মঙ্গলবার,১০ এপ্রিল,২০১৮
প্রিয় সংবাদ ডেস্ক : দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া দেশে আগামীতে কোনো নির্বাচন হবে না এবং হতে দেয়া হবে না হুঁশিয়ারি দিয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলেছেন, তাকে নিয়ে বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে।
সিলেট মহানগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠে মঙ্গলবার বিকেলে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে সিলেট বিভাগীয় সমাবেশে নেতারা এসব কথা বলেন। সমাবেশের আয়োজন করে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ক্ষমতাসীন সরকার ভেবেছিল বেগম খালেদা জিয়াকে জেলখানায় বন্দি রেখে বিএনপিকে দুর্বল করা যাবে। কিন্তু তাদের সেই আশা ব্যুমেরাং হয়েছে। তিনি সরকারকে অবিলম্বে সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়ে বলেন, আমাদের ‘এক দফা এক দাবি, স্বৈরাচার তুই কবে যাবি?’ ‘এক দফা এক দাবি, হাসিনা তুই কবে যাবি?’ ‘শেখ হাসিনার সময় শেষ, খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ।’
উপস্থিত নেতা-কর্মীদের আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমেই বেগম খালেদ জিয়াকে মুক্ত করা হবে এবং তার নেতৃত্বেই বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। সরকার বিএনপি এবং বেগম খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখে আবারো ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো একতরফা নির্বাচনের ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু ওই নির্বাচন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। সুতরাং বর্তমান সরকার অনির্বাচিত এবং সংসদ অবৈধ। কেননা এই সরকার ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে নিয়ম ও সংবিধান রক্ষার নির্বাচন বলে জনগণের সাথে প্রতারণা করেছে। বিদেশি বন্ধুদের সাথেও প্রতারণা করেছে। এজন্যই সরকার জনগণকে ভয় পায়। কিন্তু জনগণ ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে আওয়ামী লীগের পাত্তা থাকবে না। তাদেরকে জনগণ বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করবে।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, সরকার ভেবেছে বেগম খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করে বিএনপিকে দুর্বল করা যাবে। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন ব্যুমেরাং হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া আজকে দেশনেত্রী থেকে বিশ্বনেত্রী উপাধী পেয়েছেন। আজকে তাকে নিয়ে শুধু দেশবাসী নয় বিশ্ব নেতৃবৃন্দও উদ্বিগ্ন। তিনি আজকে দেশনেত্রী থেকে দেশমাতা উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। বিএনপি দুর্বল হয়নি। বরং আমরা নেতৃবৃন্দ আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শ ও নির্দেশে দল পরিচালনা করছি।
কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, আজকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ লেলিয়ে দেয়া হচ্ছে। আক্রমণ করা হচ্ছে। দেশকে মেধাশূন্য করা হচ্ছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন যৌক্তিক বলে দাবি করেন তিনি।
একই সমাবেশে উপস্থিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, এই সরকার বরাবরই আমদের কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তায় ভয় পায় বলে তাকে অন্ধকার কারাগারে নিক্ষেপ করেছে। বেগম খালেদা জিয়াকে পিজি হাসপাতালে নিয়ে এসেছিল। তার বিন্দুমাত্র মনোবল ভাঙেনি। ম্যাডাম খালেদা জিয়া বলেছেন, গণতন্ত্র উদ্ধার করতে আন্দোলন চালিয়ে যেতে। বিএনপির এই নেতা বলেন, স্বৈরাচার আর গণতন্ত্র এক সাথে চলতে পারে না। এ স্বৈরাচারী সরকার যত গুম-খুন, দুর্নীতি করেছে তার জবাব দিতে হবে। তারা এত অপরাধ করেছে যে এর ভয়ে তারা কম্পমান। শেখ হাসিনা ও এই সরকারের অত্যাচার হিটলারকেও ছাড়িয়ে গেছে। স্বৈরাচার বেশিদিন টিকতে পারে নাই। এরাও পারবে না। এদের পতন ঘটিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত করা হবে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, খালেদা জিয়া বন্দী মানে গণতন্ত্র বন্দী। গণতন্ত্র উদ্ধার করতে হলে, যারা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে তাদেরকে আসন থেকে সরাতে হবে। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে, যারা তাকে বন্দী করেছে তাদের পতন ঘটাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। আইনিভাবে বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে দুই মাস আগেই মুক্তি পেতেন। তাকে মুক্তি করতে হলে যারা তাকে বন্দি করে রেখেছে তাদের পতন ঘটাতে হবে। আমাদের শান্তির বাণী অশান্তির নেত্রীর কাছে পৌঁছাবে না। যারা অন্যায়ভাবে আমাদের উপর নির্যাতন গুম-খুন ও দুর্নীতি করছে, ব্যাংক ডাকাতি করে তাদেরকে হঠাতে হবে। এরশাদকে যেভাবে পতন ঘটানো হয়েছিল শেখ হাসিনাকে হটাতে সে পথে যেতে হবে। অন্যথায় গণতন্ত্র মুক্তি পাবে না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন ৪ হাজার কোটি টাকা কোনো ব্যাপারই না। অথচ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুই কোটি টাকা না খেয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সরকার বিএনপিকে নিয়ে নানা ভাবে ষড়যন্ত্র করছে। ওবায়দুল কাদের বলছেন বিএনপি কে চালায়। দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে বিএনপি পরিচালিত হচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপারসন মুক্ত বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি নির্বাচনে যাবে। তবে সে নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব থাকবে না। নেতৃত্বে থাকবে জনগণ। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থাকবে না।
ড. আবদুল মঈন খান বলেন, এই সরকারের ভিত্তি নাই। তারা অবৈধ পন্থায় সরকার গঠন করেছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান গণতন্ত্র যেভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তেমনি বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে হারানো গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করবো। আওয়ামী লীগকে বলবো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বাদ দিয়ে রাজপথে আসুন, আমরা আপনাদের রাজপথে মোকাবেলা করবো। আজকের শপথ হউক বেগম খালেদা জিয়ার মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকবো।
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, গণতন্ত্রের মা কে আজ সরকার বন্দি করে রেখেছে। গণতন্ত্রের মা কি কারাগারে থাকতে পারে? গণতন্ত্র সাগরের মতো সাগরকে কেউ বাঁধ দিয়ে আটকিয়ে রাখতে পারে না। সাগর আজকে জেগে উঠেছে। সাগরের এই পানি দুর্নীতিবাজ আর খুনিদের ভাসিয়ে দেবে।
বিএনপির সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, জনগণের প্রতিটি অধিকার নিয়ন্ত্রণ করছে এই অবৈধ সরকার।
তিনি বলেন, কয়েক মাস আগে আমাদের নেত্রী মাজার জিয়ারত করতে আসায় তাকে স্বাগত জানিয়ে আপনারা সিলেটবাসী আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন, আপনাদেরকেই এটার সমাপ্তি করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল, কিন্তু তার মা আইসিইউতে থাকায় তিনি সমাবেশে আসতে পারেননি।
সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসেনের সভাপতিত্বে এবং সিলেট মহানগর বিএনপির বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান সেলিম ও সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদসহ আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী, মো. শাহজাহান, বরকত উল্লাহ বুলু, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, ফজলুল হক আসপিয়া, এনামুল হক চৌধুরী, খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, এম এ হক, সাবেক সংসদ সদস্য আবুল খায়ের চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, দিলদার হেসেন সেলিম, কলিম উদ্দিন আহমেদ মিলন, সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, জাসাসের সাধারণ সম্পাদক হেলাল খান, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম, জেলা বিএনপির সদস্য এটিএম বেলায়েত হোসেন মোহন, বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার, অ্যাড. আবেদ রাজা, যুবদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সহসভাপতি নুরুল ইসলাম সাজু প্রমুখ।