spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

খোলা আকাশের নিচে পাকিস্তানের বানভাসিরা

spot_img

গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বর্ষণ ও পাবর্ত্য হিমবাহ গলে চলতি বছরের বর্ষায় বাড়িঘর, সহায়-সম্বল সব হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন অন্তত ৬ লাখ ৬০ হাজার ১২০ জন মানুষ। আশ্রয়কেন্দ্রের অভাবে এই বানভাসিদের বেশিরভাগকেই থাকতে হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে।

- Advertisement -

খাদ্য-আশ্রয়ের অভাব এবং পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাবে স্মরণকালের ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছেন পাকিস্তানের বন্যার্ত জনগণ।

পাকিস্তানের স্বাস্থ্যকর্মীদের সংগঠন পাকিস্তান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের করাচি শাখার সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল গাফুর শোরো দেশটির জাতীয় দৈনিক ডনকে বলেন, ‘বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আশ্রয়ের অভাব। আজ আমরা মিরপুরখান. তান্দো মুহাম্মদখান ও তান্দো আদম এলাকায় গিয়েছিলাম; কিন্তু কোথাও সরকার পরিচালিত কোনো ত্রাণ শিবির দেখতে পাইনি।’

‘সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রের অভাবে বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকার জনগণ খোলা আকাশের নিচে থাকতে বাধ্য হচ্ছে, খাচ্ছে দুষিত পানি। আর খাদ্যের জন্য তারা নির্ভর করতে হচ্ছে স্থানীয় জমিদার ও ধনাঢ্য ব্যক্তি এবং অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দয়ার ওপর। এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো ত্রাণ সেখানে পৌঁছায়নি।’

আবদুল গফুর শোরো আরও বলেন, ‘পানি দুষিত হয়ে যাওয়ায় বন্যা কবলিত অধিকাংশ এলাকার চর্মরোগ ও ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে। অনেক জায়গায় বন্যার জমে থাকা পানি এখন পরিণত হয়েছে মশার প্রজননক্ষেত্রে; কিন্তু খোলা আকাশের নীচে থাকা বানভাসিদের না আছে আশ্রয়, না আছে মশারি।’

বন্যার্তদের আশ্রয়-খাদ্য ও সুপেয় পানির সমস্যা মেটাতে সরকারিভাবে দ্রুত কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হলে সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও বিপর্যয়কর হয়ে উঠবে বলে জানিয়েছেন এই চিকিৎসক নেতা।

উপমহাদেশের তিন দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশে বর্ষাকাল শুরু হয় জুন মাস থেকে। চলতি বছরের বর্ষাকালে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে খরা ও বাংলাদেশে বিগত বছরগুলোর তুলনায় কম বৃষ্টিপাত হলেও পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত জুলাই মাসেই বেলুচিস্তান ও খাইবার-পাখতুনওয়া প্রদেশের বেশ কিছু এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছিল।

তার মধ্যেই গত সপ্তাহের শেষ দিকে শুরু হওয়া টানা প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে পাকিস্তানের তিন প্রদেশ সিন্ধ, বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনওয়ার বিপুল এলাকায় নজিরবিহীন বন্যা দেখা শুরু হয়েছে।সরকারের দুর্যোাগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে পাকিস্তানের ৩ ভাগের এক ভাগ এলাকা বন্যার পানির নিচে আছে।

বন্যা উপদ্রুত বিভিন্ন এলাকায় যে চর্মরোগ ও ডায়রিয়া দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে— এ তথ্য স্বীকার করেছে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও। মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১ লাখ ৪৯ হাজার ৫৫১ জন এবং চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১ লাখ ৪২ হাজার ৭৩৯ জন।

এছাড়া মন্ত্রণালয়ের রেকর্ড অনুযায়ী, বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে জুলাই-সেপ্টেম্বরে শ্বাসতন্ত্রের গুরুতর রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৩২ হাজার ৪৮৫ জন, ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৯ হাজার ৪২০ জন, সাপের ছোবলের শিকার হয়েছেন ১০১ জন, কুকুরের কামড়ের শিকার হয়েছেন ৫০৫ জন এবং আরও ১ লাখ ৮৫ হাজার ২৭৪ জন ভুগছেন অন্যান্য অসুখে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ডনকে জানান, বেলুচিস্তান, সিন্ধ ও খাইবার পাখতুনওয়া— তিন প্রদেশের বন্যা উপদ্রুতদের জন্য পরিচালিত সরকারি বিভিন্ন চিকিৎসা শিবিরে প্রতিদিন অসংখ্য রোগী আসছেন।

‘কেবল সিন্ধ প্রদেশের চিকিৎসা শিবিরগুলোতেই প্রতিদিন ১৫ হাজারেরও বেশি চর্মরোগী, প্রায় ১৪ হাজার ডায়রিয়া রোগী ও ১৩ হাজারেরও বেশি রোগী শ্বাসতন্ত্রের সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসছেন,’ ডনকে জানান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা।

সিন্ধ প্রাদেশিক সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী আজরা পেচুহো ডনকে বলেন, ‘বন্যার কারণে সিন্ধুতে প্রতিদিনি লাখ লাখ মানুষ বিভিন্ন সংক্রামক রোগের শিকার হচ্ছেন।

spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

সর্বশেষ