সরকারের অবৈধ কর্মকাণ্ড নিয়ে কেউ যেন কোনো কথা বলতে না পারে, সে জন্য এখন গুলি করে বিএনপি নেতাকর্মীদের অন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে শটগানের গুলিতে পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রোববার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘বিএনপির শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে দমন করতে আবারও নিষ্ঠুর খেলায় মেতেছে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারা চোখ অন্ধকারের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।’
বিএনপি নেতা অভিযোগ করেন, সভা-সমাবেশ করা রাজনৈতিক দলগুলোর সাংবিধানিক অধিকার। সে অধিকার কেড়ে নিয়েছে সরকার। সভা-সমাবেশ করতে গেলেই হামলা করে, গুলি চালিয়ে নেতাকর্মীদের হতাহত করা হচ্ছে।
রিজভী বলেন, ‘সরকার এখন হত্যার পাশাপাশি শটগানের গুলি চালিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের চোখ অন্ধ করে দিচ্ছে, পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে।’
২০২১ সালের ১৬ জুন চট্টগ্রাম থেকে ধরে নেয়া হয় সাইফুল ইসলাম সাইফু নামে এক যুবককে। পরে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা দিতে বলা হয়। টাকা দিতে না পারায় শটগান পায়ে ঠেকিয়ে গুলি করে পুলিশ। পরে কেটে ফেলতে হয়েছে সাইফুলের পা।
সাইফুল ছাত্রদল করতেন। তার বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা ছিল ধরে নেয়ার সময়। এখন আছে ২৪টি। তার বিরুদ্ধেও এলাকায় নানা অভিযোগ ছিল। কিন্তু সেগুলোর প্রমাণ এখনও হয়নি আদালতে। বিচার চলছে।
বিএনপি নেতা রিজভী বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন ভোলায় বিএনপির শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ গুলি চালিয়ে ছাত্রদল নেতা নুরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আব্দুর রহিম, নারায়ণগঞ্জে যুবদল কর্মী শাওন প্রধানকে হত্যা করেছে। একই সঙ্গে সেসব স্থানসহ নেত্রকোণা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, বরগুনা, বরিশাল, খুলনা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, ঝালকাঠিতে পুলিশ শটগানের গুলি দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীসহ ছাত্রদল, যুবদলের কর্মীদের শরীর ও চোখ-মুখ ঝাঁঝরা করে দিয়েছে।
‘বিভিন্ন হাসপাতালে তারা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। ইতোমধ্যে অনেকে চোখ হারিয়েছে, পা হারিয়েছে, হাত হারিয়েছে কিংবা অসংখ্য গুলি শরীরে নিয়ে হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে। গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার পর শটগানের গুলি দিয়ে নেতাকর্মীদের পঙ্গু করে দেয়ার আরেক নতুন নিষ্ঠুর নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে সরকার।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘পুলিশকে ব্যবহার করে এটি একটি নতুন নিপীড়নের পথ অবলম্বন করা হয়েছে। এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের আরেকটি নতুন ফর্মুলা। আমি এসব প্রতিহিংসামূলক নিষ্ঠুর ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে এ ধরনের মরণঘাতী কর্মসূচি থেকে সরে আসার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
সরকারদলীয় লোকজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং ইউটিউবে অ্যাকাউন্ট খুলে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে কুৎসা রটাচ্ছে। এ জন্য পাঁচ লাখ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টকে সরকার নিয়োগ দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী।
দেশে এখন সত্য কথা বললেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তোলেন বিএনপি নেতা রিজভী। বলেন, ‘সারা দেশে আবারও বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা ও গ্রেপ্তারের হিড়িক চলছে। এ অবস্থায় মানুষের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে সরাতেই বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নামে বিভিন্ন অপপ্রচারে মেতে উঠেছে সরকার।’
এ সময় বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদক, সহপ্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহিন, সহদপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।