। আর তারই উদাহরণ হল বাংলাদেশ ভবন। তিনি আরও বলেছেন, ভারত ও বাংলাদেশ একে অপরের পরিপূরক। প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, আমি অতিথি হিসেবে এখানে আসিনি। আমি এসেছি আচার্য হিসেবে। তিনি বলেছেন, রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনে এসে নিজেকে গর্বিত মনে করছেন। তিনি জানিয়েছেন, গোটা বিশ্বে রবীন্দ্রনাথ নন্দিত। তিনিই প্রথম বিশ্বনাগরিক। মোদি তার দীর্ঘ ৩৫ মিনিটের ভাষণে বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ গোটা বিশ্বকে আপন করে নিয়েছিলেন। আর তার সেই বিশ্বভাবনার ফসল হল বিশ্বভারতী। মোদি তার ভাষণ শুরু করেছিলেন বাংলায়। সমাবর্তন উৎসবও ছিল ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী। মোদির ভাষায়, এই আ¤্রকুঞ্জ অতীতে বহু এতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থেকেছে। এদিনও বিশ্বভারতীর সমাবর্তন এই ঐতিহাসিক মুহুর্তের সাক্ষী থেকেছে। একই মঞ্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রথম বিশ্বভারতীর কোন সমাবর্তন মঞ্চে উপস্থিত থাকলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। ৪২ বছর আগে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় সমাবর্তনে উপস্থিত থাকলেও ছিলেন দর্শক আসনে। এছাড়াও মঞ্চে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরিনাথ ত্রিপাঠি এবং বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজকলি সেন। সমাবর্তন শেষে মমতাকে সঙ্গে নিয়ে দুই প্রধানমন্ত্রী পূর্বপল্লীতে বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন করেছেন। এদিন সকালে দুদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কলকাতার দমদম সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দওে পৌঁছান। সেখান থেকে ভারতের বায়ু সেনার একটি হেলিকপ্টারে তিনি শান্তিনিকেতন যান। হেলিপ্যাড থেকে শেখ হাসিনা রবীন্দ্রভবনে পৌঁছালে মোদি তাকে স্বাগত জানান। এই সময় হাসিনার সঙ্গে ছিলেন তার বোন রেহেনা। সেখানে পুষ্পার্ঘ দিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। এরপর দুজনই সেখানে রাখা স্মারক মন্তব্য বইতে তাদের মতামত লিপিবব্ধ করেন। সেখান থেকে বিশ্বভারতীর প্রথা অনুযায়ী দুদেশের প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ও মোদি, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরী লাল ত্রিপাঠি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়সহ সকলেই হেঁটে আম্রকুঞ্জের মূল অনুষ্ঠানস্থলে আসন গ্রহণ করেন। মঞ্চে দুদেশের প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ও মোদির পাশেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও উপস্থিত ছিলেন। প্রথা অনুযায়ী আচার্য মোদি উপাচার্যের হাতে একটি ছাতিম পাতা তুলে দেওয়ার মাধ্যমে সমাবর্তন সূচনার নির্দেশ দেন। বেদ গান ও রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে সমাবর্তনের উদ্বোধন করা হয়েছে। স্বাগত ভাষণ দেন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজকলি সেন। এর পরেই ভাষণ দেন অতিথি হিসেবে উপস্থিত রামকৃষ্ণ মিশনের এক সন্ন্যাসী। সেই ভাষণ শেষে মোদি তার ভাষণ দেন।