রাজপথে আন্দোলনের পক্ষে মত নেতাদের

 

- Advertisement -

প্রিয়সংবাদ ডেস্ক :: রাজপথে আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়ার পক্ষে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা বলেছেন, আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে বাধ্য করতে হবে।

আগামী নির্বাচনের আগে বিদায় করতে হবে এ সরকারকে। পাশাপাশি দল গুছিয়ে এখন থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অনেকে।

মঙ্গলবার বিএনপির হাইকমান্ডের সঙ্গে সিরিজ বৈঠকের প্রথম দিন এসব বিষয় তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় নেতারা। বিকাল ৪টায় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ সভা শুরু হয়। চলে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা। সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন তিনি।

বৈঠক সূত্র জানায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপির কী করা উচিত, আন্দোলনের কর্মকৌশল কী হওয়া উচিত, মাঠ পর্যায়ের সংগঠনকে আরও সক্রিয় করতে কী করা প্রয়োজন ইত্যাদি বিষয়ে নেতারা মত দেন। তারা বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে দলের পক্ষ থেকে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। বলতে গেলে এ ইস্যুতে আমরা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছি। তাই তাকে (খালেদা জিয়া) মুক্ত করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করতে হবে। জোটের রাজনীতি বিশেষ করে জামায়াত ইস্যুতে দলের অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি জানান কেউ কেউ। দুজন উপদেষ্টা ও একজন ভাইস চেয়ারম্যান জামায়াত ইস্যুতে কথা বলেন। তারা জানান, জামায়াতের সঙ্গে জোট করায় বিএনপিই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই এখনই তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দল পুনর্গঠন নিয়েও কথা বলেন বেশির ভাগ নেতা।

তারা বলেন, আন্দোলনের জন্য দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে হবে। কিন্তু নানা কারণে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া গতি আসছে না। তা ছাড়া পুনর্গঠন নিয়েও নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা অসন্তোষ রয়েছে। যোগ্য ও ত্যাগীদের বাদ দিয়ে অনেক জায়গায় সুবিধাবাদীদের নেতৃত্বে আনা হচ্ছে। এতে ত্যাগীরা হতাশ হয়ে পড়ছেন। দ্রুত দল পুনর্গঠন শেষ করে সীমিত পরিসরে হলেও জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের পক্ষে মত দেন কেউ কেউ।

আগামী দিনের আন্দোলন ও নির্বাচনের রূপরেখা চূড়ান্ত করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের মত নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। তারেক রহমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে সবচেয়ে বড় সভা।

তিন দিনের সিরিজ সভায় প্রথম দিন মঙ্গলবার দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যানদের সঙ্গে এ বৈঠক হয়। আজ নির্বাহী কমিটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব, যুগ্ম-মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদক ও সহ-সম্পাদকদের নিয়ে বৈঠক হবে। আগামীকাল অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে হবে বৈঠক। ইতোমধ্যে সাড়ে তিনশ নেতাকর্মীকে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করবে বিএনপি।

গতকালের বৈঠকে দলটির ৭৩ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ ও ৩৫ জন ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে ৬২ জন সভায় যোগ দেন। অসুস্থ থাকায় কয়েকজন আসতে পারেননি। এ ছাড়া মারাও গেছেন কয়েকজন। প্রতিটি সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন। তবে সবাইকে বাধ্যতামূলক সভায় থাকতে হবে এমন কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি। স্থায়ী কমিটির সদস্যরা পর্যায়ক্রমে সভায় অংশ নেবেন। সভায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য-ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন। ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ও সেলিমা রহমান অসুস্থতার কারণে আসতে পারেননি। এ ছাড়া মির্জা আব্বাস মামলার হাজিরা দিতে আদালতে যান। আজ বাকিদের অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।

সভায় ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে শাহজাহান ওমর, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মাহমুদুল হাসান, মীর নাসির উদ্দিন, বরকতউল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, জয়নাল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, শওকত মাহমুদ এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা-মনিরুল হক চৌধুরী, মশিউর রহমান, আমান উল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, হাবিবুর রহমান হাবিব, লুৎফর রহমান খান আজাদ, আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, আবদুল হাই, গোলাম আকবর খন্দকার, অধ্যাপক শাহেদা রফিক, আফরোজা খানম রীতা, তাহসিনা রুশদীর লুনা, অধ্যাপক তাজমেরী এস ইসলাম, ইসমাইল জবিল্লাহ, তৈমূর আলম খন্দকার, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, আতাউর রহমান ঢালী, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, নজমূল হক নান্নু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া সভার সার্বিক সহযোগিতায় উপস্থিত ছিলেন চেয়ারপারসনের একান্ত সহকারী এবিএম আবদুস সাত্তার, সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ ও রিয়াজ উদ্দিন নসু। সভার সঞ্চালক ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও দপ্তরের দায়িত্বে থাকা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।

এদিকে সভা শুরু ও শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে আমাদের কী করণীয়-সেসব বিষয়ে নেতাদের মতামত নিতে এই বৈঠক ডাকা হয়েছে। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির উত্তরণে দলের করণীয় সম্পর্কে জ্যেষ্ঠ নেতাদের মতামত নিয়েছেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, সভায় দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও দলের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর বেশি কিছু এখন বলার নেই।

সভায় আলোচনার বিষয় যাতে গণমাধ্যমে না আসে সেজন্য নেতাদের কঠোর বার্তা দেন তারেক রহমান। সভা শেষ হওয়ার পর একাধিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তবে সভায় উপস্থিত দলের কয়েক নেতা যুগান্তরকে বলেন, বৈঠকে বেশির ভাগ নেতাই আন্দোলনের পক্ষে মত দিয়েছেন। তিনজন জামায়াতকে জোট থেকে বিদায় করার পক্ষে বক্তব্য দেন।

সর্বশেষ