সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ে ভীতি ঢুকেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে। এই মাধ্যমটি এখন সবার হাতের মুঠোয় হওয়ায় এটি সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলটির নীতিনির্ধারণী মহল বলছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এতই শক্তিশালী যে এখানে ভালোটি যেমন সহজে ছড়িয়ে পড়ে, অপপ্রচারও সবার কাছে পৌঁছায় সহজে। আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অপপ্রচারের মাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।এ অবস্থায় সম্ভাব্য সেই পরিস্থিতি নিয়ে এখনই আওয়ামী নেতাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্রগুলো বলছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি ব্যবহারে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের আগ্রহী করে তুলতে হবে। এখানে বেশি করে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে হবে। যাতে করে অপপ্রচারের তোড়ে সরকারের অর্জন হারিয়ে না যায়।
আওয়ামী নেতাদের দাবি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নামার চক্রান্ত ততই বাড়ছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা আশঙ্কা করছেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে এই অপপ্রচারের মাত্রাও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। ফলে এর লাগাম কীভাবে টানা যায়, তা নিয়ে চলছে পরিকল্পনা-পর্যালোচনা। এক্ষেত্রে এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল ব্যক্তিদের দিয়ে বিভিন্ন গবেষণা চালানো হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা জানান, টানা ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকায় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের মাত্রা বাড়ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহজলভ্য হওয়ায় এই মাধ্যম ব্যবহার করে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা অব্যাহত আছে, আগামীদিনেও থাকবে। তাই এখনই অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, ‘একটি মহল সুপরিকল্পিতভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন থেকে অপপ্রচারে নেমেছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশে কোনও ঘটনা ঘটলেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সেই ঘটনায় উসকানি দেওয়ার চেষ্টা চলে। সর্বশেষ কোটাবিরোধী আন্দোলনেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের ঘটনা ঘটেছে। এগুলোর লাগাম টানা জরুরি।’
জানা গেছে, এসব অপপ্রচার মোকাবিলা করতে একদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমনির্ভর একটি মেধাবী টিম গড়ে তোলা হবে। মিডিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত ও রুচিশীল তরুণদের সমন্বয়ে এই টিম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবে। তারা যেমন অপপ্রচরের জবাব দেবে, তেমনি ১০ বছরে সরকার যেসব উন্নয়ন করেছে তা তুলে ধরবে এই টিম।
এই টিমকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এবং শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান সিদ্দিকী ববি।
জানা গেছে, বিষয়টি কীভাবে মোকাবিলা করা যায় তা নিয়ে রীতিমতো গবেষণা চলছে দলটির ভেতরে। আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জানান, যেসব আইডি থেকে অপপ্রচার চলে সেগুলোর ব্যাপারে অনুসন্ধান চালানো হয়েছে।
দেখা গেছে, এসব আইডির বেশিরভাগই ‘ফেক’। এর প্রায় সবগুলোই দেশের বাইরের আইডি। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে এবং যুক্তরাজ্য থেকে এসব ফেক আইডি ব্যবহার করা হচ্ছে।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এগুলোর লাগাম টানতে বিটিআরসির সহযোগিতাও চাওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, ‘সরকারের বিরোধী বিভিন্ন সংগঠন রাজনৈতিক মাঠে পরাস্ত হয়ে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে অপপ্রচারে নেমেছে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে। এই চেষ্টা বহুদিন ধরে চলে আসছে।’ সময় এসেছে চক্রান্তকারীদের চিহ্নিত করার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন