গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। আজ সকাল ৮টা থেকে ৫৭টি ওয়ার্ডের ৪২৫টি ভোটকেন্দ্রে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। চলভোট শুরু হওয়ার আগে থেকেই নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। বিকাল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষে শুরু হবে গণনা। তারপর ফলাফল ঘোষণা করবেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
গাজিপুর সিটি নির্বাচনের মেয়র পদে লড়ছেন আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর আলম ও বিএনপির হাসান উদ্দিন সরকার। উভয়েই নিজেদের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
যদিও হাসান সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া নিয়ে প্রথম থেকেই নানা অভিযোগ দিয়ে আসছেন।
২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আবদুল মান্নান এক লাখ ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমতউল্লা খানকে পরাজিত করেন। সিটির ৫৭টি ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মধ্যে একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তাই ৫৭টির মধ্যে ৫৬টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ২৫৪ জন ও সংরক্ষিত ১৯ নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৮৪ জন এবং একটি মেয়র পদের জন্য সাতজন প্রার্থী এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। মোট ৩৪৫ জন প্রার্থী গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নির্বাচন কমিশন বলছে, সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৭ জন। এর মধ্যে ৫ লাখ ৭৯ হাজার ৯৩৫ জন পুরুষ এবং ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১ জন নারী ভোটার। এ নির্বাচনে নিরাপত্তার জন্য ২৯ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে প্রায় ১২ হাজার র্যাব, পুলিশ, আনসার সদস্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি জানান, নগরীর ৫৭টি ওয়ার্ডে পুলিশ ও আনসারের সমন্বয়ে ৫৭টি স্ট্রাইকিং ফোর্স ও সংরক্ষিত আসনে ২০টি স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। ইতিমধ্যে র্যাব মোতায়েন শুরু করেছে। ৫৭টি ওয়ার্ডে ৫৭টি এবং অতিরিক্ত একটিসহ মোট ৫৮টি টিম মোতায়েন থাকবে। প্রতি দুটি ওয়ার্ডে এক প্লাটুন করে মোট ২৯ প্লাটুন বিজিবি দায়িত্ব পালন করবে। এদের মধ্যে ১২ প্লাটুন জয়দেবপুর, বাসন চান্দনা চৌরাস্তা ও কাউলতিয়া এলাকায় দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়া ৭ প্লাটুন কোনাবাড়ী ও কাশিমপুর এলাকায়, ১০ প্লাটুন টঙ্গী এলাকায় থাকবেন। এ ছাড়া পুলিশ এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসার সমন্বয়ে ৫৭টি ওয়ার্ডে ৫৮টি মোবাইল ফোর্স, ২০টি স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োজিত থাকবে।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, নির্বাচনের আগে ও পরে চার দিন ৫৭টি ওয়ার্ডে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন। আরও ১০ জন অতিরিক্ত হিসেবে ৬৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন থাকবেন। সিটি করপোরেশনের প্রতি তিনটি ওয়ার্ডের জন্য একজন করে মোট ১৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন। তাঁরা ২৪ জুন থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত নগরীতে দায়িত্ব পালন করবেন।
এদিকে সকালেই বাসা থেকে বের হয়েছেন প্রার্থীরা। দিনভর কেন্দ্রে কেন্দ্রে ঘুরে ভোটের খবর নেবেন তারা। সকাল থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখা যায়। শহরের প্রবেশমুখগুলোতে দেখা গেল র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) একাধিক গাড়ি ও মোটরসাইকেল টহল দিচ্ছে। তারা শহর প্রদক্ষিণ করছে।
একনজরে গাজীপুর সিটি নির্বাচন ২০১৮
সময়: ভোট চলবে মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত
ভোটার: ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন ভোটারের মধ্যে পুরুষ ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ জন; ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১ জন নারী
পদ: একজন মেয়র, ৫৭ জন কাউন্সিলর এবং ১৯ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরকে নির্বাচিত করবেন ভোটাররা
কেন্দ্র ও ভোটকক্ষ: ৪২৫টি ভোট কেন্দ্রের ২৭৬১টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ হবে
ইভিএম: ছয়টি কেন্দ্রে (১৫৪, ১৫৫, ১৭৪, ১৭৫, ১৯১ ও ১৯২) ভোট হবে নতুন ইভিএমে।
প্রার্থী সংখ্যা:
মেয়র পদে ৭ জন
সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৮৪ জন
সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৫৬ জন (৪৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত)।
মেয়র পদে ছয় জন দলীয় প্রতীকে ও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্দলীয় প্রতীকে ভোট করছেন। সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে নির্দলীয় ভোট হচ্ছে।