spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

গাজীপুরে প্রাইভেট কার থেকে শিক্ষক দম্পতির মরদেহ উদ্ধার

spot_img

গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানার বগারটেক এলাকায় নিজ প্রাইভেট কারের ভেতর থেকে এক শিক্ষক দম্পতির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

- Advertisement -

মৃতরা হলেন টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জিয়াউর রহমান মামুন (৫১) ও তাঁর স্ত্রী আমজাদ আলী স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা মোসা. মাহমুদা আক্তার জলি (৩৫)। এ কে এম জিয়াউর রহমান মামুন ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল থানার দড়ি কাঁঠাল গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে। তাঁরা গাজীপুর মহানগরীর ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের গাছা থানাধীন কামারজুরি এলাকায় বসবাস করতেন।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার দেলোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বুধবার গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী এলাকার শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও তাঁর স্ত্রী স্কুল শেষে মহানগরীর গাছা এলাকায় নিজ বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হন। কিন্তু তাঁরা আর রাতে বাসায় ফেরেননি। স্বজনরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁদের কোন সন্ধান পাননি। আজ বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে বাসার ফেরার পথে গাছা থানাধীন বড়বাড়ি জয়বাংলা সড়কের বগারটেক এলাকায় নিজের প্রাইভেট কারের ভেতর স্টিয়ারিংয়ের প্রধান শিক্ষক ও পাশে তাঁর স্ত্রীকে নিস্তেজ অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের গাড়ি থেকে বের করে উত্তরা নস্ট্রামস হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।’

ওই শিক্ষক দম্পতির ছেলে একেএম তৌসিবুর রহমান বলেন, ‘অন্যান্য দিনের মতো বুধবার সকালে নিজ বাড়ি থেকে প্রাইভেট কারে আব্বা-মা স্কুলের উদ্দেশে বের হন। পরে স্কুলের কাজ শেষে সন্ধ্যায় তাঁরা একসঙ্গে স্কুল থেকে বাসার উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু পরে তাঁরা আর বাসায় ফেরেননি।’

তৌসিবুর রহমান বলেন, ‘সব শেষ তাঁদের সঙ্গে আমার সন্ধ্যা ৬টা ৪১ মিনিটে কথা হয়। পরে আর বাবা-মায়ের মোবাইল ফোনে ফোন দিলে কল রিসিভ করেনি। রাত ১০টার মধ্যে বাসায় না ফিরলে আমি ও আমার চাচা আতিকুর রহমান, আত্মীয় শাহ আলমসহ আমরা খোঁজাখুঁজি শুরু করি। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে বৃহস্পতিবার ভোরে গাছা থানাধীন বগারটেক ব্রিজের পশ্চিম পার্শ্বে পাকা রাস্তার ওপর তাঁদের গাড়ি খুঁজে পাওয়া যায়। এ সময় গাড়ির ডানপাশে সামনের দরজা টান দিলে দরজা খুলে যায়। তখন দেখা যায়, বাবা স্টিয়ারিংয়ে বসা এবং মা ড্রাইভিং সিটের বাম পাশের সিটে বসা। পরে তাঁদের গাড়ি থেকে বের করে উত্তরা নস্ট্রামস হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘তাঁদের মৃত্যুর কারণ জানার চেষ্টা চলছে।’

কথা বলার এক সময়ে তৌসিবুর রহমান কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, ‘আমার আব্বা ও মাকে হত্যা করা হয়েছে। আমি মন্ত্রীর কাছে (স্থানীয় এমপি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী) আমার আব্বা-‍মা হত্যার বিচার চাই। ওনার (মন্ত্রীর) বাবা (শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার) আমার আব্বাকে অনেক পছন্দ করতেন। আমি এ হত্যার বিচার চাই।’

জিয়াউর রহমান মামুনের ভগ্নিপতি আব্দুর রশিদ বলেন, ‘বুধবার সন্ধ্যায় শেষবার তাঁদের সঙ্গে কথা হয়। তখন তারা জানায়, উভয়ে একসঙ্গে বাসার দিকে ফিরছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ সময় মাহমুদা আক্তার জলির কণ্ঠ খুব ভারী ও দুর্বল মনে হচ্ছিল। এরপর থেকে তাঁদের আর ফোনে পাওয়া যায়নি।’

মাহমুদা আক্তার জলির বোন আহমিদা আক্তার লিমা বলেন, ‘তাঁরা বাসায় না ফেরায় আমরা রাতে অনেক স্থানের খোঁজাখুঁজি করি। ভোরে জানতে পারি তাঁদের প্রাইভেট কার বগারটেক পাওয়া গেছে। পরে সেখান থেকে তাঁদের উত্তরার একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘উত্তরা হাসপাতালের চিকিৎসক জানিয়েছেন, তাঁদের খাদ্য দ্রব্যের সঙ্গে কিছু মিশিয়ে খাওয়ানো হয়ে থাকতে পারে।’ তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার দাবি করেন।

জিএমপির উপ পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-দক্ষিণ) ইলতুৎমিশ বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’

ওই শিক্ষকের ভাই আতিকুর রহমান বলেন, ‘বুধবার বিকেল থেকে আমার ভাই ও তাঁর স্ত্রীকে পাওয়া যাচ্ছিল না। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁদের গাড়ির ভেতর পাওয়া যায়। কীভাবে কি হলো কিছুই বুঝতে পারছি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশালে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁদের দাফন করা হবে।’

spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

সর্বশেষ