পঞ্চম দিনেও অধরা প্রতারক সাহেদ

 

- Advertisement -

প্রিয় সংবাদ ডেস্ক :: রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম প্রতারণায় অভিনব সব কৌশল ব্যবহার করতেন। এখনও সেই কৌশল অবলম্বন করে প্রতারক সাহেদ অধরা রয়ে গেছেন। রিজেন্ট হাসপাতালে র‌্যাবের অভিযানের পাঁচ দিন পরও তাকে গ্রেফতার করা যায়নি। তাকে গ্রেফতারে র‌্যাব, পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ, পিবিআইসহ বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। শনিবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতাল ও রিজেন্ট গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে তার পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে।

একাধিক সূত্র জানায়, সাহেদের ফেসবুক আইডির বিভিন্ন পোস্ট ও গতিবিধি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এসব পর্যবেক্ষণে সাহেদের অভিনব প্রতারণার নানা কৌশল উঠে আসছে। সাহেদ করিমের অপকর্মের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, নানা ধরনের ভুয়া পরিচয়ের পাশাপাশি সাহেদ অন্তত ১১টি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিতেন।

এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অসংখ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সরকারি ও রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার প্রমাণ দেখিয়ে তিনি বছরের পর বছর নানা অপকর্ম করেছেন। প্রয়োজন অনুযায়ী বারবার নাম পরিবর্তন করায় তার সম্পর্কে ধোঁয়াশা ছিল পরিচিতজনদের অনেকের মাঝেই।

প্রতারণায় অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান এবং একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক পরিচয়ের তথ্য পেয়েছে র‌্যাব, পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ, পিবিআইসহ বিভিন্ন সংস্থা। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের বিভিন্ন পদের পরিচয় দেয়ার তথ্যও এসেছে তাদের হাতে।

সাহেদ করিম ওরফে মো. সাহেদের চেয়ারম্যান পরিচয় দেয়া ১১টি প্রতিষ্ঠান হল- সেন্টার ফর পলিটিক্যাল রিসার্চ, রিজেন্ট গ্রুপ, রিজেন্ট হসপিটাল লিমিটেড (উত্তরা), রিজেন্ট হসপিটাল লিমিটেড (মিরপুর), ঢাকা সেন্ট্রাল কলেজ, রিজেন্ট ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপারস লিমিটেড, রিজেন্ট কেসিএস লিমিটেড, কর্ণফুলী কর্মসংস্থান সোসাইটি (কেকেএস), রিজেন্ট আইটি সলিউশন এবং রিজেন্ট ফ্যাশনস অ্যান্ড ডিজাইন লিমিটেড।

‘দৈনিক নতুন কাগজ’ নামের একটি পত্রিকার সম্পাদক পরিচয় ছিল তার। এর বাইরে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপকমিটির সদস্য ও ন্যাশনাল প্যারা অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতির পরিচয় দিতেন সাহেদ।

রিজেন্ট হাসপাতালের মালিকের একটি ‘ভিজিটিং কার্ডেও’ এসব পরিচয় পাওয়া গেছে। সেনা কর্মকর্তা, দেশি ও বিদেশি সংস্থার ‘এজেন্ট’ বলে বিভিন্ন সময়ে পরিচয় দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম ‘সাহেদ করিম’ থাকলেও তিনি মো. সাহেদ নামেই বেশি পরিচিত হয়েছেন। ২০১০ সালে ধানমণ্ডির ২ নম্বর রোডের ১৫/এ বাসার ষষ্ঠতলায় কুরিয়ার সার্ভিসের ব্যবসা ছিল সাহেদের। সে সময়ে তার সঙ্গে কাজ করা রফিক নামের একজন যুগান্তরকে জানান, এখন যার নাম সাহেদ বলা হচ্ছে আমরা তাকে ‘মেজর ইফতেখার চৌধুরী’ বলে চিনতাম।

একদিন তার স্ত্রী অফিসে কল করে ‘সাহেদ’ নামের একজনের খোঁজ চান। তখন ইফতেখার জানান, তার ডাকনামই সাহেদ। মা তাকে সাহেদ বলে ডাকেন। তখন থেকেই তারা সাহেদ নামটি জানতে পারেন।

সেই অফিসে কাজ করা আরেক কর্মকর্তা যুগান্তরকে এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেন। নাম বিভ্রাটের কারণে সাহেদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ বা স্থগিত করার নির্দেশ দেয়া বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটকেও (বিএফআইইউ) চিঠিতে একাধিক নাম উল্লেখ করতে হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে দেয়া এক চিঠিতে বিএফআইইউ উল্লেখ করে, ‘রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. শাহেদ/সাহেদ/মো. শাহেদ করিম এবং তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে আপনার ব্যাংকে পরিচালিত সব হিসাবের লেনদেন অবরুদ্ধ করার নির্দেশ প্রদান করা হল।

র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম যুগান্তরকে বলেন, সে (সাহেদ) খুবই ধূর্ত প্রকৃতির লোক। যখন যে পরিচয় প্রয়োজন সেই পরিচয় সে ব্যবহার করত। রাজনৈতিক পরিচয় ছাড়াও বিভিন্ন ভুয়া পরিচয় দিত। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তোলা ছিল তার অন্যতম কাজ। প্রতারণায় এসব ছবি ঢাল হিসেবে ব্যবহার করত।

চাকরি, বদলি ও বিভিন্ন কাজ পাইয়ে দেয়ার তদবিরের নামে অর্থ আদায়ের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ভুয়া পরিচয় এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে সখ্য বোঝাত সাহেদ। অভিনব সব প্রতারণায় কখনও কখনও নারীদের ব্যবহারের অভিযোগও করেছেন ভুক্তভোগীরা।

পঞ্চম দিনেও অধরা সাহেদ : এদিকে উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে র‌্যাবের অভিযানের পাঁচ দিন পরও অধরা রয়ে গেছেন প্রতারক সাহেদ। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, র‌্যাব ও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আসতে হবে। পালানোর কোনো সুযোগ নেই।

শিগগিরই তার গ্রেফতারের খবর দিতে পারবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা। সাহেদকে গ্রেফতারে কাজ করা সূত্রগুলো জানিয়েছে, তাকে আটকে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে র‌্যাব ও পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। র‌্যাবের একটি সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার বাবা সিরাজুল করিমের মৃত্যুর পরও সাহেদ পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।

এতে করে বোঝা যাচ্ছে সাহেদ অত্যন্ত ধূর্ততার সঙ্গে গ্রেফতার এড়িয়ে চলছেন। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেফতারে প্রযুক্তি কাজে লাগাচ্ছে। পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারিও বৃদ্ধি করা হয়েছে। ঢাকা ও এর বাইরে কয়েকটি টিম কাজ করছে।

এ বিষয়ে র‌্যাবের মুখপাত্র এবং আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখছি। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি, আটকের বিষয়ে শিগগিরই তথ্য দিতে পারব।

র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সফিউল্লাহ বুলবুল যুগান্তরকে বলেন, আমরা সাহেদকে গ্রেফতারে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। এছাড়া অন্য সব সংস্থাও কাজ করছে। র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম যুগান্তরকে বলেন, আশা করছি খুব শিগগিরই সাহেদ ধরা পড়বে।

সাহেদের পাসপোর্ট জব্দ : শনিবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতাল ও রিজেন্ট গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে সাহেদের পাসপোর্ট জব্দ করা হয়। র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের উপস্থিতিতে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ পাসপোর্টটি জব্দ করে।

যুগান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম ও উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি তপন চন্দ্র সাহা। র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম যুগান্তরকে বলেন, মামলার তদন্তের স্বার্থে হাসপাতাল ও প্রধান কার্যালয় থেকে কিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে।

তাদের কম্পিউটারের হার্ডডিস্কে থাকা বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নষ্ট করে ফেলে রিজেন্ট কর্তৃপক্ষ। মূলত সেগুলো উদ্ধারের চেষ্টাই চালিয়েছে পুলিশ। এ সময় রিজেন্ট হাসপাতালের এমডির কক্ষ থেকে একটি কম্পিউটার, সাহেদের পাসপোর্ট ও প্রধান কার্যালয় থেকে বেশ কয়েকটি কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক উদ্ধার করা হয়।

উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি তপন চন্দ্র সাহা যুগান্তরকে বলেন, আমরা সাহেদকে ধরার জন্য অভিযান পরিচালনা করছি। মামলা হওয়ার পরপরই সংশ্লিষ্ট সবাইকে চিঠি দিয়েছি; যাতে তিনি দেশ ত্যাগ করতে না পারেন। সূত্র:: যুগান্তর

সর্বশেষ