জঙ্গল সলিমপুরের মানুষকে সরতে বাধা সন্ত্রাসীদের

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে জঙ্গল সলিমপুর ও আলীনগরের পাহাড় ছাড়তে কয়েক দফা তাগাদা দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। লাল পতাকা টাঙিয়ে হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে।

- Advertisement -

মাইকিং করে সতর্ক করা হয় তাদের। অনেকেই আলীনগর ছাড়লেও, বেশিভাগই পড়েছেন সন্ত্রাসীদের বাধার মুখে।

সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাতে জঙ্গল সলিমপুরের চেকপোস্টে দায়িত্বরত চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুকের সহায়তায় ১০টি পরিবারকে নিরাপদে অন্যত্রে পৌঁছে দেওয়া হয়। তারাও সন্ত্রাসীদের বাধার মুখে পড়েছিল।

বৃহস্পতিবার-শনিবার (৮-১০ সেপ্টেম্বর) জঙ্গল সলিমপুরের পাহাড়ে বসবাসরতদের অন্যত্র চলে যেতে সহযোগিতা করবে জেলা প্রশাসন। যদি কেউ অবৈধভাবে সেখানে বসবাস করে আগের চেয়েও বড় ধরনের উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।

জানা গেছে, দুর্গম জঙ্গল সলিমপুরের আলীনগর পাহাড়ে ৩ হাজার ১০০ একর খাস জায়গা অবৈধভাবে দখলে নিয়ে সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করেছে কয়েকটি গ্রুপ। এর মধ্যে বেশিরভাগ জায়গাই দখল করে রেখেছে আলীনগরের চিহ্নিত সন্ত্রাসী ইয়াছিন বাহিনী। দখল করা জায়গায় পাহাড় কেটে প্লট তৈরি করে তা শত শত মানুষের কাছে বিক্রির মাধ্যমে এই বাহিনী কোটি কোটি টাকা বাণিজ্য করেছে। ইয়াছিনকে জেলে থাকায় পলাতক রয়েছে তার বাহিনীও। যখন সরকারি নির্দেশনা মেনে জঙ্গল সলিমপুরের মানুষ অবৈধ বসতি ছাড়তে শুরু করে ঠিক তখনই হাজির ইয়াছিন বাহিনী। জঙ্গল সলিমপুর ছাড়তে বাধা দিচ্ছে তারা।

সলিমপরের পাহাড় রক্ষায় ইতোমধ্যে পরিদর্শন করেছেন সীতাকুণ্ডের সংসদ সদস্য, চট্টগ্রামের ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, এসপি, র‌্যাবের অধিনায়ক, উপজেলা চেয়ারম্যান ও সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি)সহ সরকার ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে ৭০০ একর জায়গা উদ্ধার করেছে। পাশাপাশি পাহাড়ের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নসহ নানা কার্যক্রম শুরু করে জেলা প্রশাসন। সলিমপুর ও আলীনগরের প্রবেশমুখে বসানো হয়েছে নিরাপত্তা চৌকি ও চেক পোস্ট। সেখানে অবৈধভাবে চলাচলরত অর্ধশত যানবাহনকে জরিমানা করা হয়। রাতদিন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সলিমপুরের প্রবেশপথে তল্লাশি চালাচ্ছেন।

সীতাকুণ্ড মডেল থানার ওসি মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, জঙ্গল সলিমপুরে বেশ কিছু ভূমিদস্যু চক্র সক্রিয়। সরকার আলীনগরের অবৈধ বাসিন্দাদের উচ্ছেদের কাজ শুরু করায় দীর্ঘদিনের রাজত্ব হাতছাড়া হয়ে যাবার আশঙ্কায় ইয়াছিন বাহিনী নানা কৌশল নিচ্ছে। আমরাও এসব বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখছি। নিয়মিত আমাদের পুলিশের কয়েকটি টিম অবস্থান করছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাজমুল আহসান বলেন, সরকার আলীনগরের পরিবেশ প্রতিবেশ অক্ষুণ্ন রেখে পরিবেশবান্ধব মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে সেখানে অভিযান পরিচালনা করে ২ শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ ও ৪ শতাধিক অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। তারপর আমরা অবৈধ বাসিন্দাদের এলাকা ত্যাগের নির্দেশ দিলে তারা চলে যাবার উদ্যোগ নেয়। অর্ধ শতাধিক বাসিন্দা বসতি গুটিয়ে নিয়ে এলাকা ত্যাগও করেন। কিন্তু এরপরই সক্রিয় হয়ে উঠে আলীনগরের চিহ্নিত ভূমিদস্যুরা। তাদের রাজত্ব ও দখল হাতছাড়া হলে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য বন্ধ হবার আশঙ্কায় তারা নানান কূটকৌশলের আশ্রয় নেয়। একাধিক বার মহাসড়ক অবরোধ করে তারা।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান  বলেন, আলীনগরের বাসিন্দারা দখল ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে আমাদের সহযোগিতা চেয়েছেন। আমরা ৮-১০ সেপ্টেম্বর তিন দিন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলে তাদের এলাকা ত্যাগে সহযোগিতা করব। এরপরও কেউ সেখানে থাকলে অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করা হবে।

সর্বশেষ