যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমেদ জোসেফ রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় মুক্তি পাওয়ার পর তা নিয়ে সামাজিকমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এ নিয়ে বর্তমান ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগ সরকারের টানা দুই মেয়াদে ২০ জনের বেশি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় ছাড়া পেয়েছেন।
বিবিসি বাংলার তথ্য মতে, জোসেফের আগে ২০১৬ সালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত একজন আসামিকে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করেছিলেন।
এ ছাড়া ২০১১ সালে জাতীয় সংসদে একজন সংসদ সদস্যের প্রশ্নে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর একটি পরিসংখ্যান দিয়েছিলেন। সেই অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়ে ২০০৯-২০১১ সাল পর্যন্ত ২১ জনের মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করা হয়েছে। এগুলোর ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক বিবেচনার প্রশ্ন উঠেছিল।
সিনিয়র আইনজীবী শাহদিন মালিক বলছিলেন, রাষ্ট্রপতির এ ক্ষমতা প্রয়োগের কারণ যেহেতু ব্যাখ্যা করা হয় না, সেখানে এই অস্বচ্ছতার কারণেই জনমনে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি এ ক্ষমতা কিভাবে প্রয়োগ করে, সে ব্যপারে শাহদিন মালিক বলেছেন, এ ক্ষমতা ব্যবহার বা প্রয়োগ করা দুটি কারণে। একটি হল- কারও বিচারে শাস্তি হয়েছে। এর পনেরো-বিশ বছর পর হঠাৎ বোঝা গেল যে, তার বিচারে ভুল হয়েছে। তখন আবার বিচারে তাকে নির্দোষ প্রমাণে না গিয়ে রাষ্ট্রপতি তাকে ক্ষমা করতে পারেন।
‘আরেকটি- একবারে মানবিক কারণে হতে পারে। কারও সাজার বড় অংশ খাটার পর ক্যান্সার বা দুরারোগ্য কোনো ব্যাধি হয়েছে। ডাক্তার বলেছে সে আর বাঁচবে না। তখন রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করতে পারেন’, উল্লেখ করেন এ আইনজীবী।
তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্যবশত এ ধরনের কোনো কারণ বলা হয় না। তখন ওই সন্দেহটা জাগে যে রাজনীতি বা অন্যান্য বিবেচনা থেকে হতে পারে, সে জন্য জনমনেও প্রশ্ন জাগে।
কয়েক বছর আগে সাজা মওকুফ নিয়ে হাইকোর্ট থেকে একটি রায় এসেছিল। তাতে বলা হয়, সাজা মওকুফের ক্ষেত্রে কারণ ব্যাখ্যা করা উচিত। এ ব্যাপারে একটি নীতিমালা তৈরির নির্দেশও ছিল সেই রায়ে। সেই নীতিমালা এখনও হয়নি বলে জানা গেছে।
তবে আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংবিধানেই রাষ্ট্রপতির এ ক্ষমতা প্রয়োগের ব্যাপারে পরিষ্কার বলা আছে এবং সব নিয়ম মেনেই কারও সাজা মওকুফের সিদ্ধান্ত আসে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলছিলেন, সাধারণ জনগণের মধ্যেও নানান প্রশ্ন তৈরি করে যে, কেন ক্ষমা করা হল? কার প্রভাবে ক্ষমা করা হল? কোনো স্বার্থে ক্ষমা করা হল, ইত্যাদি ইত্যাদি। এই যে বাড়তি প্রশ্নগুলোর সম্মুখীন হতে হয়। এটি কিন্তু আইনের শাসনের জন্য এবং বিচার বিভাগের জন্য খুব একটা সুখকর ব্যাপার নয়।
তবে আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, স্বচ্ছ্বতার সঙ্গে এবং সংবিধান অনুযায়ী সাজা মওকুফের সিদ্ধান্তগুলো হয়ে থাকে।