চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়াম

প্রিয় সংবাদ ডেস্ক :: একপাশে সুইমিংপুল। অপর পাশে এমএ আজিজ স্টেডিয়াম। মাঝে অবহেলা-অনাদরে পড়ে রয়েছে চট্টগ্রামের খেলাধুলার ‘আঁতুড়ঘর’ খ্যাত আউটার স্টেডিয়াম। হঠাৎ দেখলে বিশ্বাস হবে না, এটা খেলার মাঠ।

- Advertisement -

মাঝখানটায় পানি জমে রূপ নিয়েছে ডোবায়। গজিয়েছে লম্বা লম্বা ঘাসের ঝোপঝাড়। এখানে-ওখানে বড় বড় গর্ত। কোথাও কোথাও আবর্জনার ভাগাড়। খেলাধুলা করা দূরের কথা, এই মাঠে কেউ পা রাখতেও সাহস পাবেন না। তাই বলে একেবারেই কোনো কাজে আসছে না, এমনটাও ভাবনেন না।

কাজীর দেউড়ির মূল সড়ক ঘেঁষে ফুটপাতের ওপর চটপটি-ফুচকার দোকান। পেছনে আউটার স্টেডিয়ামের কিছুটা জায়গাজুড়ে কেউ একজন চাষ করেছেন ঢেঁড়স! অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ঢেঁড়স ক্ষেতের মালিককে খুঁজে পাওয়া গেল না।

অথচ এই মাঠই চট্টগ্রামের কয়েক হাজার খেলোয়াড়ের অনুশীলনের একমাত্র ভরসা। এখানে খেলেই উঠে এসেছেন ক্রিকেটার আকরাম খান, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, নুরুল আবেদীন নোবেল, নাফিস ইকবাল, তামিম ইকবাল, আফতাব আহমেদ, নাজিম উদ্দিন, ফুটবলার আশীষ ভদ্র, মামুনুল ইসলামসহ অসংখ্য খেলোয়াড়। উজ্জ্বল করেছেন চট্টগ্রামের মুখ। সেই মাঠে এখন খেলা নেই। তাই উঠে আসছে না নতুন খেলোয়াড়।

একসময় সেকেন্ড ডিভিশন ফুটবল লিগ হতো এই মাঠে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সী ক্রিকেটার আর ফুটবলারের পদচারণায় থাকত মুখর। আউটার স্টেডিয়ামসহ চট্টগ্রামের সব মাঠ খেলাধুলার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছ ছাত্রলীগ। মহানগর ছাত্রলীগ গত শনিবার আউটার স্টেডিয়ামের সামনে আয়োজন করে মানববন্ধনের।

মাঠে নিয়মিত অনুশীলন করতেন এমন কয়েকজন ফুটবলার জানান, গত ডিসেম্বরে বিজয় মেলার পর মাঠ এবড়োখেবড়ো হয়ে যায়। সেখানে গড়ে ওঠে মিনি ট্রাক স্ট্যান্ড। এসব কারণে আর খেলার জন্য মাঠটি ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। এরই মধ্যে করোনার থাবা। এখন করোনা আতঙ্ক তেমন নেই। খেলোয়াড়রা অনুশীলন করতে চাইলেও মাঠে পানি জমে থাকায় সম্ভব হচ্ছে না। বৃষ্টি হলে পুুকুরে রূপ নেয়।

ঝোপ-জঞ্জাল যেন সাপখোপের বাসা। আউটার স্টেডিয়ামসহ চট্টগ্রামের খেলার মাঠগুলোর বেহাল দশায় হতাশ বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ও আশির দশকের জনপ্রিয় ফুটবলার আশীষ ভদ্র।

যুগান্তরকে তিনি বলেন, ‘আউটার স্টেডিয়াম ও রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ডে খেলে বড় হয়েছি। এখান থেকে অনেক ফুটবলার ও ক্রিকেটার একসময় উঠে এসেছেন। এখন মাঠ দেখলে কষ্ট হয়। খেলা নেই। সারা বছরই হয় মেলা, না-হয় অন্য কোনো ইভেন্ট। খেলতে না পারলে খেলোয়াড় তৈরি হবে কীভাবে? হোটেল র‌্যাডিসন ও শিশুপার্ক যেখানে হয়েছে, সেটাও খেলার মাঠ ছিল।’

‘আউটার স্টেডিয়ামে অনেকদিন যাইনি। যতদূর শুনেছি, বেশ কিছুদিন ধরে এটা খেলার অনুপযোগী হয়ে আছে। চট্টগ্রামের খেলাধুলার স্বার্থে এটার উন্নয়ন হওয়া দরকার। উন্নয়ন করবে কে? মাঠ তো সারা বছর চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) অধীনে থাকে না। ডিসেম্বরে বিজয় মেলা হয়। বছরের অন্যান্য সময়ও মেলা বসে। উন্নয়ন কাজ করার পর যদি মেলার কারণে মাঠ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে সিজেকেএস কেন আগ্রহী হবে। বিজয় মেলাটাও দরকার। তবে সেটা অন্য কোথাও স্থানান্তর করে আউটার স্টেডিয়াম সারা বছরই খেলাধুলার জন্য রাখতে পারলে ভালো হয়,’ বলেন আশীষ ভদ্র।

আউটার স্টেডিয়ামের উন্নয়নের দাবি জানিয়ে চট্টগ্রাম ফুটবল খোলোয়াড় সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক পারভেজ মান্নান বলেন, ‘নগরীর সব খেলার মাঠ কোনো না কোনোভাবে দখল হয়ে যাওয়ায় এটাই এখন খেলোয়াড়দের শেষ ভরসা।

কিন্তু এই মাঠ পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে থাকায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্তরের ছয় হাজারের বেশি ফুটবলার অনুশীলন থেকে বঞ্চিত। বিরোধিতা সত্ত্বেও এক দশকের বেশি সময় আগে সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহেদ আজগর চৌধুরীর সময় মাঠের আট ফুট দখল করে মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছিল। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের সময় একপাশে করা হয়েছে সুইমিংপুল। মাঠের বাকি যেটুকু অবশিষ্ট আছে, তা মিনি ট্রাকের গ্যারেজ আর মেলার দখলে থাকে সারা বছর।

অথচ, এখানে একসময় সেকেন্ড ডিভিশনের ফুটবল গ্রাউন্ড, হকি গ্রাউন্ড ও লং টেনিস কোর্টের পরিকল্পনা ছিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের। কিছুই আর হল না।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমানে সিজেকেএস যদি মাঠটি ভরাট করে চারদিকে বেড়া দিয়ে দেয়, তাহলে ফুটবলার ও ক্রিকেটাররা অনুশীলন করতে পারতেন। এটা খুব কঠিন কাজ নয়। উদ্যোগ নিলেই সম্ভব।’

মাঠ সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিজেকেএস’র অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দীন শামীম।

যুগান্তরকে তিনি বলেন, ‘সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন তার ব্যক্তিগত অর্থে এটি সংস্কার করছেন। এর জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়ে গেছে। চারদিকে বেড়া দিয়ে ভেতরে সুন্দর ঘাসের মাঠ তৈরি করা হবে।’ সূত্র:: যুগান্তর

সর্বশেষ