মো.মুক্তার হোসেন বাবু:: চট্টগ্রামে দিনদিন কমছে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) নমুনা পরীক্ষা। গত শনিবার ৪৩১ জনের নমুনা পরীক্ষা হলেও গত রোববার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৩৬৮ জনের। এতে নতুন করে ৩৬ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। করোনা হতে সুস্থ হয়েছে আরো ৫৮ জন। গতকাল সোমবার সকালে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, চট্টগ্রামের ৩টি ল্যাবে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে ৩৬৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩৬ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তারমধ্যে নগরীর ২৮ জন ও জেলার বিভিন্ন উপজেলার ৮ জন। এনিয়ে চট্টগ্রামে মোট আক্রান্তে সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫ হাজার ৮৪৫ জনে। করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন আরো ৫৮ জনসহ মোট ৩ হাজার ৫৭৯ জন। করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ১ জনের মৃত্যুসহ মোট ২৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বরাবরের মতোই বাড়ছে। আক্রান্তের সংখ্যা না কমলেও কমে গেছে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা। সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে অধিকাংশ আক্রান্ত ব্যক্তিরা বাসাতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। ফলে অধিকাংশ আক্রান্ত ব্যক্তিরা হাসপাতাল বিমুখ হয়েছে-এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্যদিকে কেউ কেউ হাসপাতালে সেবা না পাওয়ার অভিযোগ করলেও চিকিৎসকরা জনসচেতনতা বৃদ্ধির কথা বলছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উত্তর কাট্টলী ১০ নম্বর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা কোভিড-১৯ পজিটিভ হলেও বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে আক্রান্তের সন্তান সুজন (ছদ্ম নাম) বলেন, আমার বাবাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে টেস্ট করিয়েছিলাম। ওখানের রিপোর্টে পজেটিভ আসে। এরপর উনাকে হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ভর্তি করাই। কিন্তু ওখানের অবস্থা বেশি খারাপ। ওখানের বাথরুমগুলো পর্যন্ত পরিষ্কার না। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে আমার বাবাকে বাসায় নিয়ে আসি। শ্বাসকষ্ট সমস্যার জন্য একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনেছি। এখন বাসাতেই চিকিৎসা চলছে।
জানা গেছে, হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালটি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের কোভিড ইউনিট-২ হিসেবে পরিচালিত হবে। সূচি অনুযায়ী হাসপাতালটিতে সরকারিভাবে চিকিৎসক, নার্স ও জনবল কাজ করবে। এরই মধ্যে এ হাসপাতালে ২০ জন চিকিৎসক পদায়ন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরো বেশকিছু ওয়ার্ডবয়, নার্স, স্টাফ নিয়োগ দেয়া হবে। চিকিৎসকরা এরই মধ্যে হাসপাতালে তাদের কর্মস্থলে যোগদান করেছেন। হাসপাতালটি একজন সহকারী পরিচালক বা তত্ত¡াবধায়কের অধীন পরিচালিত হবে।
হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে হাসপাতালটির তত্ত¡াবধায়ক ডা. মনোয়ার বলেন, বর্তমানে আমাদের হাসপাতালে রোগী নেই বললেই চলে। যে অল্প রোগী আছে, আমরা তাদের ভালোভাবে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। গত তিন-চার দিন আগে কোন রোগী ছিল না। গতকাল তিন জন রোগী ছিল, আজ আরও তিনজন ভর্তি হওয়ার কথা আছে। তবে জনবলের কোনো সংকট নেই। দ্বিতীয় ধাপে করোনার সংক্রমণ আবার বাড়তে পারে, এ সম্ভাবনা থেকে জনবল একইভাবে রাখা হয়েছে। যদি সংক্রমণ একেবারেই কমে যায়, তাহলে হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল থেকে জনবল সরানো হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের চট্টগ্রাম জেলা সাধারণ সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, আমাদের দেশে এখনো আক্রান্তের হার কমেনি। কিন্তু মানুষ সচেতন হওয়ার কারণে তারা আর হাসপাতলে আসছে না। বাসাতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। এরপরেও যাদের সিভিয়ার সমস্যা, শুধুমাত্র তারাই হাসপাতালে যাচ্ছেন। এছাড়া অন্যান্যরা করোনা মোকাবেলা করার জন্য বাসায় কিভাবে চিকিৎসা নিতে হবে তা বুঝে গেছেন। ফলে নিজেরাই বাসায় চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠছেন।
ল্যাব সূত্রে জানা গেছে, ২৪ ঘন্টায় ৩৬৮ জনের নমুনা পরীক্ষার মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ল্যাবে ৪৪টি নমুনা পরীক্ষা করে ৮ জন করোনা পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়। তারমধ্যে নগরীর ৩ জন ও জেলার বিভিন্ন উপজেলার ৫ জনের দেহে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) ১৮৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে শনাক্ত হয় আরও ৮ জন। এর মধ্যে নগরীর ৭ জন জেলার ও উপজেলার ১ জনের পজিটিভ। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ল্যাবে ১২৭টি নমুনা পরীক্ষা করে ২০ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ১৮ জন নগরীর ও ২ জন উপজেলার বাসিন্দা। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় কোনো করোনা শনাক্ত হয়নি। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলার ৮ জন শনাক্ত হয়েছে। এগুলো হলো, বাঁশখালী ১ জন, বোয়ালখালী ১ জন, রাউজান ৩ জন, হাটহাজারীর ২ জন এবং সীতাকুন্ড ১ জন।