রাজশাহীতে সাংবাদিককে মারধর,এক সপ্তাহেও নেই গ্রেপ্তার

রাজশাহীর বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) কার্যালয়ে লাইভ চলাকালে সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে এক সপ্তাহ হলো। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো আসামিই গ্রেপ্তার হয়নি।

- Advertisement -

এ ছাড়া ঘটনার পর বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানালেও এখন পর্যন্ত তাও হয়নি।

পুলিশ বলছে, ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। আর বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে এবং তারা এটি দেখছেন বলে জানিয়েছেন বিএমডিএ চেয়ারম্যান।

গত সোমবার সকালে বিএমডিএ কার্যালয়ে হামলার শিকার হন এটিএন নিউজের রাজশাহী প্রতিনিধি বুলবুল হাবিব ও ক্যামেরাপারসন রুবেল ইসলাম।

এ ঘটনায় বিএমডিএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রশীদকে ১ নম্বর আসামি করে সেদিন রাতে নগরীর রাজপাড়া থানায় মামলাটি করেন ভুক্তভোগী বুলবুল হাবিব।

আব্দুর রশীদ ছাড়াও আরও ছয়জনকে এজাহার নামীয় আসামি করা হয়। তারা হলেন ভান্ডার রক্ষক মো. জীবন, নির্বাহী পরিচালকের দপ্তরের পিয়ন সেলিম, নির্বাহী পরিচালকের পিএ নুরুল ইসলাম, আনসার সদস্য এনামূল, পিয়ন ফারুক এবং ড্রাইভার আব্দুস সবুর। অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৮-১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এজাহারে বলা হয়, সরকারের নতুন সময়সূচি অনুযায়ী কর্মকর্তারা সকাল ৮টায় অফিসে আসেন কি না, সে বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে সোমবার সকালে বিএমডিএ কার্যালয়ে যান তারা। সকাল ৮টা ২০ মিনিটের দিকে বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশীদ কার্যালয়ে ঢোকেন। এ সময় সেখানে সাংবাদিকদের দেখে ক্ষুব্ধ হন তিনি। বিনা অনুমতিতে কেন প্রবেশ করেছে এবং কেন ছবি তুলছে- এ নিয়ে চড়াও হন।

একপর্যায়ে তিনি কর্মচারীদের হুকুম দেন সাংবাদিকদের মেরে বিএমডিএ চত্বর থেকে বের করে দেয়ার জন্য। এর পরই তারা দুই সংবাদকর্মীকে এলোপাতাড়ি মারপিট করেন এবং ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন ভেঙে ফেলেন।

হামলাকারীরা সাংবাদিকদের মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে তাদের মারধর করে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

ঘটনার পর ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে জানিয়ে বিএমডিএর ভান্ডার রক্ষক মো. জীবন ও গাড়িচালক আব্দুস সবুরকে সাময়িক বরখাস্ত করে কর্তৃপক্ষ।

হামলার ঘটনায় সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে বিএমডিএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রশীদকে অপসারণের দাবি উঠলে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন বিএমডিএ চেয়ারম্যান আকতার জাহান।

কিন্তু বাস্তবে আব্দুর রশীদের বিষয়ে কোনো তদন্ত বা সিদ্ধান্তের উদ্যোগই নেয়নি বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ।

বিএমডিএ চেয়ারম্যান আকতার জাহান বলেন, ‘হামলার ঘটনাটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এটি খুবই অন্যায়। আমরা ওই দিনই অফিশিয়াল মিটিং করে দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছি।’

কিন্তু অভিযুক্ত সেই নির্বাহী পরিচালকের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে কি না, এ প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর দেননি তিনি। বলেন, ‘বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। তারা এটি দেখছেন।’

ঘটনার দিনই তদন্ত কমিটি গঠনের কথা বললেও এখনো কেন তা করা হয়নি, জানতে চাইলে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই কথা বললেন চেয়ারম্যান, ‘এটি এখন আর আমরা করছি না। মন্ত্রণালয়ে ঘটনাটা বলা হয়েছে, তারা দেখছেন।’

এদিকে বিএমডিএ ও পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে হতাশ স্থানীয় সাংবাদিকরা।

ভুক্তভোগী বুলবুল হাবিব বলেন, ‘লাইভ চলাকালে হামলা হলো, মামলা করলাম ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায়। অথচ এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তারই হলো না। এটি নিয়ে হতাশ রুবেল ইসলামও।’

আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে রোববার মানববন্ধন করেছেন সাংবাদিকরা। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জড়িতরা গ্রেপ্তার না হলে বিএমডিএ কার্যালয় ঘেরাওসহ কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তারা।

রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের (আরইউজে) সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আসামিদের কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আমরা অনতিবিলম্বে আসামিদের গ্রেপ্তারের জোর দাবি জানাচ্ছি। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তারা গ্রেপ্তার না হলে বিএমডিএ ঘেরাওসহ কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।’

সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হক বলেন, ‘দুই সাংবাদিকের ওপর যে ন্যক্কারজনক হামলা হয়েছে, তা তদন্তের কিছু নেই। ঘটনাটি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছিল। এর ফুটেজ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের কাছেও আছে।

‘এমন প্রমাণ থাকার পরও যদি এই দুর্নীতিবাজ নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশিদের বিরুদ্ধে আইনগত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয়, তাহলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। দ্রুত এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানাচ্ছি।’

রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার রফিকুল আলম বলেন, ‘পুলিশ ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছে। ঘটনার দিনের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বিভিন্ন জনের সাক্ষ্য নেয়া হচ্ছে। শিগগিরই দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যাবে।’

সর্বশেষ