ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে খুলনার রাজনৈতিক অঙ্গন। দীর্ঘ দেড় দশকেরও বেশি ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।
এরই মধ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারবিরোধী লাগাতার আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে দলটি। তৃণমূল পর্যায়ে নানা কর্মসূচি পালন করছে। আর এসব কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘটছে দফায় দফায় সংঘর্ষ, সংঘাত ও ভাঙচুর। এতে আহত হয়েছেন উভয় দলের বেশ কিছু নেতাকর্মী।
এ অবস্থায় অনেকটাই মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন দুই দলের নেতাকর্মীরা। খুলনায় রাজপথ দখল নিয়ে তাদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে।
এ অবস্থার মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) বিকেলে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার পথের বাজারে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় দলের ১৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপি বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) বিকেলে পথের বাজার সংলগ্ন সেনহাটী লুৎফরের বটতলায় জ্বালানি তেলসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে।
নির্ধারিত স্থানে সমাবেশ শেষে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পথেরবাজার অতিক্রমের সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় পথেরবাজার দলীয় অফিস এলাকায় উভয়ের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে আওয়ামী লীগের ৬ জন এবং বিএনপির ৯ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে উভয় দলের নেতারা অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে খুলনা জেলা বিএনপি রাত ৮ টায় সংবাদ সম্মেলন করেছে। তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ তোলেন।
অপরদিকে বিএনপির অভিযোগকে মিথ্যা বলে আখ্যায়িত করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।
এর আগের দিন বুধবার (২৪ আগস্ট) বিকেলে খুলনা মহানগরীর দৌলতপুরে বিএল কলেজ রোডে থানা বিএনপির কার্যালয়ে হামলা ব্যাপক ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে। সংঘটিত এ হামলার ঘটনায় বিএল কলেজ শাখা ছাত্রলীগকে দায়ী করেছেন বিএনপি নেতারা।
এছাড়া গত ১৭ আগস্ট নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সমাবেশে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সমাবেশস্থলে শতাধিক চেয়ার-টেবিল ও ৩০টির বেশি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। আহত হয় বিএনপির সিনিয়র নেতাসহ ৩৫ নেতা-কর্মী।
বিএনপি নেতারা সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, যুবলীগ ও ছাত্রলীগরা স্লোগান দিয়ে ঘটনাস্থলে এসে হামলা করে।
তবে, অভিযোগ অস্বীকার করে যুবলীগ নেতারা বলছেন, বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে কটূক্তি করায় বিএনপি-জামায়াতকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে একই স্থানে একই দিনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কর্মসূচি ঘোষণা করায় সংঘর্ষ এড়াতে পুলিশ দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে ভিন্ন তারিখে ভিন্ন স্থানে কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানায়।
এর আগে গত ২৬ মে নগরীর পিকচার প্যালেস ও কেডি ঘোষ রোডে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষ হয়।
সরকারি দলের নেতাদের অনেকে মনে করছেন, জনগণের দোহাই দিয়ে বিএনপি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুতের মতো বিষয় সামনে এনে মূলত নির্বাচনের আগে মাঠ উত্তপ্ত করতে চাইছে।
ইতোমধ্যে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচি, সভা-সমাবেশে নেতাদের বক্তব্য রাজনৈতিক মাঠে উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে। তাদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও মাঠে রয়েছে।
স্থানীয় বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকার পতনের আন্দোলনে খুলনা এবার আর কোনোভাবেই পিছুপা হবে না। তাদের সংগ্রাম চলবেই অবিরাম।
অপরদিকে এসব কর্মসূচি রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করার পাল্টা হঁশিয়ারি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা জানান, অতীতের মতো আন্দোলনের নামে সহিংসতা হলে নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা। আর বিএনপি বলছে, যত বাধাই আসুক এবার আর মাঠ ছাড়বেন না তারা।
খুলনা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এসএম মনিরুল হাসান বাপ্পী বলেন, দিঘলিয়া উপজেলায় বিএনপির সমাবেশে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ হামলা করেছে। এতে ১০-১২ জন আহত হন। এছাড়া ১৭ নং ওয়ার্ড ও বিএল কলেজের সামনের সমাবেশেও ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা হামলা চালিয়েছে।
তিনি বলেন, উপজেলা ভিত্তিক আমরা কোনো থানায় সমাবেশ করতে চাইলে আওয়ামী লীগও সেই স্থানে একই সময়ে সমাবেশের আহ্বান জানায়। সাধারণ জনগণ আমাদের সমাবেশে যে হারে অংশ নিচ্ছে তা দেখে ভয় পেয়ে আওয়ামী লীগ হামলা চালাচ্ছে।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা দাবি করেন, বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হতে দেখে আওয়ামী লীগ আতঙ্কগ্রস্ত। কোথাও পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে, আবার কখনো পুলিশ-আওয়ামী লীগ সংঘবদ্ধ হয়ে বিএনপির ওপর হামলা চালাচ্ছে। মহানগর যুবলীগের এক শীর্ষ নেতার নেতৃত্বে হেলমেট পরিহিত সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র অবস্থায় জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে হামলা চালিয়ে ১৭নং ওয়ার্ড বিএনপির কর্মীসভা পণ্ড করেছে।
খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক মো. মফিদুল ইসলাম টুটুল বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি সহিংসতার রাজনীতির দিকে এগোচ্ছে। উত্তেজনাকর বক্তব্য দিচ্ছে। খুলনার রাজনৈতিক অঙ্গনের সহঅবস্থান নষ্ট করছে। নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে মারামারির করে আওয়ামী লীগের ওপর তার দায় চাপাচ্ছে বিএনপি। তাদের সহনশীল রাজনীতিতে ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।
খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা বলেন, বিএনপি সভা সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে উদ্ভট অসত্য মন্তব্য করছে। সরকার নিয়ে লাগামহীন বক্তব্য দিচ্ছে। যার কারণে সাধারণ মানুষ তাদের প্রতিহত করছে। আওয়ালীগ তাদের ওপর কোনো হামলা করছে না।