মো.মুক্তার হোসেন বাবু: অপশক্তিরা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে নষ্ট করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন,শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গতকাল শনিবার সকালে চট্টগ্রাম মহানগরের বায়েজিদ থানাধীন আরেফিন নগরে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের স্থায়ী ক্যাম্পাসে দশম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক অপপ্রচার চলছে। বলা হচ্ছে, আমাদের নতুন বইয়ে ইসলাম ধর্মবিরোধী বিষয় আছে। এটি সত্য নয়। পাঠ্যবইয়ে কোথাও ধর্মবিরোধী কোনও বিষয় থাকার সুযোগ নেই। কারণ আমরা নৈতিকতার শিক্ষায় বিশ্বাস করি এবং ধর্মীয় শিক্ষা সেই নৈতিকতার মূল স্তম্ভ। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ইসলাম ধর্ম সংক্রান্ত সকল বিষয় সরিয়ে দিয়ে ভিন্নধর্মী জিনিসপত্র আনা হয়েছে, এটি একেবারে অসত্য। তিন বছর আগের ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি বইয়ের ছবি দিয়ে এই অপপ্রচার চালাচ্ছে, যে বইটি এখন সেখানেও চলে না। একটা অপশক্তি আছে যারা এ অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাদের আপনারা সবাই চিনেন। তারা মিথ্যাচার করে শুধু আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে নষ্ট করতে চায় না, দেশের স্থিতিশীল পরিবেশটাকেও নষ্ট করতে চায়। পাঠ্যবইয়ে ভুলের বিষয়ে তিনি বলেন, যারা বইয়ের ভুল শনাক্ত করেছেন তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। নবম-দশম শ্রেণির বইয়ে কিছু ভুল শনাক্ত হয়েছে। সে ভুলের মধ্যে একটি তো একেবারেই খুব বড় তথ্যগত ভুল- বঙ্গবন্ধুর শপথ গ্রহণ বিষয়ে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, ২০১৩ সাল থেকে প্রত্যেক বছরের বইয়ে এই ভুল ছিল। কখনও কারো চোখে পড়েনি। এ বছর শিক্ষার্থীরা বইগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে পড়েছে বলেই ভুলটি ধরা পড়েছে। ডা. দীপু মনি বলেন, করোনাকালীন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রেখেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। যারা এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে স্নাতক হয়েছেন তারা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে সফলতার স্বাক্ষর রাখবেন। আমাদের পোশাক শিল্পে যে নারী কর্মীরা আছেন তারা এখান থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে আজ সফল উদ্যোক্তা। তৈরি পোশাক শিল্পে তারা অবদান রাখছেন। এ বিশ্ববিদ্যালয় যে উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেটি আজ অনেকটাই সফল। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নারীরা সমাজকে বদলে দিতে-নেতৃত্ব দিতে কাজ করছে। কাগজ সংকটের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, গত বছর কাগজ শিল্প বিরাট একটা সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। কাগজের একটা বড় সংকট ছিল। ডলার পরিস্থিতির কারণে আমরা আমদানির দিকেও যেতে পারিনি। এর পরেও সকল শিল্পের সহযোগিতায় জানুয়ারির ১ তারিখ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৮০ শতাংশ বই পৌঁছে দিতে পেরেছি। বাকি বইগুলো এ মাসের মধ্যেই আমরা শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিবো। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ডেনমার্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লার্স রাসমুসেন বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে নারী শিক্ষা দারুণ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বিশেষ করে আফগানিস্তান, ইরাক, মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে নারীশিক্ষা বেশ কঠিন। তাদের জন্য এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন দারুণ সুযোগ তৈরি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি রুবানা হক বলেন, বিগত বছরগুলোতে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এর দারুণ অগ্রগতি হয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন এখনও চলমান। এখানকার শিক্ষার্থীরা বিশ্বের নানান দেশে সফলতার স্বাক্ষর রাখছেন। যেসব দেশ নারীশিক্ষায় পিছিয়ে রয়েছে এবং নারীদের শিক্ষা চ্যালেঞ্জের মুখে তাদেরকে এইউডব্লিউতে স্বাগত জানাচ্ছি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক ব্রিটিশ ফার্স্ট লেডি চেরি ব্লেয়ার, সমাবর্তন বক্তা ছিলেন নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ইমেরিটাস জন সেক্সটন। তিন বছর পর হলেও সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হওয়ায় উচ্ছসিত ছিলেন শিক্ষার্থীরা। সমাবর্তনে ৬ জনকে এনডি মাতসুই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৮ দেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। করোনার কারণে বিগত তিন বছর সমাবর্তন হয়নি। এবার ২০২০, ২০২১, ২০২২ শিক্ষাবর্ষের ৩০০ স্নাতককে সনদ প্রদান হয়। এরপর গতকাল শনিবার বিকেলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ‘চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (সিবিইউএফটি)’ নামের বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, আমরা চাই প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে অবশ্যই ভাষা, আইটি, উদ্যোক্তা হওয়া শেখাতেই হবে। স্পেশাল কোর্স দিতে হবে। সেগুলোর চর্চা করতে হবে ছাত্রাবস্থায়। তারা চাকরিদাতাকে বলবে না সুযোগ দেন। দক্ষ জনশক্তি হয়ে বের হবে তারা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু কন্যা, দেশরত্ন শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তিনি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় গড়া শুরু করেছিলেন বলেই আমাদের ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনলোজি বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ করবেন বলেছিলেন, করেছেন। বাবার মতো সব কথা রাখেন। তিনি বলেছেন স্মার্ট বাংলাদেশ করবেন। আমরা যেন সেই স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট নাগরিক তৈরি করতে পারি। যারা হবে সৎ, দক্ষ, সহমর্মী, পরমতসহিষ্ণু,অসা¤প্রদায়িক। যারা যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সাহস নিয়ে এগিয়ে যাবে এবং প্রোঅ্যাকটিভ হবে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামে চারুকলা ইনস্টিটিউটে অচলাবস্থা চলছিল। সেটি নিরসনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী, প্রশাসন, রাজনীতিবিদ সবাইকে নিয়ে আমরা আলোচনায় বসেছিলাম। শিক্ষার্থীদের কথা মন দিয়ে শুনেছি। তাদের যৌক্তিক দাবি পূরণে আলোচনা করেছি। সব শেষে ইনস্টিটিউটে সশরীরে গিয়ে খুলে দিয়ে এসেছি। টাইগারপাসের নেভি কনভেনশন হলে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ, পরিচালক মো. ওমর ফারুক, এফবিসিসিআইর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। গেস্ট অব অনার ছিলেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান। সভাপতিত্ব করেন সিবিইউএফটি ট্রাস্টি বোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন চৌধুরী। জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন আবু বকর। নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমাদের পোশাক শিল্প প্রতিযোগিতা করছে উন্নত দেশের সঙ্গে। উন্নত প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। এ স্বপ্নযাত্রা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চাহিদা পূরণে। সূত্র জানায়, আগামী মার্চে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে। চারটি বিভাগে ৩৫ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন দিয়েছে ইউজিসি। প্রথম সেমিস্টারে মোট ১৪০ জন উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবেন। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাস গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমাদের। ২০০২ সালের ২৭ অক্টোবর বিজিএমইএ ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (বিআইএফটি) নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে ডিপ্লোমা কোর্স চালু করে। ২০ বছরে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী ডিপ্লোমা এবং অ্যাপারেল মার্সেন্ডাইজিংয়ে সার্টিফিকেট কোর্স করে দেশে ও বিদেশে পোশাক শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।